শিরোপা দৌড়ে এগিয়ে বসুন্ধরা-আবাহনী

সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি ও ঢাকা আবাহনীর খেলোয়াড়ের মধ্যে বল দখলের লড়াই

ঈদের ছুটি শেষে মাঠে ফিরেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবল। প্রথম দিনে শনিবার চার ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঈদের আমেজে আজ তিন ম্যাচেই অঘটন ঘটার সম্ভাবনা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত বসুন্ধরা সেখান থেকে ফিরে আসলেও পারেনি শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। শেষ পর্যন্ত জয় পেয়েছে বসুন্ধরা কিংস, ঢাকা আবাহনী, সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব ও বাংলাদেশ পুলিশ এফসি।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদ যেমন করে একের পর এক অভাবনীয় জয় পুরস্কার দিচ্ছে, বিপিএল ফুটবলেও সেই পথে হাঁটছে বসুন্ধরা কিংস। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পিএসজির বিপক্ষে পিছিয়ে থেকেও শেষদিকের কামব্যাকে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল রিয়াল। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে চেলসির বিপক্ষেও ঘটেছিল একই রকম ঘটনা। এরপরও সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছিল আনচেলত্তির শিষ্যরা। আর সেমিফাইনালে ম্যান সিটির বিপক্ষে সবাই যেখানে ভেবেই নিয়েছিল ২ গোলে পিছিয়ে থেকে ফাইনালের স্বপ্নভঙ্গ হতে যাচ্ছে রিয়ালের সেখান থেকে ফাইনাল নিশ্চিত করে মাঠ ছেড়েছে তারা। এদিকে বিপিএলে একইভাবে হাঁটছে অস্কার ব্রুজনের শিষ্যরা। দুই তিন গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রবসন রবিনিওরা। মুন্সীগঞ্জের শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে শনিবার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বিপক্ষে দুইবার পিছিয়ে পড়েও ৩-২ গোলে জিতেছে বসুন্ধরা।

ম্যাচের সতেরো মিনিটেই প্রথম গোলের লিড পেয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসা লং বল ক্লিয়ার করতে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন বসুন্ধরা গোলরক্ষক জিকো। তবে সে যাত্রায় সুদি আব্দুল্লাহর সঙ্গে টিকে থাকতে না পেরে গোল হজম করে বসে জিকো। উড়ন্ত বলকে জিকোর হাতের স্পর্শ লাগার আগেই হেড করে জালে জড়িয়ে দেয় বুরুন্ডির এই ফরোয়ার্ড। এরপর প্রথমার্ধে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও সমতায় ফিরতে পারেনি কিংসরা। বিরতি থেকে ফিরে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সমতার স্বস্তি ফিরে বসুন্ধরা। মিগেল ফিগেইরার পাঠানো বলকে বাঁ পায়ের টোকায় দূরের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন রবসন রবিনিও। সমতায় ফেরার পরও শীর্ষস্থান অধিকারীরা স্বস্তিতে থাকতে পারেনি খুব একটা সময়। ম্যাচের ৬০তম মিনিটে আবারো এগিয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা। বাঁ দিক দিয়ে একক প্রচেষ্টায় আক্রমণে ওঠে অসাধারণ গতিতে বসুন্ধরার রক্ষণভাগের ফুটবলারদেরসহ গোলরক্ষক জিকোকে পরাস্ত করে সহজেই বলকে জালে পাঠান সুদি আব্দুল্লাহ। এরপর বসুন্ধরার ম্যাচে ফেরার গল্প। ৭৩ মিনিটে আবারো মিগেল ফিগেইরার তুলে দেয়া বলকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বসুন্ধরাকে সমতায় ফেরান এলিটা কিংসলে। এর দশ মিনিট পর সুমর রেজার গোলের সুবাদের লিডে চলে যায় তারা। তারিক কাজীর লম্বা শটকে ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে নিজের পায়ে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডান পায়ের কোনাকুনি শটে বলকে জালে পাঠান তিনি। এই জয়ের সুবাদে ১৪ ম্যাচে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বসুন্ধরা কিংস। এই ম্যাচে জয় তুলে নিতে ব্যর্থ হলে শীর্ষস্থান হারাতে হতো তাদের।

সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির মুখোমুখি হয়েছিল ঢাকা আবাহনী। এই ম্যাচে প্রথম থেকেই নিজেদের আধিপত্য ধরে রেখেছে আকাশি-নীল জার্সিধারীরা। ম্যাচের প্রথমার্ধেই জয়সূচক দুই গোল দিয়েছে নবীব নেওয়াজ জীবনরা। ১৪তম মিনিটে আবাহনীকে লিড এনে দেন মেহেদি হাসান রয়্যাল। এর আট মিনিট পরই ব্যবধানকে দ্বিগুণ করে জুয়েল রানা। বিরতির আগে কোনো গোল না হওয়ায় দুই গোলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যেতে হয়েছে রহমতগঞ্জের। বিরতি থেকে ফিরেও তারা কোনো দলই গোল করতে পারেনি। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে রহমতগঞ্জের হয়ে গোল করেন মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন। শেষদিকের এই গোল ব্যবধান কমানো ব্যতীত অন্য কোনো অবদান রাখতে পারেনি। এই জয়ের সুবাদের ১৪ ম্যাচে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে ঢাকা আবাহনী। মুক্তিযোদ্ধার বিপক্ষে বসুন্ধরা হেরে গেলে শীর্ষ দুই দলের ব্যবধান হতো মাত্র এক পয়েন্ট।

বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় শনিবার প্রিমিয়ার লিগে টানা পাঁচ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর হারের মুখ দেখছে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র। সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের কাছে ১-০ গোলে হেরেছে তারা। সাইফের হয়ে গোল করেছেন রিয়াদুল হাসান রাফি। গোটা ম্যাচে মাত্র দুইবার সুযোগ তৈরি করেছিল রাসেল। একবার ক্রসবার আরেকবার সাইডবারে লেগে বল ফিরে আসায় হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাদের। শুরুর ১৫ মিনিটে বেশ কয়েকবার আক্রমণে উঠেছে সাইফ। এমফন সানডের ফ্রি কিক আশরাফুল রানা প্রতিহত করে বাইরে পাঠিয়ে দেন। ১২ মিনিটে নিহাত জামান উচ্ছ্বাসের ক্রস বক্সের ভেতরে এমেকার গোলমুখী শট রাসেলের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বাইরে চলে যায়। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেও রাসেলকে রক্ষা করেন আশরাফুল রানা। বাম প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন এমফন সানডে তবে তার শট এগিয়ে এসে ফিরিয়ে দেন অভিজ্ঞ এই গোলকিপার। বারবার ব্যর্থ হওয়ার পর ৬১ মিনিটে লিড পায় সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব।

জামাল ভুঁইয়ার ক্রসে লাফিয়ে উঠে হেড করে বলকে জালে পাঠান রিয়াদুল হাসান রাফি। এরপর সুযোগ থাকলেও দুর্ভাগ্যবশত আর সমতায় ফেরা হয়নি তাদের। ৮৩ মিনিটে মান্নাফ রাব্বির গতির শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসায় তাদের হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে। এই ম্যাচে হারের পর ১৪ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে অষ্টম স্থানেই থাকল শেখ রাসেল। সমান ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। শেখ রাসেলের ন্যায় শনিবার পুলিশ এফসির বিপক্ষে হেরেছে শেখ জামাল। পুলিশ এফসির হয়ে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে জয়সূচক গোল করেছেন মোহাম্মদ শেখ বাবলু।এসএইচ

LEAVE A REPLY