চাপের মুখে বরিস জনসন, পদত্যাগের আহ্বান

‘পার্টিগেট কেলেঙ্কারির’ রেশ কাটতে কাটতেই আবারো চাপের মুখে পড়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। মঙ্গলবার গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রীর পদত্যাগের পর বুধবার দুপুর (স্থানীয় সময়) পর্যন্ত তাঁর সরকার থেকে জুনিয়র মন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ সহযোগীসহ প্রায় ৩০ জন পদত্যাগ করেছেন। মাসখানেক আগে দলীয় অনাস্থায় টিকে যাওয়ার পর জনসন এবার নতুন সংকটে পড়লেন।

যৌনসংশ্লিষ্ট অপরাধে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে সরকারের একটি পদে নিয়োগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন জনসন।

বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাতকারে সে বিষয়ে ভুল স্বীকারের পরপরই

অর্থমন্ত্রী (চ্যান্সেলর) রিশি সুনাক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ১০ মিনিটের ব্যবধানে পদত্যাগ করেন।

দুই মন্ত্রীর পদত্যাগপত্রে বরিস জনসনের নেতৃত্বের সমালোচনা করা হয়। মন্ত্রীদের পাশাপাশি কনজারভেটিভ পার্টির (রক্ষণশীল) অনেক আইনপ্রণেতা জনসনকে পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বাকি ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা বুধবার পর্যন্ত তার পক্ষে রয়েছেন।

সব দিক থেকে পদত্যাগের আহ্বানের মধ্যেও সরকারকে চালিয়ে নিতে জনসনের মনোভাব অটুট দেখা গেছে। এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী পদে নাদিম জাহাভিরকে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া চিফ অব স্টাফ স্টিভ বার্কলেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদে বসিয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি ব্রিটিশ আইনপ্রণেতা (এমপি) ক্রিস পিঞ্চারকে সরকারের একটি পদে নিয়োগ করেন জনসন। অতীতে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। জনসন পরে ক্ষমা চেয়ে বলেন, পিঞ্চারকে নিয়োগ করা বাজেরকম ভুল ছিল। অভিযোগ সম্পর্কে তিনি জানতেন না। কিন্তু যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমে বরিস জনসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন দাবি করেছেন, পিঞ্চারের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে তিনি জানতেন।

পদত্যাগের পর বুধবার সাজিদ জাভিদ হাউস অব কমনসে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি এই সিদ্ধান্তে পৌছেছি যে, সমস্যাটি শীর্ষ থেকে হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, এর কোনো পরিবর্তন হবে না। এর অর্থ হলো, পরিবর্তনটি করার দায়িত্ব আমাদের সবার। ’ এসময় পদত্যাগী স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজের সাবেক সহকর্মীদের তাঁর পথ অনুসরণের আহ্বান জানান। জনসনের শাসনামলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি আরো বলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে, আর না। ’

চাপের মুখে থাকা রক্ষণশীল সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন লেবার পার্টির নেতা কেয়ার স্টার্মার। মন্ত্রীদের পদত্যাগকে ‘ডুবন্ত জাহাজ থেকে ইঁদুরের পালানোর’  তুলনা দিয়েছেন তিনি।

জনসনের নেতৃত্বাধীন সরকার থেকে পদত্যাগ করা মন্ত্রীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী উইল কুইন্স, বিচারমন্ত্রী ভিক্টর অ্যাটকিন্স, সংস্কৃতিমন্ত্রী জুলিয়া লোপেজ, ব্যবসা বিষয়ক মন্ত্রী লি রাউলি, শিক্ষামন্ত্রী অ্যালেক্স বার্গার্ট, আবাসনমন্ত্রী স্টুয়ার্ট অ্যান্ড্রু, সলিসিটর জেনারেল অ্যালেক্স চাকসহ আরো বেশ কয়েকজন। মন্ত্রিপরিষদের সহযোগী পদমর্যাদার লরা ট্রট, জোনাথন গুলিস, সাকিব ভাট্টি, নিকোলা রিচার্ডস এবং আরো কয়েকজন পদ ছেড়েছেন।

করোনাভাইরাস মহামারির সময় লকডাউনের বিধি ভেঙে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে পার্টি আয়োজনের খবর প্রকাশ পেলে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন বরিসন জনসন। সরকারি কর্মকর্তা স্যু গ্রের নেতৃত্বে ওই ঘটনার তদন্ত হয়। এতে দেখা যায়, পার্টিগুলো সম্পর্কে জনসন অবহিত ছিলেন।

‘পার্টিগেট’ কেলেঙ্কারির তদন্ত প্রতিবেদন সামনে আসার পর রক্ষণশীল আইনপ্রণেতাদের নীতি-নির্ধারণী সংস্থা ‘১৯২২ কমিটি’ সম্প্রতি জনসনের বিরুদ্ধে দলীয় ফোরামে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল। অনাস্থা ভোটে উের গিয়ে সেবার প্রধানমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখতে সমর্থ হন তিনি। এমপিদের একটি অংশ তাকে সমর্থন না দিলেও ওই সময় মন্ত্রিসভার প্রায় সব সদস্য তাঁকে সমর্থন দেন। কিন্তু সর্বশেষ বিতর্কে মন্ত্রিসভার অনেকেই তাঁর পাশে নেই।

এ অবস্থায় সরকার পরিচালনায় জনসন অবিচল মনোভাব দেখালেও ব্রিটিশ আইনপ্রণেতা পল হোমস মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পদ ছাড়বেন। পার্টিগেট কেলেঙ্কারির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকার পদত্যাগ করা এই আইনপ্রণেতা বলেন, জনসনের চলে যাওয়ার সময় হয়েছে এবং দেশে ‘স্বচ্ছ নেতৃত্বের’ প্রয়োজন রয়েছে।  

জনসনকে সরানো যাবে?

রক্ষণশীল দলের ‘১৯২২ কমিটির’ নিয়ম অনুযায়ী, একবার অনাস্থা আনার ১২ মাসের মধ্যে নতুন অনাস্থা প্রস্তাব আনা যায় না। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এই নিয়ম পরিবর্তনযোগ্য। আগামী সপ্তাহে রক্ষণশীল দলের এমপিরা ওই কমিটির নতুন নির্বাহী নিয়োগ করতে পারেন। নতুন নির্বাহী নিয়োগের পর রক্ষণশীলরা তাদের নেতৃত্ব থেকে জনসনকে সরিয়ে দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তার পক্ষে আর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা সম্ভব হবে না। সূত্র: বিবিসি, গার্ডিয়ান

LEAVE A REPLY