আইপিএলে চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত সালমা

নারী আইপিএলের এবারের আসরে বাংলাদেশ থেকে ডাক পেয়েছেন সালমা খাতুন।

নারী আইপিএলের এবারের আসরে বাংলাদেশ থেকে ডাক পেয়েছেন সাবেক টাইগ্রেস অধিনায়ক সালমা খাতুন। আগের আসরে সালমার সঙ্গে পেসার জাহানারা আলম ডাক পেলেও এই আসরে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের থেকে মাত্র একজনই ডাক পেয়েছেন নারীদের আইপিএলে। যা অনেকটা পুরুষ আইপিএলের পথেই হাঁটছে। বিগত কয়েক বছর বাংলাদেশের পুরুষ দল থেকে সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান আইপিএলে ডাক পেলেও চলতি আসরে শুধু মোস্তাফিজ দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে খেলছেন।

এছাড়া আধুনিক বিশ্বে সময় ও প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের সুবাদে ক্রিকেটের টেস্ট ফরম্যাট থেকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট নিয়ে বেশ আগ্রহী থাকে ক্রিকেটভক্তরা। ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্ট হলে চায়ের কাপের ঝড় আরো বেড়ে যায়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল), ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল), পিএসএল, বিগ ব্যাশের মতো জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো বছরজুড়ে ক্রিকেটবিশ্ব মাতিয়ে রাখে। তবে অধিকাংশ টুর্নামেন্টই হয়ে থাকে পুরুষ ক্রিকেটের। নারী ক্রিকেটের ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্ট দুই থেকে তিনটি। তার মধ্যে নারীদের আইপিএলের আয়োজন করতে কাজ করে যাচ্ছে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)। পুরুষ আইপিএলের মতো নারী আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগকে আধিপত্যের সঙ্গে প্রসার ঘটাতে ‘উইমেন্স টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ’ নামে নারীদের আইপিএল আয়োজন করতে যাচ্ছে। এখনো পর্যন্ত তিনবার এ টুর্নামেন্ট মাঠে গড়িয়েছে।

বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির জন্য ২০২১ সালে টুর্নামেন্টটির আয়োজন করা হয়নি। চলতি মাসে ২৩ মে থেকে শুরু হবে নারী আইপিএলের চতুর্থ আসর। মাত্র পাঁচদিনের এই টুর্নামেন্ট শেষ হবে ২৮ মে। লিগের এই আসরের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে ভারতের পুনে এমসিএ স্টেডিয়ামে। মাত্র তিন দলের এই টুর্নামেন্টের দলগুলো হলো ট্রেইলব্ল্যাজার্স, ভেলোসিটি ও সুপারনোভাস। এখনো পর্যন্ত দুবার শিরোপা জয়ের সুবাদের সফল দল হলো সুপারভোনাস। প্রথম দুই আসরে টানা শিরোপা জিতলেও টুর্নামেন্টটির বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ট্রেইলব্ল্যাজার্স।

এদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকেও ছাড়পত্র পেয়েছেন সালমা খাতুন। আসন্ন আসরে কোন দলে খেলবেন, তা এখনো চূড়ান্ত না হলেও আগের আসরের মতো এবারও ট্রেইলব্লেজার্সের জার্সিতে দেখা যেতে পারে এ স্পিন অলরাউন্ডারকে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৫ অথবা ১৬ তারিখ দেশ ছাড়বেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে লাল-সবুজের জার্সিতে ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সালমা খাতুনের অভিষেক হয়েছে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ৭৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৭৮ ম্যাচে ব্যাট হাতে যেটুকু নিজেকে প্রকাশ করেছেন, তার চেয়ে বেশি সাফল্য প্রকাশিত হয়েছে বল হাতে। মাত্র ১৪.৮৪ গড়ে ৭৮ ম্যাচে ৫৬৪ রান করলেও বল হাতে নিয়েছেন ৭১ উইকেট। উইকেটের সংখ্যা কম থাকলেও ইকোনমি রেটই তার ঘূর্ণির যথার্থতা প্রকাশ করে। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে টাইগ্রেসদের এই বোলিং অলরাউন্ডারের ইকোনমি রেট মাত্র ৪.৭৫।

সম্প্রতি শেষ হওয়া আইসিসি নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম দিকে একটি করে উইকেট পেলেও শেষদিকে জ¦লে উঠেছিলেন তিনি। শেষ দুই ম্যাচে বিশ^সেরা দুই দলের বিপক্ষে নিয়েছেন ৫ উইকেট। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ১৩৬ রানের টার্গেট দিয়ে সালমার ঘূর্ণি নাস্তানাবুদ করে দিয়েছিল অজি ব্যাটারদের। মাত্র ২৬ রানেই টপ অর্ডারের তিন উইকেট সাজঘরে ফিরিয়ে জয়ের আশা জাগিয়েছিলেন তিনি।

তবে শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেট জিতলেও ম্যাচ শেষে সালমা খাতুনকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন অজিদের জয়ের নায়ক বেথ মুনি। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সালমা খাতুনের বোলিং সুপার ইমপ্রেসিভ ছিল। সে আমাদের টপ অর্ডারের তিন স্তম্ভকে ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই যখনই নতুন ব্যাটার এসেছে, আমি শুধু বলেছি যে সালমাই আজকের মূল ভয়ের কারণ। আমরা তাকে দেখেশুনে খেলব। সালমার বোলিংয়ের মূল্যায়ন করে তিনি আরো বলেছেন, সে খুবই কারুকার্য জানা স্পিনার। তার হাতে বৈচিত্র্য আছে এবং কোনো নির্দিষ্ট লেন্থে আটকে থাকে না। আমরা সাধারণত যেমন আশা করি, তার চেয়ে ভালো লেন্থে করেছে।

টাইগ্রেস অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির প্রশংসাও সেদিন পেয়েছিলেন সালমা। জ্যোতির মুখ থেকে ভেসে এসেছে সালমার অসাধারণ বোলিংয়ের কথা। সালমাকে দলে পেয়ে টাইগ্রেস অধিনায়ক তার গর্বের কথাও প্রকাশ করেছিলেন সেদিন।

এছাড়া নারী আইপিএলে ডাক না পেলেও টাইগ্রেস পেসার জাহানারা আলম এখন দুবাইতে ফেয়ারব্রেক ইনভাইটেশন টুর্নামেন্টে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শুধু জাহানারাই নয়, এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন আরেক টাইগ্রেস অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদ। বার্মি আর্মির জার্সিতে রুমানা আহমেদ ও ফ্যালকন ওমেনের জার্সিতে জাহানারা আলম দুবাইয়ের মাটিতে নিজেদের দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। দুজনের দলই নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছে।এসআর

LEAVE A REPLY