মজুতদারি নিয়ন্ত্রণে ছয় স্তরের তদারকি

ধান-চালের মজুতদারি রোধ ও দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের একাধিক সংস্থাকে মাঠে নামানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

সংস্থাগুলো ধান-চালের মোকাম, মিল পর্যায়, পাইকারি বাজার, খুচরা বাজার, করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও মৌসুমি ধান ব্যবসায়ীদের গোডাউনসহ ছয় স্তরে তদারকি করছে।

ইতোমধ্যে অনিয়ম পাওয়ায় অসাধুদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। প্রয়োজনে স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট ১৯৭৪ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যেও খুচরা বাজারে নতুন করে চালের দাম বেড়েছে। একদিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি চাল ৬ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে ক্রেতার নাভিশ্বাস আরও বেড়েছে। 

এদিকে সারা দেশে অভিযান আরও জোরদার করতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অবৈধ মজুত প্রতিরোধে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, খাদ্য অধিদপ্তরের তদারকি টিমের সঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরসহ অন্যান্য বাজার তদারকি সংস্থাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সংস্থাগুলো ছয় স্তরে তদারকি করবে। পাশাপাশি ধান ও চালের অবৈধ মজুত রোধে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

অবৈধ মজুতের বিষয়ে সেখানে তথ্য জানাতে +৮৮০২২২৩৩৮০২১১৩, ০১৭৯০৪৯৯৯৪২ এবং ০১৭১৩০০৩৫০৬ নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১ জুন ২০২২ তারিখ পর্যন্ত খাদ্যশস্যের সরকারি মোট মজুত আছে ১২ লাখ ৭৫ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ১১ লাখ ৩২ হাজার টন, গম ১ লাখ ২৩ হাজার টন ও ধান ৩১ হাজার টন। 

তবে এতকিছুর পরও বুধবারের তুলনায় বৃহস্পতিবার চালের দাম আরেক দফা বেড়েছে। এই দাম বাড়ার চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার পণ্যমূল্য তালিকায় লক্ষ করা গেছে।

টিসিবি বলছে, একদিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চালের দাম বেড়েছে ৭.৫৩ শতাংশ। মাঝারি আকারের চালের মধ্যে প্রতিকেজি পাইজাম চাল ৫.৮৮ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আর সরু চালের মধ্যে প্রতিকেজি মিনিকেট ও নাজিরশাল বিক্রি হচ্ছে ৪.৭৭ শতাংশ বেশি দরে। সংস্থাটির তথ্যমতে- বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হয়েছে ৫২ টাকা।

যা একদিন আগে ৪৮ টাকা ছিল। বুধবার পর্যন্ত প্রতিকেজি পাইজাম চাল সর্বনিু ৪৬ টাকায় পাওয়া গেলেও বৃহস্পতিবার তা বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা। প্রতিকেজি সরু চাল বিক্রি হয়েছে ৬০-৭২ টাকা। যা একদিন আগে ৫৮-৬৮ টাকায় বিক্রি হয়।

কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, মিল থেকে একদিন পরপর নতুন করে বাড়তি দাম বেঁধে দিচ্ছে। কিন্তু দেশে এই ভরা মৌসুমে ধান-চালের কোনো ধরনের সংকট নেই।

পর্যাপ্তের চাইতে বেশি আছে। কিন্তু তা সব পর্যায়ে সরবরাহ নেই। গুটিকয়েক বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও বড় মিল মালিক ও মৌসুমি ধান ব্যবসায়ীরা ধান কিনে আগেভাগে মজুত করেছেন।

তারা অতিমুনাফা করতে বাজারে ধান কম করে ছাড়ছেন। এতে ধানের দামও বেড়ে যাচ্ছে। ফলে চাল উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে গিয়ে পড়ছে। ভোক্তার বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। 

বৃহস্পতিবার বোরো ২০২২ মৌসুমে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ ও বাজার মনিটরিং সংক্রান্ত অনলাইন মতবিনিময় সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, একটি মহল খাদ্য ঘাটতির বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে।

তবে দেশে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা নেই। মজুতদারির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এ অভিযান আরও জোরালো হবে। বড় বড় করপোরেট হাউস ধান-চাল সংগ্রহ করছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মিল না থাকলে তারা যেন এ ব্যবসায় যুক্ত না হতে পারে সেটা নিশ্চিতে ধান-চালের বাজারে নজরদারি বাড়াতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, কেউ যেন লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা না করতে পারে। অবৈধ মজুত করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে এবার স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট ১৯৭৪ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি জানান, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে চালের দাম ও গমের দাম কমতে শুরু করেছে। চাল ও গম রপ্তানি করবে মর্মে পত্রও দিচ্ছে। দেশে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে ট্যাক্স কমিয়ে চাল আমদানি করা হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, চালের দাম নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে তদারকি করা হচ্ছে।

পাইকারি, খুচরা এমনকি মোকামসহ মিল পর্যায়, করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও মৌসুমি ধান ব্যবসায়ীদের গোডাউনসহ তদারকি করা হচ্ছে। আশা করি চালের দাম দু-একদিনের মধ্যে কমে আসবে।

তিনি বলেন, তদারকি করার সময় ধান-চালের কেনাবেচার তথ্যসহ অন্যান্য সব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ছোট অনিয়ম পেলেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। আর বড় কোনো ধরনের অসংগতি পেলে এবার আর ছাড় দেওয়া হবে না, সঙ্গে সঙ্গে জেলে পাঠানো হবে।

LEAVE A REPLY