পুতিনকে জিততে দেবে না জি-৭

‘পুতিনকে অবশ্যই জিততে দেওয়া হবে না’-বিশ্বের শীর্ষ শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-এর তিন দিনের সম্মেলনের শেষ দিনের বিবৃতিতে এ হুমকি দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার জার্মানির শ্লস এলমাও হোটেলের সংবাদ সম্মেলনে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ আরও বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আরও অর্থ লগ্নি করবে জোটের দেশগুলো। আমরা প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ঠেকাতে এই যুদ্ধের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক খরচ চালিয়ে যেতে সংকল্পবদ্ধ।’ রুশ সোনার ওপর আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরোপেও একমত হয়েছে গোষ্ঠীটি।

খাদ্য মজুত ছাড়ের আহ্বান : রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট খাদ্য সংকট থেকে বাঁচতে বড় আকারে খাদ্য মজুত রয়েছে বিশ্বের এমন দেশ ও কোম্পানিগুলোকে মজুত ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জি-৭ নেতারা। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ‘বেসরকারি খাতে খাদ্য মজুত বাজারব্যবস্থাকে বিকৃত করে। তাই এই অনুশীলন থেকে সরে যেতে আমরা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই।’ বিবৃতিতে বলা হয়, সব দেশকেই খাদ্যের অত্যধিক মজুত এড়িয়ে যেতে হবে। চূড়ান্ত বিবৃতিতে জি-৭ নেতারা বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মোকাবিলায় অতিরিক্ত সাড়ে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এদিকে বৈশ্বিক তাপ মোকাবিলায় ইচ্ছুক দেশগুলো নিয়ে বছরের শেষ নাগাদ একটি ‘ক্লাইমেট ক্লাব’ চালু করবে জি-৭ জোট। সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সাধন ও প্রচেষ্টার গতি বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়। ক্লাবটি প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দেশগুলোর জন্য উন্মুক্ত থাকবে- যাদের লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখা এবং ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জন করা। এএফপি।

বাভারিয়ান আল্পসে সাতটি ধনী দেশ গ্রুপের তিন দিনের শীর্ষ সম্মেলন শেষে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একমত হন নেতারা। এ প্রস্তাবনায় নেতৃত্ব দেন শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক ওলাফ শলৎজ। তিনি বলেন, ‘এটি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জলবায়ুবিষয়ক কর্মকাণ্ড ও উদ্যোগকে ত্বরান্বিত করবে।’ এলমাউ ক্যাসেলে শীর্ষ সম্মেলন শেষে জার্মান চ্যান্সেলর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একমত যে আমাদের জলবায়ু লক্ষ্য অর্জনের জন্য আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে ক্লাবটি। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, আমরা একে অপরের বিরুদ্ধে কাজ করব না এবং একে অপরের থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করব না।’

‘বাজার-বিকৃতি’র জন্য চীনের নিন্দা : মঙ্গলবার জি-৭ নেতারা চীনের ‘অ-স্বচ্ছ এবং বাজার-বিকৃত’ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অনুশীলনের নিন্দা করেছেন। এক বিবৃতিতে এর পাশাপাশি চীনের ওপর ‘কৌশলগত নির্ভরশীলতা’ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নেতারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘকাল ধরে তার বাণিজ্য অনুশীলনের বিষয়ে চীনের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ এবং ভ্লাদিমির পুতিন থেকে নিজেকে দূরে রাখতে বেইজিংয়ের অস্বীকৃতি ইতোমধ্যে রপ্তানি জায়ান্ট জার্মানিসহ অন্য দেশগুলোকে এশিয়ান জায়ান্টের ওপর তাদের অর্থনৈতিক নির্ভরতা পুনর্বিবেচনা করতে প্ররোচিত করেছে। বাভারিয়ান আল্পসে তিন দিনের শীর্ষ সম্মেলনের পরে তাদের সমাপনী বিবৃতিতে, জি ৭ নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা চীনের ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরতা থেকে নিজেদের বের করে আনতে চাইবেন।

বাইডেনের স্ত্রী, কন্যার ওপর নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের স্ত্রী এবং মেয়েসহ ২৫ মার্কিন নাগরিকের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে রাশিয়া। মঙ্গলবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, রাশিয়ার রাজনীতিক এবং প্রখ্যাত ব্যক্তিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগত নিষেধাজ্ঞা সম্প্রসারণের প্রতিক্রিয়ায় এই সিদ্ধান্তু নেওয়া হয়েছে।

মস্কো বলেছে, ২৫ মার্কিন নাগরিককে তাদের ‘স্টপ লিস্টে’ যুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের রাশিয়ায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের স্ত্রী জিল বাইডেন এবং তাদের মেয়ে রয়েছে।

এ ছাড়াও তালিকায় বেশ কয়েকজন মার্কিন সিনেটর রয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন মায়ানের সিনেটর সুসান কলিন্স, কেন্টাকির সিনেটর মিচ ম্যাককনেল, আইওয়া সিনেটর চার্লস গ্রেসলি, নিউ ইয়র্কের ক্রিস্টেন গিলিব্রান্ড।

এ ছাড়াও রাশিয়ার তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক, গবেষক এবং মার্কিন সরকারের বেশ কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তা। এএফপি

LEAVE A REPLY