ফাইল ছবি
১১ মাসে এসেছে ১৯.১৯ বিলিয়ন ডলার
রোজার ঈদের পরের মাসেও মোটামুটি ভাল রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সদ্যসমাপ্ত মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ (১.৮৮ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন তারা। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৯ টাকা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। টানা পাঁচ মাস কমার পর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বেড়েছিল অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে ফের হোঁচট খায়। ওই মাসে ১৪৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। মার্চে এসেছিল ১৮৬ কোটি ডলার। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে এসেছিল যথাক্রমে ১৬৩ কোটি ৬ লাখ ও ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিন হওয়ায় ওই মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছিল বলে জানায় ব্যাংকগুলো। তবে মার্চে এই সূচকে ফের গতি ফেরে, ওই মাসে ফেব্রুয়ারির চেয়ে ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স দেশে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রণোদনা বেড়েছে। ডলারের দামও বেশি। রোজার ঈদ উৎসব সামনে রেখে এপ্রিলে পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি টাকা পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ঈদের পরের মাসেও ভাল রেমিটেন্স এসেছে। সামনে কোরবানির ঈদ আছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙা হওয়ায় ওই দেশগুলো থেকে বেশি রেমিটেন্স আসবে। সবকিছু মিলিয়ে আগামী দিনগুলোয় রেমিটেন্স বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ও তেমনটিই পূর্বাভাস দিয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরজুড়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে থাকা প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্সে নতুন অর্থবছরে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। আগামী ৩০ জুন চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হবে। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে ২০২২-২৩ নতুন অর্থবছর। নতুন অর্থবছরে রেমিটেন্স বাড়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শ্রমিক নতুন করে বিদেশে যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে বাড়তি এই পরিমাণ রেমিটেন্স পাওয়া যাবে।’
করোনা মহামারীর মধ্যেও সবাইকে অবাক করে দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক বছর বা অর্থবছরে এত বেশি রেমিটেন্স দেশে আসেনি। কিন্তু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই অর্থনীতির এই সূচকে ভাটার টান লক্ষ্য করা যায়। প্রতি মাসেই কমতে থাকে, তবে তিন মাস ধরে উর্ধমুখী ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরেক দফা কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ গত রবিবার এক ধাক্কাতেই ১ টাকা ১০ পয়সা কমিয়ে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ৮৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সোমবার থেকে নতুন দরে কেনাবেচা হচ্ছে ডলার। গত মে মাসেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান চার দফা কমানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গতবছরের ৫ আগস্ট আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার দর। বাজার স্বাভাবিক করতে গত ১১ মাসে ৬০০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপরও ডলারের লাগাম টেনে ধরতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল বুধবারও ১৩ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, গত ১১ মাসে বাংলাদেশী মুদ্রা টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বুধবার রেমিটেন্স প্রবাহের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, সদ্যসমাপ্ত মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ৪০ হাজার (১.৮৮ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ কম। আর গতবছরের মে মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ কম। গতবছরের মে মাসে ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) ১ হাজার ৯১৯ কোটি ৪৪ লাখ (১৯.১৯ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ কম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, মে মাসের যে রেমিটেন্স এসেছে, তারমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৮ কোটি ৩৮ লাখ ডলার।
বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। ৪২টি বেসরকারী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৫৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। আর পাঁচটি বিদেশী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৮৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার। বুধবার দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ২০০ কোটি (৪২.১১ বিলিয়ন) ডলার। আমদানি ব্যয় বাড়ায় গত ৯ মে আকুর (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) রেকর্ড ২২৪ কোটি (২.২৪ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। এরপর সপ্তাহখানেক রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের নিচে অবস্থান করে। রেমিটেন্স ও রফতানি আয়ের ওপর ভর করে সেই রিজার্ভ বেড়ে ৪২ বিলিয়ন ডলারের ওপরে অবস্থান করছে।এসএইচ