ভোজ্যতেল ও চিনির বাজার অস্থির

রোজা শেষ হয়ে এলেও চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ে ভোজ্যতেল ও চিনির বাজারে অস্থিরতা কমেনি।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট না থাকলেও দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে সিন্ডিকেটের কারসাজি আছে বলে মনে করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

এদিকে খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে লিটারপ্রতি ১৮২ টাকা দরে। যা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রায় ২২ টাকা বেশি। ভোজ্যতেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চিনির দামও। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা।

উপজেলাগুলোতে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৮২ টাকার বেশি। সরকার নির্ধারিত দাম ১৬০ টাকা হলেও এ দামে কোথাও ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে না। এদিকে শুল্ক কমানোর পর বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও চিনির দামে কোনো প্রভাব নেই। সরবরাহ বাড়ায় পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে।

নগরীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরকার নির্ধারিত দামে চট্টগ্রামের কোথাও ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দামে বিক্রি করছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় এই ভোগ্যপণ্যটি। খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮২ টাকা দরে। পাইকারি বাজারে লিটারপ্রতি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা। খুচরা বাজারে পামঅয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৬২ টাকা। আর পাইকারি বাজারে পামঅয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকা। খুচরা পর্যায়ে ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা বা এর চেয়ে বেশি। পাইকারি বাজারে ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৭৬৫ থেকে ৭৭০ টাকা দরে।

১৭ মার্চ খুচরা বাজারে এক লিটারের প্রতি বোতল সয়াবিন তেলের দাম ১৬০ টাকা ও খোলা তেল প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। খুচরা পর্যায়ে পাঁচ লিটার তেলের বোতলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৭৬০ টাকা। নগরীর পাইকারি বাজারগুলোতে বুধবার নির্ধারিত দরের চেয়ে অনেক বেশি দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হতে দেখা গেছে। নগরীর চকবাজার, কাজীর দেউড়ি, বহদ্দারহাট ছোট-বড় সব দোকানে নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি হচ্ছে। মূল্য তালিকায়ও ভোজ্যতেলের দাম লিখছেন না অনেক ব্যবসায়ী। তারা ইচ্ছেমতো দাম আদায় করছেন ক্রেতার কাছ থেকে।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, চাহিদার তুলনায় সয়াবিন ও পাম অয়েলের সরবরাহ কম থাকায় দেশের বাজারে প্রায় ৪ মাস ধরে ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তবে গত রমজানের আগেও প্রতি লিটার সয়াবিন ৮৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এক বছর পর এসে এ রমজানে ৮৮ টাকার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮২ টাকা। যা অস্বাভাবিক। খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেলের আড়তদার মহিউদ্দিন বলেন, ‘হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। ফলে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারেও এর দাম বেড়েছে। এর প্রভাবে খুচরা বাজারও গরম। হয়তো বাড়তি দাম বেশি দিন থাকবে না। দাম আবার কমে যেতে পারে।’

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরকার ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন মিলগেটে ১০৭ টাকা, পরিবেশক ১১০ টাকা ও খুচরায় ১১৫ টাকা সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা হয়। বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১২৩ টাকা, পরিবেশক ১২৭ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে ১৩৫ টাকা এবং ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন মিলগেটে ৫৮৫ টাকা, পরিবেশক ৬০৫ টাকা ও খুচরা ৬৩০ টাকা সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। খোলা পাম সুপার প্রতি লিটার মিলগেট ৯৫ টাকা, পরিবেশক ৯৮ টাকা ও খুচরা বাজারে ১০৪ টাকা সর্বোচ্চ দর নির্ধারণ হয়। এক বছরের ব্যবধানে এই পণ্যটির দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।

ভোজ্যতেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চিনির দামও বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে চিনি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল ৭২ থেকে ৭৪ টাকা। পাইকারিতে প্রতি বস্তা চিনি (৫০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৭৩০ টাকা; এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৩ হাজার ৬৪০ টাকা।

খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেলের আড়তদার কামরুল হাসান রাজু বলেন, ‘বাজারে ভোজ্যতেলের কোনো সংকট নেই। তবু কেন দাম বাড়ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।’ তেল-চিনির বাজারে অস্বস্তি থাকলেও পেঁয়াজের বাজার কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে ভোক্তাদের। খাতুনগঞ্জে বুধবার মিয়ানমার ও ভারতীয় পেঁয়াজ মান ভেদে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা কয়েক মাস আগে ৬০-৭০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছিল।

LEAVE A REPLY