স্মরণীয় মুহূর্তের অপেক্ষায় তামিম

মঙ্গলবার সাগরিকায় নতুন মাইলফলকে পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে টাইগার ওপেনার তামিম ইকবালের

রেকর্ডবুকে নিজের নাম লেখানো যে কোনো ক্রিকেটারের জন্যই বিশেষ মুহূর্ত। তা যদি নিজের ঘরের মাঠে হয় তাহলে সেই আনন্দ অধিকতর স্মরণীয় হয়ে থাকে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এমনই এক স্মরণীয় মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছে তামিম ইকবালসহ পুরো চট্টগ্রামবাসী। ঘরের ছেলে ঘরের মাঠেই নতুন রেকর্ড গড়ার অপেক্ষায় আছে। আন্তর্জাতিক টেস্ট ফরম্যাটে ৫ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছাতে চট্টগ্রামে টাইগারদের ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবালের প্রয়োজন ছিল ১৫২ রান। সাকিব-নাঈমের ঘূর্ণিতে ৩৯৭ রানে লঙ্কানদের অলআউট করার পর সোমবার দ্বিতীয় দিন ১৯ ওভার ব্যাট করেছে দুই টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল হাসান জয়। দিনের শেষদিকে বেশ সতর্কতার সঙ্গে শুরু করেছে দুজন। মাহমুদুল হাসান জয় প্রথমদিকে একটু নড়বড়ে থাকলেও তামিম ইকবাল প্রথম থেকেই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে খেলেছেন। লঙ্কান বোলারদের কোনোরকম ছাড় না দিয়ে সাবলীল ব্যাটিং করেছেন। লঙ্কান বোলারদের মনোবল ভেঙে দিতে দ্ইু ব্যাটার মিলে হাঁকিয়েছেন ৯টি বাউন্ডারি। যেখানে চারটি চার মেরেছেন তামিম। চার চারের সাহায্যে ৬৭.৩১ স্ট্রাইক রেটে ৫২ বলে ৩৫ রান নিয়ে প্রথমদিন শেষ করেছেন তিনি। মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের শুরু থেকে আরো সতর্কতা অবলম্বন করেই খেলার চেষ্টা করবেন। সোমবার নামের পাশে ৩৫ রান যোগ করার সুবাদে টেস্ট ক্যারিয়ারে ৫ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছাতে তার প্রয়োজন মাত্র ১১৭ রান। সাগরিকার এই উইকেটে একটু দেখেশুনে খেললে নামের পাশে আরো শতরান করা বেশ একটা কষ্টসাধ্য নয়। শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলা ম্যাথিউস প্রথম থেকেই বেশ সাবধানতা অবলম্বন করে খেলার সুবাদে ১৯৯ রানের অসাধারণ ইনিংস উপহার দিতে পেরেছেন। নাঈম হাসানের বলে সামনে এগিয়ে এসে এরকম শট না খেললে হয়তো সহজেই ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নিতে পারতেন। ম্যাথিউসের এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে শীতল মস্তিষ্কে খেলতে পারলেই চট্টগ্রামের মাটিতে একটি স্মরণীয় মাইলফলকে পৌঁছাতে পারবেন তামিম ইকবাল। আজ হাফসেঞ্চুরি তুলে নিতে পারলে এটি তার ৩২তম হাফসেঞ্চুরি হবে। আর কোনোভাবে শতরানের ইনিংস খেললে ক্যারিয়ারের দশম শতক হাঁকানোর রেকর্ডে নাম বসাবেন তিনি। তাহলে টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল হকের সেঞ্চুরি সংখ্যা থেকে মাত্র এক ব্যবধানে থাকবেন তামিম। ২০০৮ সালের ৪ জানুয়ারি ইউনিভার্সিটি ওভালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাদা পোশাকে অভিষেক হয়েছিল অধিনায়ক তামিম ইকবালের। এরপর থেকে এখনো পর্যন্ত ৬৫ ম্যাচে ১২৫ ইনিংসে ৩১টি অর্ধশতক, ৯টি শতক ও একটি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি।

শুধু তামিম ইকবালই নয়, এ সিরিজে মাইলফলক ছোঁয়ার অপেক্ষায় আছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিকুর রহিমও। ২০০৫ সালের ২৬ মে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল মুশফিকুর রহিমের। এরপর থেকে ৮০ ম্যাচে ১৪৮ ইনিংস খেলার সুযোগ পেয়েছেন। যেখানে ২৫টি অর্ধশতক, ৭টি শতক ও ৩টি ডাবল সেঞ্চুরির সাহায্যে ৩৬ গড়ে করেছেন ৪৯৩২ রান। পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক ছুতে তার প্রয়োজন মাত্র ৬৮ রান।

