শিশুবান্ধব সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান

যৌন নির্যাতনের হাত থেকে শিশুদের রক্ষায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে যৌথভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্বরাপ করেছেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। তারা সার্ক প্রণীত শিশুবান্ধব সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ রবিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সার্ক শিশু সুরক্ষা প্রটোকলের আওতায় অভিন্ন শিশু সুরক্ষা কাঠামোর অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় এ আহ্বান জানানো হয়। ইনসিডিন-বাংলাদেশ আয়োজিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন টিডিএইচ নেদারল্যান্ডস-বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাহমুদুল কবির।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন ইনসিডিনি-বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী। আলোচনায় অংশ নেন এটিএসইসি সাউথ এশিয়ার চেয়ারম্যান মানবেন্দ্র নাথ মণ্ডল, ভারত ও নেপালের দায়িত্বপ্রাপ্ত টিডিএইচ নেদারল্যান্ডস প্রতিনিধি থানগাপেরুমাল পনপানদি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শিবনাথ রায়, সাবেক উপ-সচিব ড. আবুল হোসেন, রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, অ্যাডভোকেট সালমা আলী প্রমুখ।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাছিমা বেগম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে শিশুদের জন্য আইন করেছেন। বর্তমান সরকারও শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে সক্রিয় রয়েছে। তারপরও শিশুরা নির্যাতন ও পাচারের শিকার হচ্ছে। এক শ্রেণির অসাধু মানুষের অসৎ আকাঙ্ক্ষার কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তাই নারী ও শিশু পাচার বন্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সরকারকে এ ধরনের আন্তঃদেশীয় সংলাপগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিশু অধিকার নিশ্চিত না হলে মানবাধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে মানবাধিকার কমিশন বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

অতিরিক্ত সচিব শিবনাথ রায় বলেন, শিশু শ্রম, শিশু পাচার ও শিশুর ওপর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন করে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনের দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও বিচারের দীর্ঘ সূত্রিতা নিয়ে হতাশা রয়েছে। সেই হতাশা কাটিয়ে উঠে পাশ্ববর্তী দেশগুলোর সহায়তায় আইন ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যথাযথ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত শিশু ও কিশোর-কিশোরী সুরক্ষা কাঠামো গঠন এবং তা বাস্তবায়নে এক যোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কাজের সুযোগ কমছে বলে উল্লেখ করেন ভারতের অধিকারকর্মী মানবেন্দ্র নাথ মণ্ডল। তিনি বলেন, এই সুযোগ পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সমন্বিত কার্যক্রম পরিচলনা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, করোনাকালে প্রায় আটশ’ কন্যা শিশুকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। ভারতে ৫৪১টি বেসরকারি সংস্থা এই কাজ করছে। একই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য দেশের সংস্থাগুলোর মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ মানবপাচার দমন ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের শিশু শ্রম নিরসন জাতীয় কর্মপরিকল্পনার আলোকে শিশুর ওপর যৌন নির্যাতনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন এ কে এম মাসুদ আলী। মূল বক্তব্যে তিনি বলেন, নারী ও শিশু পাচার নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কাজের সাধারণ একটি ধারা রয়েছে। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে কাজের জন্য সমঝোতা স্মারক রয়েছে। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কাজের সুযোগ কম। রাজ্য সরকারের সঙ্গে কাজ করতে হয়। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে সার্কের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেই। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে সার্কভূক্ত দেশগুলোতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। পাচারের শিকার শিশুদের উদ্ধার থেকে পূনর্বাসন পর্যন্ত কার কি কাজ তা চিহ্নিত করতে হবে। অনলাইনের ফাঁদে পড়ে শিশুরা যাতে যৌন নির্যাতনের শিকার না হয়, সে বিষয়ে প্রতিরোধে ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।

LEAVE A REPLY