শৃঙ্খলায় ব্যত্যয় ঘটিয়ে শাস্তির মুখে ৯০৯ পুলিশ

বাংলাদেশ পুলিশ। প্রতীকী ছবি

থানায় যাওয়া লোকজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ভোগান্তি, হয়রানি এবং হাজতে নিরীহ লোকজনকে আটকে উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ ঠেকাতে সিসিটিভি স্থাপন করে সুফল পেয়েছে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জ। মনিটরিংয়ের কারণে হাজতখানায় আটককৃতদের বিনা কারণে যেমন ঢোকানো যাবে না তেমনিভাবে ঢুকালে বের করা যাবে না। এসবের ব্যতয় হওয়ায় ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর থেকে গত ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ৯০৯ জন পুলিশ সদস্যকে বিভিন্নভাবে শাস্তি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় তাদের কার্যক্রম এখন অনেক ইউনিটের কাছে অনুকরনীয় বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন) জিহাদুল কবির ভোরের কাগজকে জানান, থানায় সিসিটিভি স্থাপনের ফলে শৃঙ্খলা যথাযথভাবে পালন হচ্ছে। ডিউটি অফিসার ও সেন্ট্রির দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন, হাজতখানার পরিচ্ছন্নতা এবং সাার্বিক বিষয় নজরদারির মধ্যে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, রেঞ্জের অধীন ১৩ জেলার ৯৬ থানা হাজতে কখন কতোজন লোক ঢোকানো ও বের করা হচ্ছে তার সবই রেঞ্জ অফিস থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। কোনো কারণে কাউকে হাজত থেকে বের করা হলে বা ছেড়ে দেয়া হলে এর কারণ জানতে ওই জেলার পুলিশ সুপারকে রেঞ্জ অফিস থেকে চিঠি ইস্যু করা হয়। পুলিশ সুপার সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জের কাছে এর কারণ জানতে চান। জবাব সন্তোষজনক না হলে অভিযুক্তকে দন্ড প্রদান করা হয়। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটনায় বিভিন্ন অভিযোগে গত দেড়বছরে ১১৬৪ টি ঘটনায় এ পর্যন্ত ৯০৯ জনকে বিভিন্নভাবে শাস্তি দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ভর্স্যৎনা, লঘুদন্ড প্রদান ও সতর্ক করা হয়েছে। যদি সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া হাজতে ঢুকানো বকান ছাড়া হয় তবে গুরুদন্ড প্রদান করা হবে।

জানা গেছে, থানায় পুলিশী সেবা নিতে যাওয়া মানুষের ভোগান্তির নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। টাকা দাবি বা আদায়, দুর্ব্যবহার, হাজতখানা অপরিচ্ছন্নসহ পুরানো অভিযোগের গন্ডি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। বিভিন্ন মামলার ও আদালতের পরোয়ানাভুক্ত আসামি আটকের পর প্রতিদিন দুপুরের আগে আদালতে পাঠানোর বিধানে গড়মিল হয়ে আসছিল। যাদেরকে আদালতে পাঠানো হয় তারা ছাড়া থানা হাজতে মোট কতোজন আসামি ছিলেন তার নজরদারি ও মনিটরিং ছিল না। এই সুযোগে থানার ওসি, এসআই ও এএসআই অনেককে থানায় ধরে নিয়ে হাজতে আটকে ভয় দেখিয়ে পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে আসছিল। টাকা নিয়ে থানা হাজত থেকে ছেড়ে দেয়ার ঘটনা ছিল অহরহ।

এমন অভিযোগ থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে ঢাকা রেঞ্জ। এরপর রেঞ্জের অধীন সব থানা ও হাজতে সিসিটিভি স্থাপন করে এর মনিটর অফিসার ইনচার্জের কক্ষ, পুলিশ সুপার কার্যালয় এবং রেঞ্জ অফিসে লিঙ্ক সংযুক্ত করা হয়। যাতে করে থানা হাজতে কাউকে ঢোকানো ও বের করতে গেলে জবাবদিহীতা করতে হয়। সিসিটিভি স্থাপনের ফলে ঢাকা রেঞ্জে এ সংক্রান্ত পুরানো অভিযোগ প্রাায় শূণ্যের কোঠায়। এছাড়া দুর্ব্যবহার, হাজতিদের ফোনে কথা বলার সুযোগ দেয়া, কর্তব্যস্থলে না থাকার অভিযোগও কমেছে। ঢাকা রেঞ্জের এই প্রক্রিয়া অনেক মেট্রোপলিটন ও রেঞ্জ অনুসরণ করছে। এতে হাজতখানায় নির্যাতনের সুযোগও শেষ হয়েছে।এসএইচ

LEAVE A REPLY