অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ বছর পর আদমশুমারির ফল প্রকাশ করা হয়েছে। সেই ফলাফলে দেশটিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের একটি চিত্র উঠে এসেছে। বিবিসি জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২১ সালের জরিপে জনসংখ্যা বেড়েছে দুই কোটি ৫৫ লাখ। সে দেশের বাসিন্দাদের গড় আয় বেড়েছে।
আদমশুমারিতে এমন কিছু প্রবণতাও প্রকাশ করা হয়েছে; যা সেই দেশের ভবিষ্যত গঠনে সাহায্য করবে।
ধর্ম পালন
প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যার অর্ধেকেরও কম খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সে দেশে বর্তমানে ৪৪ শতাংশ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মের। অস্ট্রেলিয়ান ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস (এবিএস) জানিয়েছে, ৫০ বছর আগেও খ্রিস্টানদের সংখ্যা ছিল ৯০ শতাংশ।
দেশটির ৩৯ শতাংশ বাসিন্দা ধর্ম বিশ্বাসী নয় বলে জানিয়েছেন। এর আগে এই হার ছিল ৯ শতাংশ। দেশটিতে মুসলিম ও হিন্দুদের সংখ্যা দ্রুত হারে বাড়ছে। তবে সেটা মোট জনসংখ্যার মাত্র তিন শতাংশ।
বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠা
আধুনিক অস্ট্রেলিয়া গড়ে তুলেছে অভিবাসীরা। বর্তমানে দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই অভিবাসী। তবে করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে দেশটিতে অভিবাসন প্রত্যাশীর সংখ্যা কমে গেছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ লাখের বেশি অভিবাসী অস্ট্রেলিয়ায় গেছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই ভারতীয়। জন্ম হারের দিক থেকে চীন ও নিউজিল্যান্ডকে পেছনে ফেলে শীর্ষ অবস্থানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত।
২০১৬ সালের পর থেকে পাঁচ জনের মধ্যে একজন অস্ট্রেলীয় নাগরিক নিজ বাড়িতে চীনা কিংবা আরবি ভাষায় কথা বলছে। যা ইংরেজির থেকে বেশি।
আদিবাসীদের সংখ্যা বাড়ছে
গত আদমশুমারির সময় থেকে অস্ট্রেলীয় আদিবাসীর সংখ্যা এক চতুর্থাংশ বেড়েছে। আদিবাসীদের মধ্যে যেভাবে জন্মহার বেড়েছে, ঠিক সেভাবেই তারা নিজেদের পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে।
সে দেশে মোট আদিবাসীর সংখ্যা আট লাখ ১২ হাজার ৭২৮ জন। যা মোট জনসংখ্যার তিন দশমিক দুই শতাংশ।
আদমশুমারির তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশটিতে ১৬৭টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে। যার মধ্যে ৭৮ হাজার আদিবাসী তরেস স্ট্রেইট আইল্যান্ড ভাষায় কথা বলে।
১৭৮৮ সালে ইউরোপীয়রা প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় আসে। ওই সময় দেশটিতে তিন লাখ ১৫ হাজার আদিবাসী থাকতো বলে ধারণা করা হয়। তবে রোগ, স্থানচ্যুতি ও সহিংসতার কারণে তাদের জনসংখ্যা কমতে থাকে।
তরুণ প্রজন্ম
জরিপের ফলাফলে তরুণ প্রজন্মকে অস্ট্রেলিয়ার উন্নতির আরেক চাবিকাঠি হিসেবে বলা হচ্ছে। ১৯৮০-৯০ এর দশকে জন্ম নেওয়া তরুণ প্রজন্ম এখন দেশটিতে সর্বোচ্চ। যা মোট জনসংখ্যার ২১ দশমিক পাঁচ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন প্রজন্মের জন্য নীতির অনেক পরিবর্তন হচ্ছে।
যাযাবর জীবনে আগ্রহ
অস্ট্রেলিয়ার বেশিরভাগ মানুষ যাযাবরের মতো জীবনযাপনে আগ্রহী হয়ে উঠছে। ২৫ বছর আগের চেয়ে বর্তমান আবাসস্থলের খরচ অনেকাংশে বেড়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার শহরগুলোতে বাড়ি কিনে বাস করা খুবই কষ্টসাধ্য। এর মূলে রয়েছে দাম বৃদ্ধি। এতে করে যাযাবরের মতো জীবনে আগ্রহী হয়েছে অস্ট্রেলীয়রা।
সূত্র: বিবিসি।