ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ।
চীনকে এই মুহূর্তে প্রতিপক্ষ মনে না করলেও ভবিষ্যতের জন্য চ্যালেঞ্জ ভাবছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো। রাশিয়াকে নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য বড় হুমকি ঘোষণার পর চীনকে নিয়ে প্রথমবারের মতো এ ধরনের মূল্যায়নে একমত হলো জোটভুক্ত দেশগুলো।
স্পেনের মাদ্রিদে বুধবার থেকে শুরু হওয়া ন্যাটোর বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে এই মূল্যায়ন এসেছে। জোটের গৃহীত নতুন এক ‘কৌশলগত ধারণা তথা নীলনকশায়’ চীনকে নিয়ে এই দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে।
সর্বশেষ এ রকম কৌশলগত ধারণার ওপর সদস্য দেশগুলো ২০১০ সালে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় চীন সম্পর্কে আগ্রাসী কোনো মূল্যায়ন ছিল না।
ন্যাটোর নতুন এ মূল্যায়নের কড়া সমালোচনা করেছে বেইজিং। গতকাল বৃহস্পতিবার তারা এই মূল্যায়নকে ‘সম্পূর্ণভাবে নিরর্থক’ আখ্যা দেয়। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজান বলেন, ‘ন্যাটোর তথাকথিত নতুন কৌশলগত ধারণার নথি বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে সাদা ও কালোর মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করার মাধ্যমে চীনা পররাষ্ট্রনীতিকে কালিমা লিপ্ত করেছে। ’ এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘তথাকথিত চীনা হুমকি নিয়ে ন্যাটোর বাগাড়ম্বর সম্পূর্ণভাবে নিরর্থক। ’
মাদ্রিদে দুই দিনবাপী এ সম্মেলনে বেইজিংয়ের নীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, চীনা নীতি ন্যাটোর স্বার্থ, নিরাপত্তা ও মূল্যবোধের প্রতি চ্যালেঞ্জ। জোটটি এও মনে করে, ন্যাটোর জন্য রাশিয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সরাসরি নিরাপত্তা হুমকি।
ইউক্রেন যুদ্ধের পর ন্যাটো জোটের প্রথম শীর্ষ সম্মেলনে ওই বিষয়ে ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বুধবার বলেন, বেইজিংয়ের দ্বারা সৃষ্ট হুমকিগুলোকে ভবিষ্যত্ কৌশলের একটি নীল নকশায় অন্তর্ভুক্ত করতে সদস্য দেশগুলো প্রথমবারের মতো সম্মত হয়েছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে প্রধান আলোচ্য ইস্যু। তবে এর মধ্যে চীনও একটি জায়গা দখল করে নিয়েছে। এ বিষয়ে স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘আমরা এখন কৌশলগত প্রতিযোগিতার যুগে রয়েছি। চীন পরমাণু অস্ত্রসহ তার বাহিনীকে যথেষ্ট এগিয়ে নিচ্ছে, তাইওয়ানসহ অন্য প্রতিবেশীদের ধমকাচ্ছে। ’
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও এশিয়ায় চীনা প্রভাব বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগের কারণে ওই সব অঞ্চলের দেশ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া প্রথমবারের মতো এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছে। আমন্ত্রিত দেশ হিসেবে প্রথমবারের মতো ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজি সতর্ক করেন, বেইজিং ও মস্কোর মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালীকরণ সব গণতান্ত্রিক দেশের জন্য ঝুঁকির।
ব্রিটিশ প্রেসিডেন্ট বরিস জনসন বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন চীনের তাইওয়ানের ওপর সম্ভাব্য পদক্ষেপের ওপর বাড়তি নজর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে।
এর আগে সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউরোপে বিস্তৃত সামরিক পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। ইউরোপে জল, স্থল ও আকাশপথে বড় ধরনের সমর পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। স্ক্যান্ডিনেভীয় অঞ্চলের দুই দেশ সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে ন্যাটো জোটে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শুরু থেকে এর বিরোধিতা করছে মস্কো।
বাড়তি সেনা মোতায়েন নিয়ে জো বাইডেনের ঘোষণার পর ওয়াশিংটনের সম্ভাব্য পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেন যুদ্ধের পর প্রথম বিদেশ সফরে তিউনিশিয়া গিয়ে পুতিন বলেন, আধিপত্য বিস্তারের ‘স্বার্থ রক্ষা করতে’ ইউক্রেনের জনগণকে ঢাল বানিয়েছে ন্যাটো। ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর নেতারা তাঁদের আধিপত্য ও সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা জাহির করতে চান।
সূত্র : গার্ডিয়ান, এএফপি