রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার মামলায় সাত জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর ডেথ রেফারেন্সের শুনানির জন্য পেপারবুক প্রায় দুই বছর আগে প্রস্তুত হয়েছে। তবে এখনো শুনানির জন্য হাইকোর্টের বেঞ্চ নির্ধারণ হয়নি।
এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, আব্দুস সবুর খান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন। তাঁরা কারাগারের কনডেমড সেলে আছেন।
২০১৬ সালের ১ জুলাই ওই জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। পাঁচ তরুণ জঙ্গি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ঢুকে পড়ে হলি আর্টিজানে। তাঁরা ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করেন। হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে কমান্ডো অভিযানে ওই পাঁচ জঙ্গি নিহত হন।
ওই হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার রায়ে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর বিচারিক আদালত সাত জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। খালাস দেওয়া হয় মিজানুর রহমানকে। রায় ঘোষণার পর নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য মামলার ডেথ রেফারেন্স ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত থেকে হাইকোর্টে আসে। ২০২০ সালের আগস্টে পেপারবুক প্রস্তুত হয়ে সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা পড়ে। তবে এখনো তা শুনানির জন্য হাইকোর্টের বেঞ্চ নির্ধারণ হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, পেপারবুক চূড়ান্ত হওয়ার পর শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডেথ রেফারেন্সের এই মামলাটি শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ প্রস্তুত। পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়েছে। যেহেতু এটি স্পর্শকাতর একটি মামলা, তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে অবকাশের পর আবেদন জানানো হবে। ’
পেপারবুকের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পেপারবুক প্রস্তুত আছে। কিছু আনুষঙ্গিক কাজ হচ্ছে। ওই কাজগুলো শেষ হলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব। ’
গুলশান হামলার তদন্তে মোট ২১ জনকে চিহ্নিত করা হয়। তাঁদের মধ্যে জীবিত অবস্থায় গ্রেপ্তার আটজনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত পাঁচ তরুণ রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাজ ইসলাম, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম পায়েল মারা যাওয়ায় তাঁদের আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
নব্য জেএমবির প্রধান সমন্বয়কারী তামিম চৌধুরীসহ সারোয়ার জাহান, তানভীর কাদেরী, জাহিদুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম মারজান, বাশারুজ্জামান, রায়হানুল কবির ও মিজানুর রহমান (ছোট মিজান) হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে তদন্তে উঠে আসে। তবে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হওয়ায় তাঁরা বিচারের আওতা থেকে বাদ পড়েন।
বিচারিক আদালত এই মামলার রায়ে আসামিদের মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন। আদালত বলেন, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মধ্য দিয়ে আসামিরা জঙ্গিবাদের উন্মত্ততা, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার জঘন্য বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। সাজার ক্ষেত্রে তাঁরা কোনো অনুকম্পা বা সহানুভূতি পেতে পারেন না।