এনামুল ঝলকে ফের হারের বৃত্তে মোহামেডান

ঢাকা ডিভিশন ক্রিকেট প্রিমিয়ার লিগে শনিবার মোহামেডন স্পোর্টিংয় ক্লাবের বিপক্ষে ৫ উইকেটের নিয়ে বল হাতে ম্যাচসেরা এনামুল হক জুনিয়র নাসুম আহমেদের বাহ্বা নিচ্ছেন।

ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে (ডিপিএল) মোহামেডান যেন হারের বৃত্ত ভেঙে ঠিকভাবে বেড়িয়ে আসতেই পারছে না। তারকাবহুল এই দলের তারকদের দুএকজন বাদে বাকিরা জাতীয় দলের কিংবা ব্যক্তিগত কারণে ডিপিএলে নেই। শনিবার মিরপুরে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ৭ উইকেটে হেরেছে ক্লাবটি। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নিয়েছেন এনামুল হক জুনিয়র। মূলত তার বোলিং তোপেই ১৪৩ রানে অলআউট হয় মোহামেডান। পয়েন্ট টেবিলের ৯ নম্বরে থেকে শঙ্কা দেখা দিয়েছে সুপার লিগে অংশ নেয়া নিয়ে। তবে শনিবারের ম্যাচে জয়-পরাজয় ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের আচরণ। ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে রাগে ফুঁসতে থাকা মাহমুদউল্লাহ মাঠেই এক কর্মীকে কিছু বলতেও দেখা গেছে- এমনকি ড্রেসিংরুমে ঢোকার আগে দরজায় সজোরে লাথি মারেন।

৩৫ বছর বয়সি এনামুল হক জুনিয়র তার লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে উইকেট পেয়েছেন দেড়শোর বেশি। কিন্তু এই সংস্করণে একটি অর্জন এতদিন অধরা ছিল। ছয়বার চার উইকেট পেলেও কখনোই দেখা পাননি পাঁচ উইকেটের। আগের সেরা ছিল ২৬ রানে ৪ উইকেট। অবশেষে ৫ উইকেট পেয়ে সেই অপূর্ণতা ঘোঁচালেন এই বাঁ-হাতি অফস্পিনার। ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট শিকার করে ধ্বসিয়ে দিয়েছেন মোহামেডানের ব্যাটিং লাইনআপ। ৯.১ ওভার বল করে ২ ওভার মেডেন দিয়ে ৪১ রানে ৫ উইকেট নেন এনামুল হক জুনিয়র।

মিরপুরের উইকেট নিয়ে এর আগেও সমালোচনা হয়েছে। তবে শনিবার মাহমুদউল্লাহর ক্ষোভে অসমান বাউন্সের উইকেট আরো একবার সমালোচনার জন্ম দিল। দলটির পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৮ রান করেছেন তারকা ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ঘটনাটি এনামুল জুনিয়রের করা ৩৭তম ওভারের প্রথম বলে স্কয়ার কাট করতে চেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু বল বেশ খানিকটা নিচু হয়ে তার ব্যাটের নিচের কোণায় লেগে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক জাকির হাসানের গ্লাভসে। আউট হওয়ার আগে ৫২ বলে দুটি করে চার-ছয়ের মারে ৪৮ রান করেন তিনি। আউট হয়ে ফেরার সময় তার আচরণের সঙ্গে চোখে-মুখে রাগের আভা স্পষ্ট দেখা যায়। মূলত উইকেটের অসম বাউন্সের কারণেই মেজাজ হারান জাতীয় দলের এই তারকা খেলোয়াড়। তবে মাহমুদউল্লাহর এমন অপেশাদার আচরণের পর ম্যাচ শেষে কোনো অভিযোগ পাননি রেফারি শওকাতুর রহমান।

