চেলসির তৃতীয় স্থান নিশ্চিত

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে লেস্টার সিটির বিপক্ষে গোলের উদ্দেশ্যে শট নিচ্ছেন স্প্যানিশ ফুলব্যাক মার্কোস আলোনসো

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শেষটা যতই ঘনিয়ে আসছে নাটকীয়তা যেন ততই বাড়ছে। লিগের ৩৭তম রাউন্ডের খেলায় আরো একটা জমজমাট রাত হলো। অবনমন এড়ানোর লক্ষ্যে ঘরের মাঠে ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে মাঠে নামে এভারটন। প্রথমার্ধের খেলায় ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে তাদের শঙ্কাটাও বাড়তে থাকে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৩-২ গোলের নাটকীয় এক জয়ে পরের আসরে লিগে খেলা নিশ্চিত করেছে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের দল। আরেক ম্যাচে লেস্টার সিটির বিপক্ষে মাঠে নেমে শুরুতে ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলের সমতা নিয়েই মাঠ ছেড়েছে টমাস টুখেলের শিষ্যরা। এতেই তৃতীয় স্থান নিশ্চিত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন চেলসির।

গুডিসন পার্কে শুক্রবার এভারটনের প্রত্যাবর্তনের গল্পটা হয়তো অনেকের কাছেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কেননা, ইংলিশ লিগের ১২৩ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক ১১৯ মৌসুম প্রথম বিভাগে কাটানো দল এভারটন। ১৯৯২ সালে প্রিমিয়ার লিগ শুরু হওয়ার পর তারসহ মোট ছয়টি ক্লাব এখন পর্যন্ত প্রতিটি মৌসুমে অংশ নিয়েছে। অথচ এই ক্লাবটিই এবারের মৌসুমে ৩৬ ম্যাচে ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে অবনমনের শঙ্কায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। লিগে টিকে থাকতে হলে শুক্রবারের ম্যাচটা ক্লাবটির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ঘরের মাঠে ক্রিস্টাল প্যালেসকে হারাতে পারলেই আগামী মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে খেলা নিশ্চিত। আর সেই ম্যাচটিতেই কিনা প্রথমার্ধে দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে ল্যাম্পার্ডের শিষ্যরা। দলটির সমর্থকরাও দুঃস্বপ্নের মতো সময় পার করছিল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে তিন গোল দিয়ে দারুণ এক জয় তুলে নিয়ে শেষ পর্যন্ত দলটির সমর্থকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়েছে ক্লাবটি, আর সে কারনেই ম্যাচ শেষে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস নিয়ে মাঠে নেমে পড়ে ক্লাবটির সমর্থকরাও।

প্রতিপক্ষের মাঠ গুডিসন পার্কে প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় ক্রিস্টাল প্যালেস। ২১ মিনিটে জ্যঁ-ফিলিপ মাতেতা ও ৩৬ মিনিটে জর্ডান আইয়ুর গোলে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় প্যাট্রিক ভিয়েরার শিষ্যরা। তবে দুই গোল খেয়ে ভেঙে পড়েনি এভারটন। তারা নতুন উদ্যম নিয়েই যেন দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামে। জয়টা যে তাদের লাগবেই। তাই মনোবলটাও বেশ জোরালোই ছিল। আর ফুটবলে যে কোনো মুহূর্তেই খেলার পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। আর দ্বিতীয়ার্ধে সেটিই দেখিয়ে দুর্দান্ত এক প্রত্যাবর্তনের গল্প তৈরি করলেন রিচার্লিসনরা। ৫৪ মিনিটে মাইকেল কিন আর ৭৫ মিনিটে রিচার্লিসনের গোলে ২-২ এ সমতায় ফেরে তারা। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজতে যখন ৫ মিনিট বাকি, তখনই নাটকীয়তার জন্ম দেয়। ক্রিস্টাল প্যালেস বক্সের বাইরে ফ্রি-কিক পায় এভারটন। সেখান থেকে ডেমারাই গ্রে’র শটে মাথা ছুঁইয়ে প্যালেস গোলরক্ষক জ্যাক বাটল্যান্ডকে পরাস্ত করেন এভারটনের ডমিনিক ক্যালভার্ট-লেউইন। ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় এভারটন। শেষ পর্যন্ত ক্রিস্টাল প্যালেস আর গোল করতে না পারলে খেলোয়াড়, সমর্থক, কোচ সবাই মেতে ওঠেন উল্লাসে। কেননা, এই জয়ে ৩৭ ম্যাচ থেকে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে এখন টেবিলের ১৬ নম্বরে অবস্থান করছে ল্যাম্পর্ডের শিষ্যরা। তাতে একটি ম্যাচ হাতে রেখেই পরের মৌসুমে লিগে খেলা নিশ্চিত হয়ে গেছে তাদের।

