ডলার/ ফাইল ছবি
অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে বাংলাদেশ ব্যাংক এবার রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে প্রতিনিয়ত দামও বাড়াচ্ছে ডলারের। এরপরও কিছুতেই বাগে আনতে পারছে না ডলারের তেজীভাব। আমদানি খরচ বৃদ্ধি এবং প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় দেশে মার্কিন ডলারের চরম সংকট তৈরি হয়েছে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেলেও তা ডলারের সংকট মেটাতে পারছে না। ফলে প্রতিনিয়ত ডলারের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এ অস্থিরতা কবে নাগাদ শেষ হবে, এমন প্রশ্নের সদুত্তর নেই কারো কাছে।
সম্প্রতি সব ব্যাংকের জন্য এক রেট করে দিলেও ডলারের বাজারে অস্থিরতা কাটেনি। বরং প্রতিনিয়ত পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডলারের দাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিক্রি করা ডলার ইউসিবিএল, ইবিএলসহ বিভিন্ন ব্যাংক ৯৬ টাকা দরে বিক্রি করছে। খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেট) বিক্রি হচ্ছে আরো বেশি দরে। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ডলার বিক্রি করছে, বাজারে তার চেয়ে ৩-৪ টাকা বেশি দরে কেনাবেচা হচ্ছে। ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রি করছে ৯৮-৯৯ টাকা দামে। ফলে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করে ৯২ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। তবে ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় আনে ৯৬-৯৭ টাকায়, আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করে ৯৮-৯৯ টাকা দামে। এর আগে মে মাসে খোলাবাজারে ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছিল। এখন ব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রেই এ দাম ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই।
ডলার বাজারের অস্থিরতা নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম আর এফ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, সারা বিশ্বেই অস্থিরতা চলছে। যে পণ্য গত বছর ১০০ ডলারে আমদানি করেছি, সে পণ্য এখন ১৪০ ডলারে কিনতে হচ্ছে। আমদানিতে উচ্চব্যয়, তেল, গ্যাসের উচ্চমূল্য, করোনাপরবর্তী ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়াস, একই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, এমন পরিস্থিতিতে ডলারের মূল্য আরো বাড়তে পারে। কিন্তু তা কতখানি বাড়বে, সেটা আমরা কেউ বলতে পারছি না। তবে এতদিন পর্যন্ত যে রেট ধরে রাখতে পেরেছে, এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য অনেক বড় একটি সাফল্য।
আর এফ হোসেন বলেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে একচেঞ্জ রেট উপরে উঠবেই। প্রতি মাসে আড়াই বিলিয়ন ডলার লেনদেন পার্থক্য। আগামী ছয় মাসের মধ্যে রেমিট্যান্স বা রপ্তানি বাড়বে, এ কথা বলা যায় না। তার মানে, এ পার্থক্য অনেকটা দীর্ঘস্থায়ী। ইউএস ডলারে যেভাবে ইন্টারেস্ট রেট বাড়িয়েছে, তাতে সারা বিশ্বের কারেন্সি এখন ইউএস ডলারের বিপরীতে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
ডলারের বাজারের অস্থিরতা সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এটা কঠিন কথা, আগামীকাল কী হবে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতেও শেষ বলে কোনো কথা নেই। ডিমান্ড ও সাপ্লাইয়ের ওপর বাজার নির্ভর করে। তবে যেভাবে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, তার সুফল আশা করি পাওয়া যাবে। একটা পর্যায়ে হয়তো এই অবস্থায় স্থির হতে পারে। কারণ রপ্তানি আয় বাড়ছে, প্রবাসী আয়ও বাড়ছে। এখন যে পর্যায়ে রয়েছে, সেটা অস্বাভাবিক বলে কিছু নয়। কারণ ভারতে ১১ শতাংশ, পাকিস্তানে ২০ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। আমাদের বেড়ে ৯২ টাকা পার হয়েছে।
আমদানি ব্যয় কীভাবে কমানো সম্ভব, বাংলাদেশ ব্যাংক এ বছরে কী পরিমাণ ডলার বিক্রি করেছে? এর উত্তরে তিনি বলেন, যেহেতু আমদানি বেশি হচ্ছে তাই দেশের উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি কমাতে হবে। এ পর্যন্ত ৮ বিলিয়ন ডলার ৯২ টাকা ৯৫ পয়সা দরে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।রি-এমএস/ইভূ