সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তিতে ন্যাটোতে তুরস্কের অবস্থান দৃঢ়

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান। ছবি: এএফপি

মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে সদস্য পদ নিশ্চিত করতে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড শেষ মুহূর্তে তুরস্কের সঙ্গে চুক্তিতে মতৈক্যে পৌঁছেছে। তবে এটা শুধু দুই পক্ষের সমঝোতা নয়। এই ত্রিদেশীয় চুক্তির মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে গেছে, রাশিয়া হুমকি হয়ে দাঁড়ানোর কারণে পশ্চিমাদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে ন্যাটোর একমাত্র মুসলিমপ্রধান দেশ তুরস্ক।

তুরস্ক পশ্চিমা বিশ্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কি না, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ নিয়ে বিতর্ক চলছিল।

তিন বছর আগে রাশিয়ার কাছ থেকে তুরস্ক ক্ষেপণাস্ত্র নেওয়ায় এবং ইউক্রেনে রুশ হামলার পরও মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করায় সে বিতর্ক আরো উসকে ওঠে।

মে মাসে তুরস্ক জানায়, তাদের কিছু দাবি পূরণ না করলে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদানের বিরুদ্ধে তারা ভেটো দেবে। এমন বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই মনে করছিলেন, ন্যাটোতে তুরস্ক নিজস্ব অবস্থান তৈরি করছে। তবে দুই নর্ডিক দেশের সঙ্গে আংকারার গত সপ্তাহের চুক্তির পর মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানকে জোটের একজন অনুগত সদস্য হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

কাতার ইউনিভার্সিটির ইবনে খালদুন সেন্টার ফর মানবিক ও সমাজবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক আলী বাকেল বলেন, ‘চুক্তিটি সুইডেন, ফিনল্যান্ড এবং সামগ্রিকভাবে ন্যাটোর সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক ও ঐতিহাসিক ঘটনা। এটি ন্যাটোর সংহতি ও সম্প্রসারণে তুরস্কের সমর্থন প্রকাশ করছে। ’

১৯৫২ সালে ন্যাটো সম্প্রসারণের প্রথম ধাপে তুরস্ক এই জোটে যোগ দেয়। সে সময় তুরস্ক ও নরওয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী দেশ ছিল। ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পরই দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক বাহিনী তুরস্কের, যা দক্ষিণে ন্যাটোকে শক্ত অবস্থান দিয়েছে।

সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও তুরস্কের ত্রিদেশীয় চুক্তি ইতিবাচক হলেও ন্যাটোর চ্যালেঞ্জ শেষ হয়ে যায়নি। চুক্তির শর্ত পূরণ না হলে দুই নর্ডিক দেশের ন্যাটোতে যোগদান আটকে দেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন এরদোয়ান।

আংকারার জার্মান মার্শাল ফান্ডের পরিচালক ওজগুর উনলুহিসারসিকলি বলেন, ত্রিদেশীয় চুক্তিতে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড থেকে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের প্রত্যর্পণের শর্ত দিয়েছে তুরস্ক। তবে দেশ দুটির সঙ্গে তুরস্কের সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞায় পার্থক্য রয়েছে। তুরস্ক যে ব্যক্তিকে সন্ত্রাসী বলে মনে করে, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের কাছে তারা হয়তো সন্ত্রাসী বিবেচিত না-ও হতে পারে। তুরস্ক তাদের ফেরত পাঠাতে বললে তা প্রত্যাখ্যান করাও হতে পারে।

ইউরোপ এখন স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর থেকে সবচেয়ে বড় হুমকির মুখোমুখি। এ সময় ন্যাটোর ভেতরকার সংকট এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে তুরস্ক।  

বিশ্লেষকদের মতে, ন্যাটোতে নিজেদের অবস্থান মজবুত করার পর তুরস্ক এখন সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি মিত্রদের সায় চাইবে।

LEAVE A REPLY