মূল্যস্ফীতি ও বিদেশী মুদ্রা বিনিময় হারের দুই চ্যালেঞ্জে ব্যাংকিং খাত: গভর্নর

রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে শনিবার আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের বৃত্তি প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। ছবি: ভোরের কাগজ

বৈশ্বিক অর্থনীতির ঝুঁকি বিবেচনায় মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারকে দেশের ব্যাংক খাতের মূল চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তিনি বলেছেন, এ দুই কারণে বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডলার সহায়তা দেয়া হলেও সংকট মোকাবিলায় শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক নয়, সরকারি বেসরকারি সব বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সমষ্টিগতভাবে কাজ করতে হবে।

রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে শনিবার (২৮ মে) আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের বৃত্তি প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলহাজ সেলিম রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফরমান আর চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, করোনার সময়ে অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে ব্যাংকাররা সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন। কোভিডে ১৮৯ জন ব্যাংকার মারা গেছেন। এখন ব্যাংক খাতের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি এবং ডলারের বাড়তি দাম। এতে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি বাড়ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বিলাস পণ্যের আমদানিতে ব্যাংকগুলোকে নিরুৎসাহিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখানে সরকারি, বেসরকারি সব ব্যাংক সম্মিলিতভাবে সংকট মোকাবিলায় কাজ করতে হবে। বেশ কয়েকটি ব্যাংক শিক্ষাবৃত্তি চালু করেছে উল্লেখ করে ফজলে কবির বলেন, করোনাকালে সামাজিক দায়বদ্ধতার আওতায় (সিএসআর) বরাদ্দকৃত টাকা স্বাস্থ্যখাতে বেশি ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। তবে শিক্ষাখাতে ব্যাংকগুলো এগিয়ে এসেছে।

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকটি এককালীন ৮ হাজার টাকা দিচ্ছে। এটাকে ১০ হাজার করার প্রস্তাব দেন তিনি। পাশাপাশি প্রতি মাসে সাড়ে ৩ হাজারের পরিবর্তে এটা রাউন্ড ফিগার করতে বলেন। গভর্নর বলেন, দারিদ্র্য ও নানাবিধ প্রতিকূলতায় আমাদের অনেক মেধাবী অকালেই ঝরে যায়। আর্থিক প্রতিবন্ধকতার কারণে মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা যাতে ঝরে না পড়ে সেজন্য আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের শিক্ষাবৃত্তি নিঃসন্দেহে একটি যথার্থ ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও ফরমান আর চৌধুরী বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এ বৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে এবং দেশ ও জাতির উন্নতিতে নিজেদের নিয়োজিত করবে। ব্যাংকের চেয়ারম্যান সেলিম রহমান বলেন, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকাণ্ড পালন করে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় শিক্ষাবৃত্তি কর্মসূচি পরিচালিত হয়ে আসছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের আওতায় আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক প্রতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২০০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি দিয়ে আসছে। স্নাতক পর্যায়ে চার বছরের জন্য এ বৃত্তি দেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২০০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হয়েছে। আর নতুন ও পুরনো মিলে প্রতি বছর আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের বৃত্তি প্রদান কার্যক্রমের আওতায় মোট ৮০০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে প্রায় ৪ কোটি টাকার বৃত্তি দেয়া হবে। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকে প্রতি মাসে সাড়ে তিন হাজার এবং এককালীন ৮ হাজার টাকা করে বৃত্তি পাবেন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু নাসের মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, পরিচালক আব্দুস সামাদ লাবু, মো. আব্দুস সালাম, বদিউর রহমান, মাহবুবুল আলম, নাজমুল আহসান খালেদ, আব্দুল মালেক মোল্লা, হাফেজ মো. এনায়েত উল্লা, আহামেদুল হক, মোহাম্মদ এমাদুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ হারুন, মো. লিয়াকত আলী চৌধুরী, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. হারুন-অর-রশিদ খান, মো. আমির উদ্দিন এবং এম কামাল উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ

LEAVE A REPLY