এদিকে দুই গোলে এগিয়ে থাকার পরেও ম্যাচ হেরে প্যালেস কোচ ভিয়েরার মেজাজ এমনিতেই ভালো ছিল না, এরই মধ্যে এক এভারটন ভক্তের বিদ্রুপ বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারেননি আর্সেনালের সাবেক এই অধিনায়ক। উল্টো ঘুরে সেই দর্শককে লাথি মেরে বসেন তিনি। লাথি খেয়ে সেই দর্শকও মাঠে গড়াগড়ি দেয়া শুরু করেন। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটি দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। তবে ম্যাচ শেষে সাবেক এই ফরাসি তারকা স্কাই স্পোর্টসকে জানান, ‘আমার এই ঘটনা নিয়ে কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে লেস্টার সিটির বিপক্ষে মাঠে নামে চেলসি। এদিন গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের সম্ভাব্য নতুন মালিক টড বোয়েলি। আগের ম্যাচেই অবনমনের দিকে থাকা লিডসকে ৩-০ গোলে হারিয়ে আগামী মৌসুমে চাম্পিয়ন্স লিগ খেলা নিশ্চিত করে তারা। আর লেস্টারের বিপক্ষে ১-১ সমতা নিয়ে ম্যাচ শেষ করার পর লিগে তৃতীয় স্থান নিশ্চিত হয়েছে তাদের। ঘরের মাঠে মাত্র ৬ মিনিটে জেমস ম্যাডিসনের গোলে পিছিয়ে পড়ে চেলসি। তবে ৩৪ মিনিটে সেই গোল শোধ করেন দলটির স্প্যানিশ ফুলব্যাক মার্কোস আলোনসো। ম্যাচের বাকি সময়ে চেলসি অনেক চেষ্টা করেও লেস্টারের গোলমুখ উন্মুক্ত করতে পারেনি। তাই ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় টমাস টুখেলের শিষ্যদের। তৃতীয় স্থানে থেকে লিগ শেষ করার পর দলের ফরাসি মিডফিল্ডার কান্তেকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন টুখেল। তিনি বলেন, ‘আমার চোখে সে আমাদের দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। কিন্তু এই অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে তো মাঠে থাকতে হবে! এমন একজন যদি মৌসুমে ৪০

শতাংশ ম্যাচ খেলে, সেক্ষেত্রে আমরা যে লিগে তৃতীয় হতে পারছি, সেটাই একটা মিরাকল। ও আমাদের মো. সালাহ, আমাদের ফন ডাইক, আমাদের ডি ব্রুইনা। সহজভাবে বলতে গেলে ও এমনই একজন খেলোয়াড়।’

৩৭ ম্যাচ থেকে ৭১ পয়েন্ট নিয়ে এখন টেবিলের তৃতীয় স্থানে আছে চেলসি। লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলতে ২২ মে ওয়াটফোর্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবে ক্লাবটি। সেই ম্যাচে হেরে গেলেও তৃতীয় স্থানে থেকেই মৌসুম শেষ করবে তারা। কারণ চার নম্বরে থাকা টটেনহ্যাম হটস্পারের সমান ম্যাচে পয়েন্ট ৬৮। আর পয়েন্ট সমান হলেও গোল ব্যবধানে টটেনহ্যামের থেকে ঢের এগিয়ে চেলসি।রি-এসএস/ইভূ

LEAVE A REPLY