সল্টলেকে মোহনবাগানের মুখোমুখি বসুন্ধরা

শুক্রবার অনুশীলনে ঘাম ঝরায় বসুন্ধরার খেলোয়াড়রা

কলকাতার সল্টলেকে স্বপ্নের মতো শুরু করেছে বসুন্ধরা কিংস। দ্বিতীয় ম্যাচে সেই সল্টলেকেই মোহনবাগানের মুখোমুখি হবে অস্কার ব্রুজনের শিষ্যরা। শনিবার বিকাল ৫টায় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। বসুন্ধরা ও অ্যাথলেটিকো মোহনবাগানের ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে স্টার স্পোর্টস থ্রি।

এএফসি কাপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মাজিয়া স্পোর্টস এন্ড রিক্রিয়েশনের বিপক্ষে ১-০ গোলে জয় পেয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে আছে বসুন্ধরা। অন্যদিকে মোহনবাগানের জন্য এটি জয়ে ফেরার ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে আরেক ভারতীয় ক্লাব গোকুলাম কেরালার বিপক্ষে ৪-২ গোলে হেরেছে তারা। এই ম্যাচে জয়ে ফিরতে পারলে কিছুটা আশা বাঁচিয়ে রাখতে পারবে মোহনবাগান। অন্যথায়, এখান থেকেই ছিটকে যাবে তারা। গ্রুপপর্বে খেলার জন্য প্লে-অফে বাংলাদেশি ক্লাব আবাহনীকে হারিয়ে গ্রুপপর্ব নিশ্চিত করতে হয়েছে তাদের।

মোহনবাগানের বিপক্ষে আকাশি-নীল জার্সিধারীরা জয় তুলে নিতে না পারলেও বসুন্ধরা কোনোভাবেই পয়েন্ট হারাতে চাইবে না। এএফসি কাপের জন্য সেরকম পূর্বপ্রস্তুতি নিয়েই কলকাতায় পৌঁছেছে তারা। আগে থেকেই বিদেশি ফরোয়ার্ড দিয়ে ভরপুর ছিল কিংসদের শিবির। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দলবদলের সময়ে আরেক বিদেশি ফরোয়ার্ড নুহা মারংকে দলে যোগ করেছে অস্কার ব্রুজন। মাজিয়ার বিপক্ষে সেই নুহনা মারংকেই সবার উপরে খেলিয়েছেন। তার পিছনে আরো তিন ফরোয়ার্ডকে রেখেছেন অস্কার ব্রুজন। তাদের মধ্যে দুই বিদেশি অধিনায়ক রবসন রবিনিও ও মিগুয়েল ফিগেইরার সঙ্গে দেশি ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলেছেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তাদের পিছনে মিডফিল্ডার হিসেবে ছিলেন মাসুক মিয়া জনি ও সোহেল রানা।

রক্ষণভাগে তপু বর্মনকে না পেলেও কোনো ঝুঁকি নেননি অস্কার ব্রুজন। চার ডিফেন্ডার নিয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বূহ্য তৈরি করেছে কিংসের ফুটবলাররা। যেখানে ছিলেন তারিক কাজী, বিশ্বনাথ ঘোষ, খালেদ শাফি ও ইয়াসিন আরাফাত। আর গোলপোস্টের নিচে অপ্রতিরোধ্য দেয়ালের ভূমিকায় ছিলেন আনিসুর রহমান জিকো। ম্যাচের প্রথম থেকে একাদশে বাংলাদেশি ফুটবলার হয়ে এলিট কিংসলে না থাকলেও বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নেমেছেন ঠিকই। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভের পর এই দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের অভিষেক ম্যাচ তার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বসুন্ধরার হয়ে তিন হলুদ কার্ড পাওয়া ফুটবলার স্কোরার নুহা মারং, মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও তারিক কাজীকে নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেননি অস্কার ব্রুজন।

