১০৫ রানে ৬ লঙ্কান ব্যাটারকে সাজঘরে ফেরানো নাঈমকে অভিনন্দন জানান লিটন দাস।
টাইগার শিবিরে চট্টগ্রামের ছেলে নাঈমের দেখা ছিল না দীর্ঘদিন। চলতি শ্রীলঙ্কার সিরিজের প্রাথমিক দল ঘোষণায়ও ছিল না তার নাম। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে (ডিপিএল) মিরাজের দুর্ভাগ্যজনিত চোঁটই যেন নাঈমের জন্য সৌভাগ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিরাজ ইনজুরিতে পড়ার ফলে তার জায়গায় দলে ডাক পেয়েছে অফস্পিনার নাঈম হাসান। দলে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই লঙ্কানদের বধ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন তিনি। রঙ্গনা হেরাথের পরামর্শ ও নিজের আঙুলের ঘূর্ণিতে সোমবার (১৬ মে) চট্টগ্রামে টাইগার শিবিরকে পুরোপুরি স্বস্তি উপহার দিয়েছেন। মাত্র এক রান বাকি থাকলেও অ্যাঞ্জেলা ম্যাথুসকে ২০০ রানের মাইলফলকে পৌঁছাতে দেননি তিনি। প্রথম ইনিংসে ৪০০ রানের আগেই লংকানদের বধ করতে দলের হয়ে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছেন। দুই দিনে বল করেছেন ৩০ ওভার। যেখান থেকে ১০৫ রানের বিনিময়ে নিয়েছেন ৬টি মূল্যবান উইকেট।
ম্যাচের প্রথমেই টাইগারদের সাফল্য এনে দিয়েছেন নাঈম। দুই ওপেনার ওসাদা ফার্নান্দো ও দিমুথ করুনারত্নেকে ফিরিয়েছেন প্রথম সেশনেই। দীর্ঘ ১৫ মাস পর দলে ফিরে প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দেওয়ার আজ সোমবার দ্বিতীয় দিনে পুরোপুরি নিজের সামর্থ্যরে প্রমান দিয়েছেন। নিয়েছেন আরো চার উইকেট। দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে দলীয় ৩১৯ রানের মাথায় ৬৬ রানে ব্যাট করতে থাকা চান্দিমালকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফিরিয়েছেন। একই ওভারের পঞ্চম বলে নতুন নতুন ব্যাটার ডিকওয়ালাকে সরাসরি বোল্ড করে সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন। এরপর শেষদিকে দুই উইকেটও নিয়েছেন নিজের ঝুলিতে। ১৪৯তম ওভারের পঞ্চম বলে আশিথা ফার্নান্দোকেও বোল্ড করেছেন। শেষ উইকেটে লংকানদের এক প্রান্ত আগলে রেখে ২০০ রানের পথে এগিয়ে যাওয়া অ্যাঞ্জেলা ম্যাথুসকে ফিরিয়ে ৪০০ রানের আগেই অলউইকেট করেছে লংকানদের।
প্রথমদিন রবিবার অধিনায়ক মুমিনুল হক তাকে দিয়ে বল করিয়েছেন ১৬ ওভার। মাত্র ১৬ ওভারেই নিজের কাক্সিক্ষত সাফল্য পেয়েছেন। ৪.৪০ ইকোনমিতে ৭১ রানের বিনিময়ে নেন ২ উইকেট। দীর্ঘ ১৫ মাস পর জাতীয় দলের সাদা পোশাকে মাঠে নেমেছেন তিনি। সর্বশেষ গত জুলাইতে জিম্বাবুয়ে সফরে দলে ছিলেন তিনি। তবে একমাত্র টেস্ট উপভোগ করতে হয়েছে মাঠের বাইরে থেকেই। মিরাজের চোঁট পাওয়ার ফলে মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছেন। তবে সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে বেশ একটা সময় নেননি তিনি। প্রথম ৭ ওভার দুই পেসার খালেদ আহমেদ এবং শরিফুল ইসলামকে দিয়ে করানোর পর টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল হক বল তুলে দেন তার হাতে। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ফিরে নিজের প্রথম ওভারেই বাজিমাত করেছেন এই স্পিনার। লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নেকে শিকার বানিয়ে দলকে এনে দিয়েছেন দিনের প্রথম সাফল্য। অষ্টম ওভারের পঞ্চম বলে আউট হয়ে ফিরেছেন করুনারত্নে। অফ স্টাম্পের বাইরে গতির ওপর বল ছেড়েছে নাঈম। সেই বল লেট কাট করতে গিয়ে মিস করেন লঙ্কান অধিনায়ক। ব্যাটের আগেই বল তার পেছনের প্যাড স্পর্শ করে। মাঠ আম্পায়ার আউটের সংকেত দেয়ার পর রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি। ১৭ বল থেকে ৯ রান করেই সাজঘরের পথ ধরতে হয়েছে তাকে। এরপর শিকার বানিয়েছেন ওসাদা ফার্নান্দোকে। উইকেটে প্রায় সেট হয়ে গিয়েছিলেন এই ওপেনার। ইনিংসের ২৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নাঈমের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হন তিনি। ৩৬ রানে থাকা এই ব্যাটারকে দারুণ এক ডেলিভারিতে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের ক্যাচ বানিয়েছেন নাঈম। এক পা সামনে এগিয়ে নিয়ে ফার্নান্দো ডিফেন্ড করতে চাইলে তার ব্যাটের একপাশে বল আলতো ছোঁয়া দিয়ে চলে যায় লিটন দাসের তালুতে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে অভিষেক হওয়ার পর মাত্র ৭ ম্যাচের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার ঝুলিতে। এরই মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ স্পিনার হিসেবে গড়েছেন ৫ উইকেটের রেকর্ড। দলের প্রয়োজনে যখনই ডাক পেয়েছেন তখনই নিজের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছেন তিনি। আগের সাত ম্যাচ নিজের ঝুলিতে রেখেছেন ২৫ উইকেট। এর মধ্যে দুইবার ৫টি করে উইকেট নিয়েছেন ২১ বছর বয়সি এই অফ স্পিনার।
নাঈম হাসান বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন প্রতিভা। ফুটবলার বাবার স্বপ্ন পূরণ করে তিনি এখন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন সদস্য। বাবার কাঁধে চড়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন মাঠে তামিম-আফতাবদের ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ হওয়া সেই দিনের শিশু নাঈম সব বাধা অতিক্রম করে নিজেকে বিশ^ মঞ্চে উপস্থাপন করেছে। ২০১৩ সালে জেলা অনূর্ধ্ব-১৪ দলে সুযোগ না পেলেও ২০১৫ সালে জেলা দলের হয়ে সর্বোচ্চ রানের পাশাপাশি সর্বোচ্চ উইকেট নিয়ে সুযোগ পান জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৭ দলে। এরপর বয়সভিত্তিক দলের হয়ে বিশ^কাপেও খেলেছেন তিনি। সব পথ অতিক্রম করে টাইগারদের জার্সিতে টেস্ট ফরম্যাটে অভিষেক ম্যাচেই গড়েছেন রেকর্ড। নিজ জেলা চট্টগ্রামের মাটিতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছে তার। সেই অভিষেক ম্যাচে ৫ উইকেট নেয়া সর্বকনিষ্ঠ বোলারের কৃতিত্বটা এখনো পর্যন্ত তার দখলেই।এস/টিআর