পাকিস্তান : সবার চোখ সুপ্রিম কোর্টে

পাকিস্তানে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে সবাই এখন তাকিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দিকে। অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব খারিজ এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া নিয়ে গতকাল বুধবার টানা চতুর্থ দিনের শুনানি হলেও রায় ঘোষণা করতে পারেননি দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আদালত মুলতবি করা হয়েছে।

এর মধ্যেই সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ এবং পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিঠি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।

গতকাল শুনানি শুরু হলে প্রধান বিচারপতি ওমর আতা বান্দিয়াল বলেন, সবার আগে আদালত অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরির সিদ্ধান্তের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে চান। তবে গতকালও শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায় আসেনি।

ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) পক্ষে আইনজীবী বাবর আওয়ান এবং প্রেসিডেন্ট আলভির পক্ষে আইনজীবী আলী জাফর গতকাল আদালতে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন।

শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল বলেন, কিসের ওপর ভিত্তি করে ডেপুটি স্পিকার অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন? তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন না করে স্পিকার কি এটা করতে পারেন? এটাই হলো সাংবিধানিক পয়েন্ট। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত।

বাবর আওয়ান আদালতকে বলেন, ‘অকাট্য’ প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে ডেপুটি স্পিকার অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন।

তখন প্রধান বিচারপতি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের (এনএসসি) বৈঠকের নথি চান বাবর আওয়ানের কাছে। একই সঙ্গে কোন অধিকারবলে ডেপুটি স্পিকার ওই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তা-ও জানতে চান।

প্রেসিডেন্ট আলভির আইনজীবী আলী জাফর শুনানিতে দাবি করেন, পার্লামেন্টে দেওয়া স্পিকারের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করার এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের নেই। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বিরোধী দলগুলো এ বিষয়টি নিয়ে আদালতে এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে তোলা বিরোধী দলগুলোর অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব গত রবিবার খারিজ করে দেন ডেপুটি স্পিকার। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভেঙে দেন পার্লামেন্ট। এই সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে আদালতে যায় বিরোধী দলগুলো। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি ওমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি চলছে।

ইসিপিকে প্রেসিডেন্টের চিঠি : পার্লামেন্ট নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত করতে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনকে (ইসিপি) চিঠি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আলভি। প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর আগে খবর প্রকাশিত হয় যে নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করতে পারবে না। তবে গতকাল ইসিপির একজন মুখপাত্র বলেন, যথাসময়ে নির্বাচন আয়োজন করতে তাঁরা প্রস্তুত।

গুলজারকে মানবেন না শাহবাজ : বিদায়ি পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধী দল পিএমএলের (এন) নেতা শাহবাজ শরিফ বলেছেন, তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদকে মানবেন না। এই বিষয়ে গতকাল নিজের অবস্থান তুলে ধরে প্রেসিডেন্ট বরাবর চিঠি দিয়েছেন শাহবাজ।

প্রেসিডেন্টের দপ্তরের চিঠি পেয়ে গুলজারের নাম প্রস্তাব করেন ইমরান খান। সংবিধান মতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান ও বিরোধী দলের নেতা হিসেবে শাহবাজের মতৈক্যে প্রস্তাবিত ব্যক্তি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন। এই দুজন একমত হতে না পারলে বিষয়টি যাবে স্পিকারের কাছে।

জনগণকে মাঠে নামার আহ্বান : দেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশবাসীকে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সূত্র : জিও নিউজ, ডন, এএফপি, এআরওয়াই নিউজ।

LEAVE A REPLY