এই তিনজনের সঙ্গে উঠেছেন মিগুয়েল ফিগেইরা ও সোহেল রানাও। তাদের উঠিয়ে মাঠে নামিয়েছেন এলিটা কিংসলে, মতিন মিয়া, সুমন রেজা, বিপলু আহমেদ ও রিমন হোসেনকে। সাধারণত অস্কার ব্রুজন ৪-৩-৩ ফরমেশনে বসুন্ধরাকে খেলান। কিন্তু মাজিয়ার বিপক্ষে ৪-২-৩-১ ছক একেছেন তিনি। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারে অসাধারণ খেলেছেন মাসুক মিয়া ও সোহেল রানার জুটি। তাদের জন্যই কিংস রক্ষণভাগ কিছুটা স্বস্তিতে থাকতে পেরেছে। তবে মাজিয়ার লেফট উইঙ্গার হামজা ও স্ট্রাইকার কর্নেলের গতির সামনে বেশ কয়েকবার পরাস্ত হয়েছে তারিক কাজী ও খালেদ শাফি। নতুন ছকে ম্যাচে প্রথমার্ধে বেশ আধিপত্যে সঙ্গেই খেলেছেন কিংস জার্সিধারীরা। ১১ মিনিটের মধ্যেই তিনটি গোলের সুযোগ তৈরি করেছে।

৪র্থ মিনিটে ইয়াছিনের ক্রস থেকে নুহার হেড মাজিয়া ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে কর্নার হয়। ১১ মিনিটে রবসনের ট্রেডমার্ক শট সাইড পোস্টে লেগে ফিরে এসেছে। রবসনকে বেশ পাহারা দিয়ে রাখায় কাজের কাজটি করতে হয়েছে নুহাকে মারংকে। ৩৩ মিনিটে দলের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন তিনি। মাজিয়া ডিফেন্ডার ও গোলকিপারের মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝির সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন গাম্বিয়ার জাতীয় দলের এই স্ট্রাইকার। মাঝমাঠ থেকে সোহেল রানার বাতাসে বাড়িয়ে দেয়া বলকে বিপদমুক্ত করবেন এ নিয়ে দ্বন্দ্বে পড়ে যান মাজিয়ার এক সেন্টারব্যাক ও গোলকিপার। দুজনের সিদ্ধান্তহীনতার সুযোগে মাঝ থেকে হেডে বল পোস্টে পাঠিয়ে দেন নুহা।

এরআগে ২৬ মিনিটে গোলকিপারকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। প্রথমার্ধে গোল পেয়ে দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণ থেকে অনেকটা বিরতই থেকেছেন রবসন রবিনিওরা। আক্রমণে না উঠে নিজেদের পায়ে বল রাখার চেষ্টা করেছেন। এর মধ্যেও দারুণ সুযোগ পেয়েছিল মিগুয়েল ফিগেইরা। ৭৬ মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল ঠিকমতো জালে জড়াতে পারেননি। তবে বসুন্ধরা আক্রমণে না উঠলেও বেশ কয়েকবার সুযোগ পেয়েই জিকোর দেয়ালকে ভাঙতে চেয়েছে মাজিয়ার ফরোয়ার্ডরা। শেষদিকে গতির ঝড় তুলে বেশ কয়েকবার কিংস রক্ষণভাগে কাঁপুনি ধরিয়েছেন মাজিয়ার লেফট উইঙ্গার হামজা। তার একটি শট দুর্দান্তভাবে রুখে দিয়েছেন জিকো। এর ফলে নির্ধারিত সময় শেষে ১-০ গোলের জয় নিয়েই মাঠে ছেড়েছেন বসুন্ধরা কিংস।

বসুন্ধরার জন্য এএফসি কাপ অনেকটা আক্ষেপের টুর্নামেন্ট। ২০২০ সালের ১১ মার্চ ঢাকায় আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড হার্নান বার্কোসের চার গোলের সুবাদে টিসি স্পোর্টসকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দুরন্ত অভিষেক হয়েছিল তাদের। কিন্তু করোনার কারণে ওই বছর আর মাঠে গড়ায়নি এ প্রতিযোগিতা। গত বছর অনেকটা দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছিল অস্কার ব্রুজনের শিষ্যরা। কোনো ম্যাচ না হারলেও গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) চ্যাম্পিয়নদের।রি-এসএস/ইভূ

LEAVE A REPLY