কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি সারাদেশে দেড় শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলায়ও ভোট হচ্ছে। এই নির্বাচনকে নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ‘আস্থা অর্জনের অগ্নিপরীক্ষা’ বলা হচ্ছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই নির্বাচন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করা কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের জন্য এক রকম চ্যালেঞ্জই বলা চলে।
আজকের ভোট সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত হয় কিনা তা দেখতে মুখিয়ে আছেন কুমিল্লাসহ সারা দেশের মানুষ।
কারণ অনেকেই মনে করছেন, এ ভোট নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য আস্থা অর্জনের প্রথম পরীক্ষা। এরমধ্য দিয়ে ইসির গ্রহণযোগ্যতার প্রাথমিক মাপকাঠি অনেকাংশে নির্ভর করছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে সাক্কুর মতো বড় পরীক্ষায় যে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন তা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ-জানিপপের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর কথায়।
তার ভাষ্য, ‘এ নির্বাচন নবগঠিত ইসির জন্যে প্রথম লিটমাস টেস্ট। ভবিষ্যতে নতুন কমিশনের ইমেজ গঠনের বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করবে এ নির্বাচনের উপর।’
ফলে দেশের সবারই চোখ এখন কুমিল্লায়। আর সেই কোটি চোখের দৃষ্টি যেন শ্যেন না হয়ে ওঠে, সেজন্য কুমিল্লায় ইভিএমের মাধ্যমেও সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে এই প্রথম ক্যামেরার চোখ বসিয়েছে ইসি। সাড়ে আটশর মতো সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে সাড়ে ছয়শ’ ভোটকক্ষে।
নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার চার মাসের মধ্যে আজ প্রথম ভোট হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সঙ্গে পাঁচ পৌরসভা, ১৩০টি ইউপি ও এক উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। তবে প্রচারে সামনে রয়েছে বড় অর্থাৎ কুমিল্লার নির্বাচনই। সব দলের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া ইসির জন্য এই নির্বাচনকে বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন ভোট পর্যবেক্ষকরাও। যার প্রভাব পড়বে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
কুমিল্লায় নির্বাচনি প্রচারের সময় থেকেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ইসি। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কুমিল্লায় অবস্থান, এর বিপক্ষে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য এবং প্রার্থীদের পরস্পরবিরোধী অভিযোগে এরই মধ্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভোটের পরিবেশ।
যদিও এখন পর্যন্ত ঘটেনি কোনো অঘটন। তবুও আজকের ভোট নিয়ে উৎসবের পাশাপাশি রয়েছে এক ধরনের শঙ্কা। বিশেষ করে কালোটাকার প্রভাব ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বহিরাগত অবস্থান করায় এমন শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি বুথে ভোট হবে ইভিএমে।
স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এই ভোট সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের (বাহার) জন্যও চ্যালেঞ্জের বিষয়। কারণ, আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আরফানুল হক (রিফাত) বাহাউদ্দিনের প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। আরফানুলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক (সাক্কু), যিনি এই ভোটের আগপর্যন্ত বাহাউদ্দিনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলে আসছিলেন বলে এলাকায় প্রচার আছে। আগের দুটি নির্বাচনে সাক্কু বাহারের আনুকূল্য পেয়েছেন বলে জনশ্রুতি আছে। তাই মনিরুলের এবারের প্রার্থী হওয়াকে বাহাউদ্দিনের একচ্ছত্র প্রভাব-প্রতিপত্তিকে চ্যালেঞ্জ করা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন দলের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে এলাকাছাড়া করতে না পারলেও নির্বাচন কমিশন বলছে, অবাধ সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে আগামীর জন্য একটি উদাহরণ দেওয়ার মতো ভোট করতে চান তারা।
সব দলের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া ইসির জন্য এই নির্বাচনকে বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন ভোট পর্যবেক্ষকরাও। ইসি জনসংযোগ শাখার কর্মকর্তারা জানান, কুমিল্লায় সাতটি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৯২ জনকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের এটি তৃতীয় নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী পাঁচজন। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন গত দুবারের মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক (টেবিল ঘড়ি) ও আওয়ামী লীগের আরফানুল হক (নৌকা)। অন্য তিনজন হলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন (ঘোড়া) ও কামরুল আহসান (হরিণ)। এর মধ্যে মনিরুল হক বিএনপির ও নিজামউদ্দিন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ছিলেন। সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় দুজনকেই বহিষ্কার করে বিএনপি। বহিষ্কার করলেও এই দুই প্রার্থীই খালেদা জিয়ার সালাম দিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন।