বদলে যাচ্ছে খুলনার মাস্টার প্ল্যান, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বিভাগীয় শহর খুলনায় অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বিপুল পরিবর্তন আসবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটবে। বাড়বে কর্মসংস্থান। এমন ধারণা থেকে খুলনাকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) এবং খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। এর দৃশ্যমান কিছু কাজ বাস্তবায়নের শেষ দিকে। রাজধানীর মতো যানজট না হওয়ার জন্য আগেভাগেই ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে পরিবর্তন আনার কাজ শুরু করেছে কেসিসি।

খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) চিফ প্ল্যানিং অফিসার আবির-উল-জব্বার যুগান্তরকে জানান, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে নগরী আধুনিকায়নের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদক্ষেপ হচ্ছে রাস্তার মোড় প্রশস্তকরণ, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে পরিবর্তন এবং ফুটপাত দখলমুক্ত ও রাস্তা প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নগরীর একাধিক পয়েন্টে নিয়ন বাতি স্থাপনের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন মেয়র আলহাজ তালুকদার আব্দুল খালেক। ইতোমধ্যে সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আরও বলেন, নগরীর লবণচরা, সোনাডাঙ্গা, বয়রা এলাকাসহ বিভিন্ন পয়েন্টের ২২টি মোড় প্রশস্ত করে কার্ভ করা হচ্ছে। পরিবর্তন আনা হচ্ছে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের ওপর। ডাকবাংলো ও শিববাড়িসহ বেশ কয়েকটি স্থানে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য সুব্যবস্থার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নগরীর ডাকবাংলো মোড়ের ওপর কেসিসি সুপার মার্কেটের (প্রস্তাবিত) গ্রাউন্ড ফ্লোরসহ ২টি ফ্লোর পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা করা হবে। সোনাডাঙ্গা ও গল্লামারী এলাকায় ট্রাফিক যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যার মাধ্যমে নগরীর ট্রাফিক যানজট নিয়ন্ত্রণে আসবে। এছাড়া নগরীর ফুটপাত দখলমুক্তসহ যেসব অলিগলিতে রাস্তার প্রশস্ততা কম সেখানে ড্রেনের ওপর স্লাব দিয়ে রাস্তা প্রশস্ত করা হবে। এতে জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই অলিগলিতে ৪-৫ ফুট রাস্তার প্রশস্ততা বাড়বে।

খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) পরিকল্পনাবিদ তানভীর আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পালটে যাবে খুলনার সার্বিক চিত্র। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নকে মাথায় রেখেই খুলনার মাস্টার প্ল্যান পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মাস্টার প্ল্যানটি বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। পরিবর্তন আসবে যশোরের নওয়াপাড়া থেকে বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের। কেডিএ পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নওয়াপাড়া ও মোংলা বন্দরে কেডিএর জোনাল অফিস এবং স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণের জন্য ৬০ একর জমি কেনার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। এছাড়া কেডিএর উদ্যোগে মোংলা বন্দরের আদলে খুলনার পার্শ্ববর্তী নদীর তীরবর্তী এলাকার সুবিধামতো জায়গায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্ট তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছেন। ফলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে সুপরিকল্পিতভাবে একাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। এতে কর্মসংস্থানও বাড়বে। নগরীসহ কেডিএ এলাকার আওতাধীন যেসব এলাকায় প্লট ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে ব্যবসা করছেন তাদের উচ্ছেদ করা হবে। তিনি বলেন, খুলনায় প্রায় ৮০টি আবাসন প্রকল্পের ব্যবসায়ী সংগঠন রয়েছে। যার মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানেরও কেডিএর অনুমতি নেই। যার ফলে এইসব প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান এবং জরিমানা করা হচ্ছে। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিষয়ে সম্পূর্ণ জিরো টলারেন্স অবস্থা নিবে কেডিএ।

আরও বলেন, মাস্টার প্ল্যানে শহরসহ পার্শ^বর্তী এলাকার রাস্তা প্রশস্তকরণের পরিকল্পনা রয়েছে। অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রতিরোধে ময়ূরী-২ এবং নিরালা-২ নামে দুটি নতুন পরিকল্পিত আবাসন করা হবে। কেডিএর আওতাধীন এলাকায় সুপ্রশস্ত রাস্তাসহ পার্কিং এবং বিনোদনের যথেষ্ট জায়গা রাখা হবে। ছোট রাস্তাগুলো অবৈধমুক্ত করে প্রশস্ত করা, অবৈধ অনুমোদনহীন স্থাপনা দখলমুক্ত করা এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে।

LEAVE A REPLY