ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সাবেক স্বৈরশাসকের ছেলে বংবং মার্কোস

ফিলিপাইনের সাবেক নিষ্ঠুর স্বৈরশাসকের ছেলে ফার্দিনান্দ বংবং মার্কোস জুনিয়র সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতেছেন। অথচ, বাবা যেমন স্বৈরশাসক ছিলেন, তার মা আন্তর্জাতিকভাবে কুখ্যাতি কুড়িয়েছিলেন জুতার বিশাল সংগ্রহের জন্য।

৬৪ বছর বয়সী ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র তার বংবং নামেই বেশি পরিচিত। তিনি ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পথে রয়েছেন।

আংশিক ও বেসরকারি ফলাফল বলছে, তিনি ৫৫.৮০ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতে গেছেন।

তার এই জয়ের নেপথ্যের কারণ নিহিত আছে বংশানুক্রমিক রাজনীতির চক্রান্তের জাল, কয়েক প্রজন্ম ধরে চলতে থাকা আনুগত্য আর সোশ্যাল মিডিয়া দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চতুর কৌশলের মধ্যে।

ফিলিপাইনের ইলোকোস নর্তে অঞ্চলটি মার্কোস পরিবারের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। সেখানে স্প্যানিশ কায়দায় তৈরি এক রাজকীয় প্রাসাদ, যেটিকে বর্ণনা করা হয় উত্তরের মালাচিয়াং প্রাসাদ বলে।

মূল মালাচিয়াং প্রাসাদ আসলে হাজার মাইল দূরে রাজধানী ম্যানিলায়, এটি ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন। তবে ফার্দিনান্দ মার্কোস যখন ফিলিপাইন শাসন করেছেন, তখন ১৯৬০ এর দশকে ইলোকোস নর্তের এই প্রাসাদটি তার পরিবারকে উপহার দেয় দেশটির পর্যটন কর্তৃপক্ষ।

তবে মার্কোস পরিবারের তীর্থ বলে পরিচিত এই প্রাসাদোপম বাড়ি এখন জনগণের জন্য উন্মুক্ত। মার্কোসের সমর্থকরা এখানে এসে ফার্দিনান্দ এবং ইমেলদা মার্কোসের রাজকীয় ছবির সামনে সেলফি তোলে, তাদের থাকার ঘরগুলো ঘুরে ঘুরে দেখে।

বংবং শৈশবে যে ঘরটিতে থাকতেন, সেখানে একটি কারুকার্যখচিত খাটের বিপরীতে ঝোলানো তার একটি ছবি, ফিলিপাইনের সম্ভাব্য ভাবী নেতার এক অসাধারণ প্রতিকৃতি।

ছবিতে বংবং একটি স্বর্ণ-মুকুট পরে আছেন, তিনি একটি সাদা স্ট্যালিয়ন ঘোড়ায় চড়ে মেঘের রাজ্যে চলেছেন। তার এক হাতে ফিলিপাইনের পতাকা, অন্য হাতে বাইবেল।

এই পেইন্টিং এর কোণায় যে স্তোত্র লেখা, তা ছবিটির মর্মার্থ বুঝতে সাহায্য করবে: এপো ২১:১, এতে পবিত্র নগরী জেরুজালেমের ওপর দিয়ে এক স্বর্গ-দূতের উড়ে যাওয়ার বর্ণনা দেয়া আছে।

এক গণঅভ্যুত্থানের মুখে ১৯৮৬ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন ফার্দিনান্দ মার্কোস। এ পরিবার বিশ্বজুড়ে কুখ্যাতি অর্জন করে তাদের দুর্নীতির জন্য।

তার শাসনামলে ফিলিপিনে কী ব্যাপক দুর্নীতি আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল, আদালতের রেকর্ড আর সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে তার বিস্তারিত বিবরণ এবং প্রমাণ আছে।

গণঅভ্যুত্থানের বিপ্লবী কর্মীরা যখন ম্যানিলায় প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে ঢুকে পড়েছিল, তখন সেখানে মার্কোস পরিবারের বহু চমৎকার তৈলচিত্র, সোনায় মোড়ানো জাকুজি, ১৫টি মিংক কোট, ৫০৮টি ডিজাইনার গাউন, এবং ফার্স্ট লেডি ইমেলদা মার্কোসের তিন হাজার জোড়া জুতার সংগ্রহ দেখতে পান।

কিন্তু সেই পরিবারেরই সন্তান বংবং ইতোমধ্যে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বেসরকারি ফলাফলে ভূমিধস জয় পেয়েছেন। তার নির্বাচনী প্রচারণা যখন চলছিল বিপুল উদ্যোমে, তখন সমর্থকরা অতীতের এসব ঘটনা এবং তথ্য সম্পর্কে তাদের সংশয় প্রকাশ করছিলেন।

বংবং এর বিরোধী শিবিরের লোকজন এজন্য দায়ী করছেন সোশ্যাল মিডিয়াকে। তাদের মতে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে, মার্কোস পরিবারের কলঙ্কময় অতীত মুছে ফেলা হয়েছে। তবে মার্কোস পরিবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।

বহু বছর ধরেই ফেসবুকে ভুয়া একাউন্ট আর নানা রকমের প্রোপাগান্ডা পোস্ট দিয়ে চালানো হচ্ছে মার্কোস পরিবারের গুণকীর্তন। এসব পোস্টে অতীত ইতিহাসকে এতটাই ব্যাপকভাবে বিকৃত করা হয়েছে যে, লোকে এসব ভুল তথ্য দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, তোতাপাখির মতো সেগুলোকেই সত্য বলে পুনরাবৃত্তি করে।

kalerkantho

এসব পোস্টে সাধারণভাবে একটা কথাই বেশি করে বলা হয়- মার্কোসের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনামলটাই ছিল আসলে ফিলিপাইনের ‘স্বর্ণযুগ’। যদিও আসলে তখন ফিলিপাইনের অর্থনীতি ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছিল এবং দেশটি ছিল বিদেশি ব্যাংকগুলোর কাছে বিপুলভাবে ঋণগ্রস্ত।

LEAVE A REPLY