মিরপুরে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ৩৮.১ ওভারে মাত্র ১৪৩ রানে অলআউট হয়ে যায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। মিরপুরের উইকেটে এদিন মিলেছে অসমান বাউন্সের কারণে স্পিনাররা পেয়েছেন টার্ন। তবে প্রথম দিকে মোহামেডান তাদের নিজেদের রানের গতিটা ঠিক রেখেই এগিয়ে যাচ্ছিল। দুই ওপেনার মিলে শুরুর এগারো ওভার পার করে দেন। দ্বাদশ ওভারে পারভেজ হোসেনকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে ২৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন শরিফউল্লাহ। আরেক ওপেনার রনি তালুকদার ২৪ রানে ফেরেন মুকিদুল ইসলামের বলে মিড অফে সহজ ক্যাচ দিয়ে। এরপর শুরু হয় এনামুলের স্পিন জাদু। তার প্রথম শিকার মোহাম্মদ হাফিজ। ৪ রান করে বোল্ড হন এই পাকিস্তানি অলরাউন্ডার। এরপর রুবেল মিয়াকে নিয়ে কিছুক্ষণ দলকে টানেন মাহমুদউল্লাহ। রুবেল ২৩ রান করে বোল্ড হয়ে ফেরেন নাসুম আহমেদের বলে। সমস্যটা বাধে শতরান পার হওয়ার পর। ১০২ রানে ছিল ৩ উইকেট। এরপর শেষ ৪১ রানেই হারিয়ে বসে ৭ উইকেট। দুই অঙ্কের ঘর ছুঁতে পেরেছেন যারা তাদের মধ্যে ৩০ পার করেছেন মাত্র একজন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৫২ বলে ২ চার ও ২ ছয়ে সর্বোচ্চ ৪৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন। এনামুলের ৫ উইকেটের পাশাপাশি ২৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন পেসার মুকিদুল ইসলাম।

১৪৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই মিজানুর রহমানকে হারায় রূপগঞ্জ টাইগার্স। মাত্র ৯ রান করে ইয়াসিন আরাফাতের শিকার হন এই ওপেনার। এরপর আরেক ওপেনার জাকির হাসান ২৪ রান করে ফিরে যান হাফিজের অফ স্পিনে ক্যাচ দিয়ে। এরপর আর সমস্যায় পড়তে হয়নি দলকে। ৪৬ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে তৃতীয় উইকেটে ১৩৯ বলে ৪৮ রানের জুটি গড়ে এগিয়ে নেন আসিফ আহমেদ ও ফজলে মাহমুদ। রূপগঞ্জের হয়ে এক ছক্কা ও ৫ বাউন্ডারিতে ৯২ বলে ৪৮ রান করেন আসিফ। এরপর সাদি নাসিমকে সঙ্গে নিয়ে ৩৯ রানে অপরাজিত থেকে খেলা শেষ করে আসেন ফজলে মাহমুদ। পারভেজকে ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করা নাসিম মাঠ ছাড়েন ৮ বলে ১৬ রান করে। ঐতিহ্যবাহী দল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ১৪৩ রান তারা পেরিয়ে গেছে ৮২ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটেই।ম্যাচসেরা হয়েছেন এনামুল হক জুনিয়র।

লিগে এই নিয়ে টানা চার ম্যাচ হারল মোহামেডান। ৮ ম্যাচে ৩টি জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তারা টেবিলের ৯ নাম্বারে। অন্যদিকে টানা দুই ম্যাচে হারের পর আবার জয় পেয়ে ৭ ম্যাচে ৪টি জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে ৬ নাম্বারে রূপগঞ্জ টাইগার্স।

অন্যদিকে সাভারে বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে তিন উইকেটে হারিয়েছে সিটি ক্লাব। টসে হেরে ব্যাট করতে নামা ব্রাদার্স ইউনিয়ন ধীমান ঘোষের ৫১ ও সোহাগ গাজীর ৪৮ রানের সুবাদে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৭০ রান করে। সিটি ক্লাবের হয়ে উসমান খালিদ ও শাহিন আলম সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট পেয়েছেন। ২৭১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে জাওয়াদ রোয়েনের ৭৯ ও তৌফিক খানের ৩৩ রানের সুবাদে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৭২ রান করে সিটি ক্লাব। ব্রাদার্সের হয়ে সোহাগ গাজী ও মানিক খান। ম্যাচসেরা হয়েছেন জাওয়াদ রোয়েন।

সাভারে আরেক ম্যাচে বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে ৯ রানে হারিয়েছে লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ইরফান শুক্কুরের ৬৪ এবং নাঈম ইসলামের ৩২ রানে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২১৫ রান করে লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ। শাইনপুকুরের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন রিপন মণ্ডল। ২১৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ ওভারে ২০৬ রানেই গুটিয়ে যায় শাইনপুকুর। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেন রাকিন আহমেদ। রূপগঞ্জের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন মেহেদি হাসান রানা। ম্যাচসেরা হয়েছেন নাঈম ইসলাম।এসএইচ

LEAVE A REPLY