নির্ধারিত মেয়াদে বাস্তবায়িত হয়নি গুরুত্বপূর্ণ ৫টি উন্নয়ন প্রকল্প। ফলে সময়ের সঙ্গে বেড়েছে ব্যয়ও। মূল অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে বেশি খরচ হবে ৮২১৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। প্রকল্পগুলোর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৩২৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। বিভিন্ন পর্যায়ে সংশোধনীর মাধ্যমে ২১ হাজার ৫৪৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে এ অঙ্ক আরও বৃদ্ধির শঙ্কা আছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া চলমান প্রকল্পগুলোতে ভালো দিকের পাশাপাশি ৩১ ধরনের দুর্বলতা ও ২২ ধরনের ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন চিত্র।
প্রকল্পগুলো হলো-বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্প। এছাড়া সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২ : এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ। উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কে দীর্ঘ সেতু নির্মাণ (এলবিসি)। জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমি প্রতিষ্ঠা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান চত্বরে ১টি বহুতল অফিস ভবন নির্মাণ।
পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী যুগান্তরকে বলেন, অনেক সময় প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির যৌক্তিক কিছু কারণও থাকে। তবে এ কথা সত্য, যে কোনো প্রকল্পই বাস্তবায়নে দেরি হয়। এতে ব্যয় বাড়বেই। যদিও প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা অনেক সময় বলেন, ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেক মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু এ কথাটা ঠিক নয়। কারণ মেয়াদ বাড়লে আনুষঙ্গিক অনেক খাতে ব্যয় বাড়বেই। এছাড়া সময়ের মধ্যে প্রকল্প শেষ না হলে এর থেকে যে সুবিধা পাওয়ার কথা তা যথাসময়ে পাওয়া যায় না। এ রকম আরও নানা সমস্যা হতে পারে।
আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পটির মোট ব্যয় ছিল ৭১৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। পরে তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে বাড়তি খরচ বেড়েছে ১ হাজার ৫৪৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এদিকে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ ছিল ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। কিন্তু চার দফায় সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২ : এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। পরে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ৪ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় করা হয়েছে ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের আগস্টের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু এতে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম সংশোধনীতে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। শুরু থেকে গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৩৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এছাড়া বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশ। দুটি প্রকল্পের অনুমোদন ও সংশোধনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হচ্ছে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ। এ বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ রোববার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্প দুটির গতি বৃদ্ধির জন্য অনেকবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। শুরুতেই বেশ কিছু জটিলতা থাকায় পরে বাস্তবায়ন পর্যায়ে দেরি হয়েছে।
উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কে দীর্ঘ সেতু নির্মাণ (এলবিসি) শীর্ষক প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৬২৮ কোটি টাকা। পরে তিনবার সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২ হাজার ২৮৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। মূল ব্যয়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৬৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। এছাড়া অনুমোদনের সময় এটির মেয়াদ ছিল ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে বারবার সংশোধন করে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বাড়তি সময় বেড়েছে ১৪২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এদিকে শুরু থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় খরচ হয়েছে ২১৩৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমি প্রতিষ্ঠা শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মূল ব্যয় ছিল ২৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। পরে দুবার সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় ২৩৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয় ২৫৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এছাড়া বাস্তবায়ন মেয়াদ ছিল ২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু পরে চারবার মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। গত মে মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ৫০ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৭০ শতাংশ। এছাড়া শুধু ভবনের বাস্তব অগ্রগতি ৮০ শতাংশ হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান চত্বরে ১টি বহুতল অফিস ভবন নির্মাণ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ৬৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। পরে ১৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৭৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত। সর্বশেষ মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত করা হয়। গত মে মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির অনুকূলে ব্যয় হয়েছে ৬০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, আর্থিক অগ্রগতি ৭৪ দশমিক ১২ শতাংশ। এছাড়া বাস্তব অগ্রগতি দেখানো হয়েছে শতভাগ।