শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি, টাইগারদের প্রস্তুতি ক্যাম্প রবিবার শুরু

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে মাঠে নামার আগে রবিবার থেকে নিজেদের প্রস্তুত করতে মাঠে নামবে টাইগাররা

বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে রবিবার ঢাকায় আসার কথা শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট দলের। করোনা ভাইরাসের কারণে চার দেয়ালে বন্দি থেকে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে বিভিন্ন ক্রীড়া ইভেন্টে অংশ নিতেন খেলোয়াড়রা। করোনার প্রকোপ শুরুর পর থেকে দেশে সব সিরিজই অনুষ্ঠিত হয় কঠোর জৈব সুরক্ষা বলয়ে তথা বায়োবাবলে। তবে এখন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এবার বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজে থাকছে না কোনো বায়োবাবল।

বায়োবাবল না থাকলেও সাবধানতা অবলম্বনের জন্য বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চিকিৎসক মনজুর হোসেন। তিনি বলেন, এমনিতেই কোনো বিধিনিষেধ নাই। তবে আমাদের দিক থেকে বলা হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য। মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহার করার জন্য। অন্যদিকে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজ নিয়ে নানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুক্রবার রাতে শ্রীলঙ্কায় ফের জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির সরকার। এ অবস্থায় টেস্ট সিরিজে অংশ নিতে করুনারত্নে বাহিনী বাংলাদেশে আসবে কিনা, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। যদিও সেসব নিয়ে ভাবনার আপাতত কোনো সুযোগ নেই বাংলাদেশের। কারণ পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রবিবার থেকেই টেস্ট সিরিজকে সামনে রেখে ক্যাম্পে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে প্রাথমিক স্কোয়াডে থাকা সদস্যদের। এখনো ঈদের ছুটিতে যার যার এলাকায় আছেন বেশির ভাগ ক্রিকেটার।

ইতোমধ্যে ছুটি কাটিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছেন টাইগারদের ব্যাটিং পরামর্শক জেমি সিডন্স। কোচিং স্টাফের অন্য সদস্যরাও রবিবারের মধ্যে চলে আসবেন। পরে বাংলাদেশের মূল ক্যাম্প হবে প্রথম টেস্টের ভেন্যু চট্টগ্রামে। ‘বায়োবাবল বলে এবার কিছু থাকছে না। তাই করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করা হবে। এছাড়া কারো উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করা হবে। শ্রীলঙ্কা দল ঢাকায় পৌঁছানোর পর তাদের করোনা টেস্ট করার কথা রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের টেস্ট করা হবে ৯ মে।

দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট ১৫ মে থেকে শুরু হবে চট্টগ্রামে। বাংলাদেশ দল রবিবার বন্দরনগরীতে গেলেও শ্রীলঙ্কা অবস্থান করবে ঢাকায়। ৯ মে অনুশীলনের পর ১০ ও ১১ মে তারা বিকেএসপিতে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে। এরপর তারা চট্টগ্রাম যাবে। প্রথম টেস্ট শেষে দুই দলই ফিরবে ঢাকায়। ২৩ মে থেকে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট। এই ম্যাচ দুটি আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট কোয়াডে নেই পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। কাটার মাস্টার কেন টেস্ট খেলছেন না। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকেই আলোচনার শুরু। ওয়ানডে সিরিজের পর বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ চোটে পড়ায় টেস্ট দলে পেসার সংকট তৈরি হয়। মোস্তাফিজুর রহমানের অভাবটা তখন থেকেই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু তত দিনে মোস্তাফিজ আইপিএলে ব্যস্ত। তাই মোস্তাফিজের জন্য হাহাকার করেও কোনো লাভ হচ্ছিল না।
কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজের আগে ঘুরেফিরে শনিবার এলো সেই মোস্তাফিজের প্রসঙ্গ। কেন মোস্তাফিজ টেস্টে নেই- এই প্রশ্নের মুখে পড়ে বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ এই বাঁ-হাতি পেসারের টেস্ট থেকে বিশ্রাম নিয়ে খেলার কড়া সমালোচনা করেছেন।

গতকাল খালেদ মাহমুদ বলেছেন, সাকিব-তামিমদের বয়স ৩৪-৩৫ বছর। তাদের এখন বিরতি প্রয়োজন, তারা এটার যোগ্য। কিন্তু লিটন দাস তো বিশ্রামের যোগ্য নয়। লিটন যদি সাকিব-তামিম হতো, বলতাম সেও বিশ্রামের যোগ্য। মোস্তাফিজের অবশ্যই টেস্ট খেলা উচিত। এখন তার পিক টাইম। আমরা তো বলছি না সব টেস্ট খেল। আমি চাই বছরে ৬-৮টা টেস্ট ম্যাচ তার খেলা উচিত।’ একাধিক পেসার চোটের সঙ্গে লড়লেও আইপিএল থেকে এখন মোস্তাফিজকে ফিরিয়ে এনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট খেলানোর ভাবনা নেই বিসিবির। সুজন ইঙ্গিত দিলেন, আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের টেস্ট স্কোয়াডে বিবেচনা করা হবে এই বাঁ-হাতি পেসারকে।

