নাহিদ-মুরসালিনের পরিবারের কী হবে

মাত্র ছয় মাস আগে প্রেমের পর নাহিদ ডালিয়ার বিয়ে হয়। হাতের মেহেদি এখনো পুরোপুরি মুছে যায়নি। কয়েকদিন আগে হাতে মেহেদি দিয়ে ডালিয়া নাহিদের প্রতি তার ভালোবাসা আবারো প্রকাশ করেছিল। ডালিয়ার হাতের মেহেদি মুছে না গেলেও তার জীবন থেকে নাহিদ নামের প্রিয় মানুষটি চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে। নাহিদের অকাল মৃত্যুতে পুরো পরিবারটি এখন দিশাহারা। এদিকে একই ঘটনায় নিহত মুরসালিনের পরিবারও দিশাহারা হয়ে পড়েছে। তার স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে কোথায় দাঁড়াবে? তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। মুরসালিনকে খুনের বিচারই বা করবে কে? মুরসালিনের ভাই বলেন, ‘কে করবে বিচার, এই দেশে কোনো বিচার নেই।’

গত মঙ্গলবার দুপুরে নিউমার্কেটে ব্যবসায়ী-ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের নির্মমতার শিকার হন নাহিদ। আহত অবস্থায় হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরজুড়ে শুধুই ক্ষত চিহ্ন। এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান মার্কেটে ‘ডি লিংক’ নামে একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন নাহিদ।

মাত্র ৬ মাস আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন ডালিয়াকে। ডালিয়ার হাতের মেহেদি মুছে না গেলেও তার জীবন থেকে নাহিদ নামের প্রিয় মানুষটি চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে। নাহিদ এখন ডালিয়ার জীবনে শুধুই স্মৃতি। বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই ভাইয়ের সংসারের হাল ধরেছিলেন নাহিদ। সংসার চালাতে বেছে নিয়েছিল কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারিম্যানের কাজ। পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে এই পরিবারের সবাই এখন দিশাহারা।

ডালিয়ার কান্না কিছুতেই থামছে না। স্বামীর স্মৃতি বার বার স্মরণ করে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। ডালিয়া বলেন, আমি কিছুটা অসুস্থ ছিলাম। তাই কাজে যেতে মানা করেছিলাম। কিন্তু সে বলে, করোনায় কাজ বন্ধ ছিল। এই রোজার মাসে আর কাজ বন্ধ রাখা যাবে না। বস ফোন দিয়েছে। কাজে যেতে হবে, মার্কেটিং করতে হবে। এই বলে সে সকাল ১০টায় বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এটাই ছিল আমার সঙ্গে শেষ কথা। ভালো একটা মানুষ বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে এলো না। আহাজারির পর ডলি বলেন, ‘আমি এ ঘটনার বিচার চাই, ক্ষতিপূরণ চাই।’ নাহিদের বাবা নাদিম হোসেন জানান, নাহিদের মৃত্যর ঘটনায় মামলা করবেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা অসহায় মানুষ। আমার ছেলে একটা ঘটনায় মারা গেছে। আমি চাই দোষীদের বিচার হোক। কিন্তু আমি মামলা করুম না।

এদিকে নিহত মুরসালিনের পরিবারেরও একই অবস্থা। দুই সন্তান নিয়ে মুরসালিনের স্ত্রী সব ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। কোনো কথাই বলতে পারছিলেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুরসালিন মারা যান। লাশ পাঠানো হয় মর্গে। মর্গের বাইরে সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলেন স্বজন ও পরিচিতজনরা। দুপুর ১টার দিকে মর্গে গিয়ে মুরসালিনের বড় ভাই নূর মোহাম্মদকে ক্লান্ত-শ্রান্ত অবস্থায় দেখা গেল। মুরসালিনের ভাই নূর মোহাম্মদ সংবাদকর্মীদের কথার জবাব দিচ্ছিলেন। মামলা করবেন কিনা? জানতে চাইলে বললেন ‘এই দেশে কোনো বিচার নেই। কে করবে বিচার’? কার নামে মামলা করব? ভাইটা কীভাবে মারা গেল, কিছুই জানলাম না। এটা কেবল ও আর আল্লাহ জানেন। ওর শরীরে আঘাত আর ক্ষতের বাইরে আমরা আর কিছুই দেখিনি।’ এরপর খানিকটা দূরে গিয়ে তিনি কিছুক্ষণ অঝোরে কাঁদলেন।

মুরসালিন নিউ সুপার মার্কেটের একটি রেডিমেড কাপড়ের দোকানের বিক্রয়কর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। দুপুর দেড়টার দিকে মুরসালিনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিয়ে যাওয়া হয় কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম রসুলপুরের ভাড়া বাসায়। জানাজা শেষে মুরসালিনকে আজিমপুরে দাফন করার কথা রয়েছে। মুরসালিনের দুটি সন্তান রয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সে আলাদা বাসায় থাকত। এখন শিশু সন্তান দুটির ভবিষ্যৎ এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।এসএইচ

LEAVE A REPLY