চোখের সাদা অংশ হলুদ হলে জন্ডিসসহ লিভারের সমস্যার ইঙ্গিত পাওয়া যায়
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, স্যানডিয়াগোর বিজ্ঞানীরা একটি স্মার্টফোন অ্যাপ তৈরি করেছেন যেটি ব্যবহার করে আলঝাইমার্স এবং অন্যান্য স্নায়ু রোগের লক্ষণ শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এই অ্যাপটি মোবাইল ফোনের ইনফ্রারেড ক্যামেরা ব্যবহার করে মানুষের চোখের তারার আকৃতিতে সামান্যতম পরিবর্তন হলে তা ধরতে পারে, এবং সেই ডেটা ব্যবহার করে মানুষের বুদ্ধিগত ক্ষমতার অবস্থা পর্যালোচনা করতে পারে।
প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চোখের মধ্য দিয়ে এখন নানা ধরনের অসুখ-বিসুখের লক্ষণ শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। চোখ যেহেতু স্বচ্ছ, তাই শরীরের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় এর ওপর পরীক্ষা চালানো অনেক সহজ। কিন্তু কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়াই শুধু চোখের দিকে তাকিয়ে এখন বেশ কিছু রোগের লক্ষণ শনাক্ত করা যায়।
আপনার নিজের চোখের দিকে তাকিয়ে এরকম কিছু লক্ষণ আপনি খুঁজে দেখতে পারেন। চোখের ওপর আলো পড়লে চোখের তারায় তার প্রতিক্রিয়া হয় দ্রুত। যেখানে আলো উজ্জ্বল সেখানে চোখের তারা ছোট হয়ে যায়। আর যেখানে আলো থাকে কম সেখানে চোখের তারা বড় হয়ে যায়। খবর বিবিসির।
চোখের তারা যে গতিতে ছোট-বড় হয়, সেই গতি কমে গেলে তার মাধ্যমেও নানা ধরনের অসুখ-বিসুখের লক্ষণ খুঁজে পাওয়া সম্ভব। যেমন, আলঝাইমার্স রোগ কিংবা কেউ কোনো ওষুধ অথবা মাদকদ্রব্য সেবন করছেন কিনা তাও বোঝা যায় এই তারা কত দ্রুত ছোট-বড় হয় তার ওপর।
কারও চোখের তারা বড় দেখা গেলে বোঝা যায় সেই ব্যক্তি কোকেন বা অ্যামফিটামিন জাতীয় মাদক ব্যবহার করেছে। যারা হেরোইনের মত মাদক সেবন করেন তাদের চোখের মণি ছোট দেখা যায়। চোখের যে অংশটি সাদা তাকে বলে শ্বেত মণ্ডল বা স্ক্লেরা। এর রঙে কোনো পরিবর্তন হলেও বোঝা যায় দেহে কোনো সমস্যা তৈরি হয়েছে।
টকটকে লাল চোখ অতিরিক্ত মদ্যপান কিংবা মাদক সেবনের লক্ষণ। তবে কোনো ধরনের রোগ জীবাণুর সংক্রমণ কিংবা প্রদাহ হলেও চোখ লাল হতে পারে। এই সমস্যা কিছু দিনের মধ্যে চলে যায়। যদি চোখের রঙ বেশি দিন লাল থাকে তাহলে বুঝতে হবে সংক্রমণ অথবা প্রদাহ মারাত্মক।
আপনি যদি কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন তাহলে তার কারণেও চোখে এই প্রতিক্রিয়া হচ্ছে বলে ধরে নেয়া যায়। কখনও কখনও গ্লুকোমা নামে এক ধরনের চক্ষু রোগের জন্য চোখ লাল হয়ে থাকে। এই পরিস্থিতিতে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। তা না হলে রোগীর অন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
শ্বেত মণ্ডল যখন হলুদ দেখা যাবে তখন বুঝতে হবে রোগী জন্ডিস হয়েছে। আপনার লিভার ঠিকভাবে কাজ না করলেও চোখ হলুদ দেখা যাবে। জন্ডিস নানা কারণে হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে লিভারের প্রদাহ, বা হেপাটাইটিস। তবে জেনেটিক কিংবা অটো-ইমিউন রোগ, ভাইরাস কিংবা টিউমারের জন্যও চোখ হলুদ হতে পারে। আবার কোনো কোনো ওষুধ সেবনের জন্য চোখ হলুদ দেখা যেতে পারে।
চোখের শ্বেত মণ্ডলীতে রক্তের দাগ, যাকে বলে সাবকনজাংকটিভাল হেমারেজ, দেখলে যে কারও ভয় লাগার কথা। চোখের ভেতরে কোনো ছোট রক্তনালী ফেটে ছোট আকারে রক্ত শ্বেত মণ্ডলীতে ছড়িয়ে পড়ে। বেশিরভাগ সময়ে বোঝা যায় না যে কেন এরকম ঘটনা ঘটে। এবং কিছু দিনের মধ্যে এটা সেরে যায়। তবে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস কিংবা যাদের রক্ত সহজে জমাট বাঁধে না তাদের চোখেও এরকম রক্তের ছাপ দেখা যেতে পারে।
অ্যাসপিরিনের মতো যেসব ওষুধ দিয়ে রক্ত পাতলা করা হয় তার জন্যও এটা ঘটতে পারে। যদি ঘন ঘন এরকম ঘটতে থাকে তাহলে আপনার উচিত হবে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ঐ ওষুধের সঠিক ডোজ ঠিক করা। কর্নিয়া হচ্ছে স্ক্লেরা অর্থাৎ আপনার চোখের সাদা অংশের সামনে স্বচ্ছ পর্দা। একে ঘিরে কোনো সাদা বা ধুসর রিঙ দেখা গেলে বুঝতে হবে রোগীর দেহে উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল রয়েছে অথবা হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি বেশি।
এর মাধ্যমে অ্যালকোহল আসক্তিও শনাক্ত করা যায়। কখনও কখনও বয়োবৃদ্ধ মানুষের চোখে এই রিঙ দেখা যায়। একারণেই এর নাম “অ্যারকাস সেনাইলিস।” কখনও কখনও আপনার চোখের সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিবর্তনগুলো আসলে সমস্যা হিসেবে খুবই মৃদু এবং সহজেই এর চিকিৎসা সম্ভব।
পিংগুয়েকুলা হচ্ছে হলুদ এক ধরনের টুকরো যেটা চোখের সাদা অংশে দেখা যায়। এটা তৈরি হয় মেদ এবং প্রোটিন থেকে। চোখের ড্রপ দিয়ে কিংবা ছোট অপারেশন করে এটা দূর করা যায়। চোখের শ্বেত মণ্ডলীতে আরেক ধরনের হালকা গোলাপি রঙের গ্রোথ দেখা যায়, যার নাম টেরিজিয়াম।
এটা এমনিতে কোনো সমস্যা না। কিন্তু চোখের রঙিন অংশ অর্থাৎ কর্নিয়াতে এটা ছড়িয়ে পড়লে দৃষ্টি সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভাগ্যক্রমে টেরিজিয়াম বিস্তার লাভ করে খুবই ধীর গতিতে। এবং পিংগুয়েকুলার মতোই এটাকে তুলে ফেলা যায়। একে বাড়তে দিলে টেরিজিয়াম কর্নিয়ার ওপর একটা আস্তরণ তৈরি করে যার ফলে দৃষ্টি সমস্যা দেখা দেয়।
দীর্ঘসময় ধরে সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি চোখে লাগার পর পিংগুয়েকুলা অথবা টেরিজিয়াম দেখা দেয় বলে মনে করা হয়। কান্নাকাটি ছাড়াই অনেকের চোখ এমনিতেই ফোলা থাকে। এটা মানুষের মুখের গঠনপ্রকৃতির একটা স্বাভাবিক অংশ। কিন্তু কারও চোখ যখন স্বাভাবিক অবস্থা থেকে হঠাৎ করেই ঠেলে বাইরে বেরিয়ে আসতে চায়, তখন বুঝতে হবে তার থাইরয়েড গ্রন্থিতে এমন কোনো সমস্যা তৈরি হয়েছে যার দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।
কিন্তু দুটি চোখের মধ্যে কোনো একটি ফুলে উঠলে বুঝতে হবে কোনো আঘাত, সংক্রমণ, কিংবা চোখের পেছনে কোনো টিউমারের জন্য এটা ঘটতে পারে। চোখের পাতা থেকেও নানা ধরনের অসুখ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। তবে এগুলো সাধারণত অশ্রু-নালীর নানা সমস্যার জন্য দেখা দিতে পারে।
এরকম একটি সাধারণ সমস্যা হচ্ছে স্টি বা চালাজিয়ন। যাকে বাংলায় আঞ্জনি বলা হয়। চোখের ওপরের কিংবা নিচের পাতা ফুলে লাল হয়ে ওঠে। যে গ্রন্থির মাধ্যমে চোখে তেল যায় সেটি বন্ধ হয়ে গেলে এই সমস্যা দেখা দেয়। আঞ্জনি সাধারণত এমনিতেই চলে যায়। কখনও কখনও চোখে গরম পট্টি ব্যবহার করা হলেও এটি আর থাকে না।
কনজাংকটিভাইটিস বা চোখ ওঠাও বিভিন্ন দেশে খুবই পরিচিত একটি চোখের রোগ। এর চিকিৎসাও বেশ সুলভ। এর বাইরে চোখের পাতায় অকুলার মাইয়োকিমিয়া তৈরি হয় চুলকানি থেকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সমস্যা তৈরি হয় মানসিক চাপ, পুষ্টির অভাব কিংবা অতিরিক্ত কফি পানের জন্য।
ডি-ইভূ