ডারবানের বন্যার পেছনে দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন?

দক্ষিণ আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কাওয়াজুলু নাটাল প্রদেশে ব্যাপক বন্যায় শত শত বাড়িঘর ভেসে গেছে। ঘটেছে ভূমিধস। এসব দুর্যোগে কয়েক শ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।  

সরকার জলবায়ু পরিবর্তনকে ঢালাওভাবে বন্যার কারণ হিসেবে দাঁড় করাতে চাইলেও স্থানীয় লোকজন সেখানকার অবকাঠামোগত ত্রুটিকে বন্যার ভয়াবহতার জন্য দায়ী করেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার গত সপ্তাহে সৃষ্ট প্রবল বন্যায় পূর্বাঞ্চলের ওই এলাকায় দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা ঘোষণা করেছে। শনিবার পর্যন্ত ৪০০ মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার কারণে বেশিরভাগ ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে দেশের তৃতীয় জনবহুল কাওয়াজুলু প্রদেশের ডারবান শহরে।  

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এই দুর্যোগকে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের অংশ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে ডারবানের এই বন্যায় জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি অবকাঠামোগত পরিস্থিতির দায় কতটা, সেটা নিয়ে দেশটিতে আলোচনা চলছে।

গত সোমবার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে এই বন্যা দেখা দেয়। দেশটিতে ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল ১৬৫ মিলিমিটার এবং ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর মাত্র ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। গত সোমবার যে পরিমাণ বৃষ্টি হয় তা দক্ষিণ আফ্রিকার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের ৭৫ শতাংশের সমান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু এই কারণই ব্যাপক বন্যার জন্য দায়ী।  

দক্ষিণ আফ্রিকায় ঝড় সম্পর্কে চলতি বছরের গোড়ার দিকে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে এই অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাত বেশ সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বৃষ্টিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কতটা তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়নি। কারণ বৃষ্টিপাতসংক্রান্ত অতীতের তথ্য-উপাত্ত অনুপস্থিত।   

বাসিন্দারা ডারবানের ভঙ্গুর অবকাঠামোকে দায়ী করে বলে, নিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নতির অভাবের পাশাপাশি রাস্তা ও আবাসন নির্মাণের ত্রুটির কারণে বন্যার ভয়াবহতা বেড়ে গেছে।

ডারবানের মেয়র ম্যাক্সোলিসি কাউন্ডা বলেন, শক্ত ভিত্তি ছাড়াই খাড়া পাহাড়ে কিছু বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির অন্যতম কারণ হচ্ছে ওই সব এলাকার ভূমিধস।   

দক্ষিণ আফ্রিকায় নব্বইয়ের দশকে বর্ণবাদের আনুষ্ঠানিক বিদায়ের পর ডারবানে জনসংখ্যা বেড়েছে। এর আগে সেখানে শুধু শ্বেতাঙ্গরা বসবাস করত। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে শহরের জনসংখ্যা বেড়েছে ২.৩ শতাংশ। এক পর্যায়ে জনসংখ্যা বাড়ার হার কমলেও শহরের পরিসর বাড়তে থাকে। এই বাড়তি চাপ শহরের বিদ্যমান অবকাঠামোগত ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে দিচ্ছে না।  

কেপটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জিনা জিয়ারভোগেল বলেন, কর্তৃপক্ষ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই কাজের জন্য আরো সম্পদ প্রয়োজন। সূত্র: বিবিসি

LEAVE A REPLY