সুজনের ব্যাখ্যা, যেহেতু ওকে আমরা ছুটি দিয়ে দিয়েছি, আইপিএল খেলছে, এখন ওকে ডিস্টার্ব করতে চাই না। আইপিএল খেলুক। আইপিএলে আমাদের একজন প্রতিনিধিত্ব করছে এটা আমাদের জন্য বড় একটা ব্যাপার। আমরা চাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে একটা টেস্ট হলেও খেলুক। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজে উইকেট হবে কেমন- এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কেমন উইকেটে খেলা হবে- এ নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট ও সিনিয়র খেলোয়াড়দের মধ্যে ভিন্ন মত রয়েছে।

দেশের মাটিতে খেলায় এতদিন বাংলাদেশের মূল শক্তি ছিল স্পিন। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজে স্পিনে ধরাশায়ী হওয়াটাকে অনেকে দুর্ঘটনা বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এবার দুই টেস্টেরই দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ সব উইকেট হারিয়েছে স্পিনে। মাঝারি মানের প্রোটিয়া স্পিনারদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ভঙ্গুর ব্যাটিং যারপরনাই হতাশ করেছে সবাইকে। অধিনায়ক মুমিনুল হক তখন বলেছিলেন, ‘ভালোমানের স্পিনারদের বিপক্ষে কখনোই আমরা ভালো ছিলাম না।’

বিসিবির একটি বিশ^স্ত সূত্র জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কেমন উইকেটে খেলা হবে, এ নিয়ে সিনিয়র ক্রিকেটার, কোচ ও টিম ম্যানেজমেন্টের মধ্যে মতের অমিল রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, দলের কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার শ্রীলঙ্কা সিরিজে স্পিন সহায়ক উইকেট চান। কিন্তু কোচিং স্টাফ ও টিম ম্যানেজমেন্টের কয়েকজনের চাওয়া স্পোর্টিং উইকেট। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট তৈরি করেন প্রধান কিউরেটর শ্রীলঙ্কার গামিনি ডি সিলভা। উইকেট নিয়ে কখনোই সাংবাদিকদের সামনে মুখ খোলেন না তিনি। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের দায়িত্বে আছেন জাহিদ রেজা। উইকেট নিয়ে বোমা মেরে তার মুখ থেকেও কথা বের করা কঠিন। ১৫ মে চট্টগ্রামে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু ২৩ মে।
সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে স্পিনে ব্যর্থ হওয়ার পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, ‘এতদিন জানতাম আমরা পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে দুর্বল। এখন দেখছি উলটো। নতুন করে ভাবতে হবে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিবির এক পরিচালক বলেছেন, ‘উইকেট নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। সাকিব দলে ফিরেছে। দেশের মাটিতে খেলা। দলের অনেকে স্পিন উইকেট চায়। আবার সদ্যপ্রাপ্ত অভিজ্ঞতা থেকে স্পোর্টিং উইকেটের কথাও বলছে কেউ কেউ। শেষেরটার সম্ভাবনাই বেশি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুযোগ কেউ হাতছাড়া করতে চায় না।’

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওয়ানডে সিরিজে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করা তাসকিন আহমেদ কাঁধের চোটের ব্যাপারে ডাক্তারি পরামর্শ নিতে লন্ডনের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন। লন্ডনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে তার সাক্ষাতের দিন ধার্ষ করা হয়েছে আগামী ১০ মে। তবে আপাতত সার্জারির প্রয়োজন পড়ছে না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইনজেকশন নেয়া লাগতে পারে তার। অন্যথায় দেশে ফিরে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন তিনি। সব শেষ করে ১৫ মে দেশের উদ্দেশে রওনা হবেন তাসকিন।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে প্রথম টেস্ট খেলার পর গত এক মাস আর বোলিং করতে পারেননি তাসকিন। বর্তমানে কাঁধের চোট কিছুটা কমলেও একপ্রকার অস্বস্তি রয়ে গেছে। তবে ভালো বিষয় হলো, পানি জমা কমে গেছে তার। তাই শিগগিরই মাঠে ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। তাসকিনের একদিন আগে ইংল্যান্ড গেছেন তরুণ ডান-হাতি পেসার অভিষেক দাস অরণ্য। ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালের অন্যতম নায়ক দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছেন পিঠের সমস্যায়। তাই এবার ইংল্যান্ডে সার্জারি করানো হবে তার।

LEAVE A REPLY