মধ্যবিত্ত ত্রিমুখী আক্রমণের শিকার: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

    এসডিজি বাস্তবায়নে বাজেট নিয়ে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম-এর আয়োজনে রবিবার মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার ইনে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যসহ অন্যরা।

    মধ্যবিত্ত এখন ত্রিমুখী আক্রমণের শিকার- বৈষম্যমূলক অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এর সুরক্ষা বাজেটে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মধ্যবিত্ত শ্রেণি এ মূহূর্তে রাজনৈতিকভাবে প্রতিনিধিত্বহীন, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবেও মধ্যবিত্তের অভিভাবক নেই।

    এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম-এর আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২২-২০২৩: পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কী আছে?’ -শিরোনামে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে রবিবার ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার ইনের সম্মেলন কক্ষে এসব কথা বলেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। নাগরিক প্ল্যাটফর্ম কোর গ্রুপ সদস্য এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিকভাবে আলোচনা করেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোয়ালিটি পরিচালক রিফাত বিন সাত্তার, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ পরিচালক (গার্লস রাইটস) কাশফিয়া ফিরোজ এবং বনানী বিশ্বাস, অভিযান নির্বাহী পরিচালক। অনুষ্ঠানে প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম সমন্বয়ক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ।

    মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাজেটে ভর্তুকিত পরিমাণ বাড়ানো হলেও এর এক বড় অংশ বিদ্যুৎ খাতে চলে যাওয়ায় দরিদ্র ও মধ্যবিত্তরা তেমন সুবিধা পাবেন না। সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দেও দরিদ্ররা উপেক্ষিত থাকছেন বলে তিনি মনে করেন।

    তিনি বলেন, গত এক দশকে গড়ে উঠা মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে আয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার বিষয়ে অবহেলা করা হয়েছে। উপরন্তু, মধ্যবিত্তরা কর ফাঁকি দেয় বলে অর্থমন্ত্রী অভিহিত করেছেন। অথচ এই শ্রেণির মানুষের মেধা ও যোগ্যতাকে কতটা ব্যবহার করা হচ্ছে, তাদের প্রতি কতটা সুবিচার করা হচ্ছে তার আলোচনা এই বাজেটে নেই।

    মধ্যবিত্তরা যে সমস্ত জিনিস ব্যবহার করে যেমন স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র ও রেফ্রিজারেটর- সেগুলোর কর বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। দেশের উৎপাদনকারীদের সুরক্ষা দিতে এই ধরনের শুল্ক সুরক্ষা দেয়া হলে ব্যবহারকারী মধ্যবিত্তকেও অন্যভাবে সুবিধা দেয়া উচিত ছিল। বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন নেই। দেবপ্রিয় বলেন, বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ ৫৪ শতাংশ বাড়ানো হলেও এর বড় একটা অংশ চলে যাচ্ছে বিদ্যুত কেন্দ্রের অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি চার্জে। সামাজিক নিরাপত্তায় টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বাড়লেও জিডিপি ও বাজেটের আকারের তুলনায় কমেছে। সরকারি কর্মকর্তাদের পেনশনের বরাদ্দ বাদ দিলে সামাজিক নিরাপত্তায় প্রকৃত বরাদ্দ প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।

    তিনি বলেন, ৫০০ টাকার ভাতায় একটা পরিবার বা দুঃস্থ মানুষের কিছুই হয় না। আমরা প্রতিটি সুবিধাভোগীর জন্য ১০০০ টাকা ভাতার প্রস্তাব করেছিলাম। সেটা করা হয়নি। যুবকদের ভাতাও চালু হয়নি। সাধারণভাবে ভাতাও বাড়েনি। ২০১৮ সালে জাতীয় আয়ের অংশ হিসেবে এই মানুষগুলো চার শতাংশের কম ভাতা পেতো। এখন পাচ্ছে ২.১ শতাংশ। পুরো দেশের মাথাপিছু আয় বাড়ল। তাদের কোন বরাদ্দ বাড়ল না। এই মানুষগুলোর অপরাধ কী? হয় মাথাপিছু আয় বাড়েনি, নয়তো এই মানুষগুলোকে বঞ্চিত করা হয়েছে। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বেড়েছে খুবই সামান্য।

    তিনি আরও বলেন, সামাজিক সুরক্ষায় সুদ, পেনশন, প্রকল্প সহায়তাসহ এমন অনেক উপাদান আছে যেগুলোর সামাজিক নিরাপত্তায় ব্যয় দেখানো সঙ্গত নয়। সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও এ খাতে কোন বরাদ্দ নেই। এ লক্ষ্যে আইনেরও দরকার রয়েছে। এই আইন সামনে রেখে যে বরাদ্দ দরকার তা আমার চোখে পরেনি, বলেন তিনি।

    LEAVE A REPLY