ভোক্তার সুফল কোন পথে

বাজেটে কর বাড়লে দাম বাড়ে, কর কমলে দাম কমে না, সরকারি সিদ্ধান্তের সুফল পান না ভোক্তারা

প্রতিবছর বাজেটে সরকার জনস্বার্থে কিছু পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি থেকে শুরু করে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করে। আবার দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু পণ্যে নতুন করে শুল্কারোপের প্রস্তাব করা হয় বাজেটে। শুল্কারোপের প্রস্তাব ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেয়া হয় তা আর সহজে কমে না। বাজেটে পণ্যের দাম কমানোর প্রস্তাব করলেও ভোক্তারা এর সুফল পান না। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে পেশের পর সরজমিন বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে যেসব পণ্যের আমদানি শুল্ক বা বিক্রিপর্যায়ে ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে সেসব পণ্যের দাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর করেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু যেসব পণ্যের শুল্ক প্রত্যাহার থেকে শুরু করে ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে সেসব পণ্যের দাম কমেনি। এতে সরকারও রাজস্ব হারায় আর ভোক্তারাও সুফল বঞ্চিত হন। এই পরিস্থিতিতে কৌশলী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন ব্যবসায়ীরা। প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে পাস না হওয়া পর্যন্ত বাড়তি দামেই পণ্য কিনতে হয় ভোক্তাদের।

গত বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। এতে মোবাইল ফোনের উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করেন। কিন্তু এই প্রস্তাবের প্রায় এক সপ্তাহ আগে অর্থাৎ গত ২ জুন অপ্পো থেকে শুরু করে বিভোসহ মুঠোফোন কোম্পানি সেট ভেদে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও এসব কোম্পানি দেশে মুঠোফোন উৎপাদন করে আসছে। মুঠোফোন কোম্পানির দাবি, ডলারের দাম বাড়ার কারণে সেটের দাম বাড়ানো হয়েছে।

শুধু মুঠোফোন নয়, বাজেটে যেসব পণ্যের উৎপাদন, বিক্রয় বা আমদানি পর্যায়ে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, সেসব পণ্যের দাম বাজেট প্রস্তাবে দিন থেকেই বাজারে কার্যকর হয়েছে। শুধু তাই নয়, কিছু কোম্পানি বাজেটে তাদের বিক্রি করা পণ্যে শুল্কারোপ হবে এই খবর পাওয়া মাত্র সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে মোবাইল ফোনসেট কোম্পানি সিম্ফোনি কর্মকর্তা রূপক ভোরের কাগজকে বলেন, বাজেটের প্রভাবে দাম বাড়ানো হয়নি। ডলারের অস্থিরতার জন্য আমাদের আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। তাই সেটের দাম বাড়াতে হয়েছে। তিনি বলেন, এন্ড্রয়েট ফোন দেশে উৎপাদন করা হলেও চায়না থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়ানোর বিকল্প ছিল না।

ভোক্তার সুফলের বিষয়ে কনসার্স কনজুমার সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ ভোরের কাগজকে বলেন, সরকার ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় নানা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলেও আসলে কার্যকর হচ্ছে না। কারণ ব্যবসায়ী খুবই কৌশলী। তারা বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়, সেসব পণ্যের দাম রাতারাতি বাড়িয়ে দেন। আর যেসব পণ্যের শুল্ক কমানো হয়, তা আর সহজে কার্যকর হয় না। এতে সাধারণ ভোক্তারা সুফল পান না। তাই যেসব পণ্যে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, সেসব বিষয়ে সরকারের নজরদাড়ি বাড়ানো প্রয়োজন।

জানা গেছে, প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ব্যবসায়ী পর্যায়ে এম এস রডের ভ্যাট ৫০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কমিয়ে ২০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু বাজারে বাজেট প্রস্তাবের কোনো ধরনের প্রভাব পড়েনি। রাজধানীর বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে রড। রডের দামের বিষয়ে শ্যামলী রিং রোডের শাহজালাল এন্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আলমগীর হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, বিএসআরএমের রড বাজারে আগের দামে অর্থাৎ ৮৯ হাজার টাকা টন বিক্রি হচ্ছে। আর রহিম স্টিলের রড বিক্রি হচ্ছে ৮৫ হাজার ৫০০ টাকায়। বাজেটের পর রডের দামে কোনো প্রভাব পড়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত কয়েক দিনের মধ্যে রডের দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আর রডের দাম কবে কমতে পারে নিশ্চিত নন এই খুচরা ব্যবসায়ী।

শুধু রড নয়, মুড়ির দামও এখনো কমেনি। বাজেটে গমের আটার আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ বাজারে গতকালও আগের দামে বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি আটা। এছাড়া নিবন্ধিত হাঁস-মুরগির খামারের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির আগাম কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়েছে। গোখাদ্যের উৎপাদন ব্যয় কমাতে সুগারকেইন মোলাসেসের ওপর আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে পোল্ট্রি মুরগি। এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ীর মুদি দোকানি কাইয়ুম ভোরের কাগজকে বলেন, বাজেটে তামাকপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু এখনো যেসব পণ্যের দাম কমার কথা বলা হচ্ছে, সেসব পণ্য কম দামে কিনতে পারছি না। পাইকারিতে দাম না কমলে আমরা কীভাবে বিক্রি করব প্রশ্ন এই দোকানির।এসআর

LEAVE A REPLY