ষষ্ঠবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড রনিল বিক্রমাসিংহের

রনিল বিক্রমাসিংহে

শ্রীলঙ্কায় ষষ্ঠবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরল রেকর্ড গড়লেন রনিল বিক্রমাসিংহে। বৃহস্পতিবার (১২ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। এর আগে ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪, ২০০১ থেকে ২০০৪, ২০১৫ থেকে ২০১৫ (১০০ দিন), ২০১৫ থেকে ২০১৮ এবং ২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট পাঁচবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন রনিল বিক্রমাসিংহে।

গত সোমবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসের প্রধানমন্ত্রিত্ব ত্যাগের পর দেশটিতে বিক্ষোভ আরও বেড়ে যায়। ক্ষমতাসীন দলের মাহিন্দা রাজাপাকসেসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির বাসভবনে অগ্নিসংযোগও করে বিক্ষোভকারীরা। গত দুই দিন সঙ্কটপূর্ণ দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব কে নেবেন তা নিয়ে আলোচনা চলে। এ পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শরৎ ফনসেকার নাম প্রস্তাব করেছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার জানা যায়, শেষপর্যন্ত ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা রনিল বিক্রমাসিংহেকেই পরবর্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছেন তিনি।

শ্রীলঙ্কার ডেইলি মিররের প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শপথ নেয়ার পর কলম্বোয় একটি মন্দির পরিদর্শনে যাবেন রনিল বিক্রমাসিংহে। এরপর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন নতুন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৪৯ সালের ২৪ মার্চ জন্ম নেয়া রনিল বিক্রমাসিংহে পাঁচবার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করার পাশাপাশি ১৯৯৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এবং ২০০৪ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশেটির প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

বর্তমানে রনিল দলের মনোনীত সংসদ সদস্য। ২০২০ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তিনি জয়ী হতে পারেননি। পরে দলের মনোনীত এমপি হিসেবে সংসদে যান এবং ২০২১ সালের ২৩ জুনে তিনি শপথ নেন।

রাজনৈতিক পরিবারের জন্ম নেয়া রনিল বিক্রমাসিংহে সিলন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন। গত শতাব্দির সত্তরের দশকের মাঝামাঝিতে শ্রীলঙ্কার পুরোনো রাজনৈতিক দল ইউএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৭৭ সালে প্রথমবারের মতো দেশটির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। সেবার তিনি সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে যুব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন।

পঞ্চম মেয়াদে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে। সে সময় শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয় তাকে।

এর আগে চতুর্থ মেয়াদে ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি দেশটির প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা পুনরায় তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। ইউনাইটেড ন্যাশনাল ফ্রন্টের সঙ্গে জোট করে সেবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়ে ১০৬ আসনে জয়ী হলেও সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। ৩৫ আসন নিয়ে শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি তার সঙ্গে সংসদে যোগ দিলে তিনি পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। তার স্থলে তৎকালীন সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। মাহিন্দাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রনিল মেনে না নেওয়ায় দেশটিতে সাংবিধানিক সঙ্কট দেখা দেয়। ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর সিরিসেনা পুনরায় তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিলে সেই সঙ্কট দূর হয়।

১৯৮৯ সালে প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসা রনিলকে শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন।

১৯৯৩ সালে প্রেসিডেন্ট প্রেমাদাসা হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে প্রধানমন্ত্রী ডি বি উইজেতুঙ্গা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। আর উইজেতুঙ্গার প্রধানমন্ত্রীর পদে স্থলাভিষিক্ত হন রনিল বিক্রমাসিংহে। ১৯৯৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা চলাকালে গামিনী দিশানায়েক হত্যাকাণ্ডের পরবর্তীতে ওই বছরের নভেম্বরে রনিলকে বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত করা হয়।

১৯৯৪ সালের পর থেকে তিনি ইউএনপির নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

LEAVE A REPLY