চলতি ম্যাচেই ঘরের মাঠে রাজকীয়ভাবে প্রত্যাবর্তন করেছে চট্টগ্রামের আরেক সন্তান নাঈম হাসান। ঘূর্ণির জাদু দেখিয়ে দীর্ঘ ১৫ মাস পর জাতীয় দলে ফিরে প্রথম ইনিংসেই নিয়েছে ৬ উইকেট। টাইগার শিবিরে নাঈমের দেখা ছিল না দীর্ঘদিন। চলতি শ্রীলঙ্কার সিরিজের প্রাথমিক দল ঘোষণায়ও ছিল না তার নাম। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে (ডিপিএল) মিরাজের দুর্ভাগ্যজনিত চোঁটই যেন নাঈমের জন্য সৌভাগ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিরাজ ইনজুরিতে পড়ার ফলে তার জায়গায় দলে ডাক পেয়েছে অফস্পিনার নাঈম হাসান। ডাবল সেঞ্চুরি থেকে মাত্র এক রানের জন্য অপেক্ষারত অ্যাঞ্জেলা ম্যাথিউসকেও শেষ হাসিটুকু হাসতে দেননি তিনি। প্রথম ইনিংসে ৪০০ রানের আগেই লঙ্কাবধ করতে দলের জন্য অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছেন। দুই দিনে ৩০ ওভার বল করে ১০৫ রানের বিনিময়ে নিয়েছেন ৬টি মূল্যবান উইকেট। ম্যাচের প্রথমদিনে দুই ওপেনার ওসাদা ফার্নান্দো ও দিমুথ করুনারত্নকে ফিরিয়েছেন প্রথম সেশনেই। এরপর সোমবার দ্বিতীয় দিনে পুরোপুরি নিজের সামর্থ্যরে প্রমাণ দিয়েছেন। নামের পাশে যোগ করেছেন আরো চার উইকেট। দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে দলীয় ৩১৯ রানের মাথায় ৬৬ রানে ব্যাট করতে থাকা চান্দিমালকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন। একই ওভারের পঞ্চম বলে নতুন ব্যাটার ডিকওয়ালাকে সরাসরি বোল্ড করে সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন। এরপর ১৪৯তম ওভারের পঞ্চম বলে নবম উইকেটে আশিথা ফার্নান্দোকেও বোল্ড করেন। শেষ উইকেটে লঙ্কানদের এক প্রান্ত আগলে রেখে ২০০ রানের পথে এগিয়ে যাওয়া অ্যাঞ্জেলা ম্যাথিউসকে ফিরিয়ে ৪০০ রানের আগেই অলউইকেট করেছে লঙ্কানদের। ২০১৮ সালের নভেম্বরে অভিষেক হওয়ার পর মাত্র ৭ ম্যাচের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার ঝুলিতে। এরই মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ স্পিনার হিসেবে গড়েছেন ৫ উইকেটের রেকর্ড। দলের প্রয়োজনে যখনই ডাক পেয়েছেন তখনই নিজের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছেন তিনি। আগের সাত ম্যাচ নিজের ঝুলিতে রেখেছেন ২৫ উইকেট। এর মধ্যে দুইবার ৫টি করে উইকেট নিয়েছেন ২১ বছর বয়সি এই অফস্পিনার।

দীর্ঘদিন পর সাদা পোশাকে ফিরে লঙ্কানদের বিপক্ষে বল হাতে জ¦লে উঠেছেন সাকিব আল হাসানও। নাঈমের ছয় উইকেট ও ম্যাথিউসের ডাবল সেঞ্চুরির আক্ষেপের মধ্যেই বাঁ-হাতি অর্থোডক্স থেকে পুরোপুরি বদলে ফেলেছিলেন নিজেকে। রূপ নিয়েছেন বাঁ-হাতি চায়নাম্যানের। ৩৯ ওভারের মধ্যে বেশ কয়েকটি ডেভিলভারিতে তিনি পরিবর্তন এনেছিলেন। যেখানে আটকে গিয়েছিলেন দীনেশ চান্দিমালও। দীর্ঘদিন পর ফিরে মাত্র ১.৫০ ইকনোমিতে রান দিয়ে নিয়েছেন তিন উইকেট। হ্যাটট্রিক করার সুযোগও এসেছিল তার সামনে। তবে সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। ১১৭তম ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে পেয়েছেন দুই উইকেট। হ্যাটট্রিকের আশায় চতুর্থ বলে বেশ আটোসাটো ফিল্ডিং সাজিয়েও বিশ^ ফার্নান্দোকে সাজঘরে ফেরাতে পারেননি।

LEAVE A REPLY