রুশ দখলদারিত্বের অবসান ও জয় চায় ইউক্রেনের মুসলিমরা

পূর্ব ইউক্রেনের কস্টিয়ানটিনিভকা শহরের কাছে রাশিয়ার হামলার সম্প্রতি জোরদার হয়েছে। সেই শহরে এক সাক্ষাৎকারে ৪৩ বছর বয়সী মুফতি সাইদ ইসমাহিলভ বলেছেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি- আর পালাব না। বরং লড়াই করব।

গত বছরের শেষ দিকে যখন রাশিয়ার আক্রমণের আশঙ্কা জোরদার হচ্ছিল, ওই সময় ইসমাহিলভ স্থানীয় প্রতিরক্ষা ব্যাটালিয়নের সঙ্গে প্রশিক্ষণ শুরু করেন।

একজন মুফতি হিসেবে তখন তিনি ১৩ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্কতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইসমাহিলভ ইতোমধ্যে রাশিয়ার আক্রমণে একবার ২০১৪ সালে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। ওই সময় মস্কোপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তার শহর দখল করেছিল।

ওই সময় তিনি কিয়েভের শহরতলীয় শান্ত শহর বুচাতে বসবাস শুরু করেন। আট বছর পর পুনরায় মস্কোর হামলার প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে বুচা। এই শহরে রুশ নৃশংসতা বিশ্বকে স্তব্ধ করেছে। তার কাছে মনে হয়েছে, রাশিয়ার দখলদারিত্ব যেন কোনোদিন শেষ হওয়ার নয়।

রণক্ষেত্রে বা রাশিয়ার অবরোধ করা শহরে একজন সামরিক গাড়িচালক কাজ করতে শুরু করেন তিনি। মূলত আহতদের সরিয়ে নেওয়া কাজ করেন। এ কাজে তাকে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে গাড়ি চালাতে হয়। পাশাপাশি আহতদের মানসিক ও আবেগী সহায়তাও দিতে হয়। ইসমাহিলভ তার নতুন দায়িত্বকে আল্লাহর পথে কাজের অংশ হিসেবে মনে করেন।

তিনি বলেন, আপনি যদি ভীত না হন এবং এই কাজ করতে পারেন, তাহলে তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মহানবী (সা.) নিজেই ছিলেন একজন যোদ্ধা। ফলে আমি তার দেখানো পথ অনুসরণ করেছি। আমি পালব না বা লুকিয়ে থাকব না। অন্যদের থেকে আমি নিজের মুখ ঘুরিয়ে নেব না।

গতকাল শনিবার সে দেশে ঈদুল আজহার নামাজ আদায়ের জন্য জড়ো একডজনের বেশি মুসলিমদের মধ্যে একজন ছিলেন ইসমাহিলভ।   ইসমাহিলভ জানান, অঞ্চলটিতে প্রায় ৩০টি মসজিদ ছিল। কিন্তু এখন সেগুলো রুশ সেনাবাহিনীর দখলে।

গত সপ্তাহে লুহানস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় প্রতিরোধের শেষ গুরুত্বপূর্ণ শহর লিসিচানস্ক দখল করে রাশিয়া। লুহানস্ক অঞ্চলের গভর্নর শনিবার বলেছেন, রুশ সেনারা এখন প্রতিবেশী দোনেৎস্ক অঞ্চলের দিকে এগোতে চেষ্টা করছে।

অর্থোডক্স খ্রিস্টান অধ্যুষিত ইউক্রেনে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এক শতাংশেরও কম। ক্রিমিয়াতে অনেক মুসলিমের বসবাস। এটি ক্রিমিয়ান তাতারদের অঞ্চল। ২০১৪ সালে রাশিয়া অবৈধভাবে অঞ্চল দখল করে ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন করে। পূর্ব ইউক্রেনেও উল্লেখযোগ্য মুসলিম ধর্মালম্বী রয়েছেন। অর্থনৈতিক অভিবাসনের ফলে অনেক মুসলিম ডনবাস অঞ্চলে পাড়ি জমান। মূলত মাইন ও কারখানায় কাজের জন্য।   

২০১৪ সালের সংঘাত ক্রিমিয়া ও ডনবাস অঞ্চলের মুসলিমদের ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় সরে যেতে বাধ্য করে। এবারের আক্রমণ আবার তাদেরকে ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করছে। কস্টিয়ানটিনিভকা মসজিদটিতে স্থানীয় মুসলিমদের খাবার পরিবেশন করা হত। শনিবার খুব কম স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন। বেশিরভাগ দেশের পশ্চিমে পরিবার নিয়ে চলে গেছেন। এবারের ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে সেনা ও সামরিক চিকিৎসা ইউনিটের সদস্যদের অংশগ্রহণে।

ঈদের নামাজের খুতবায় ইসমাহিলভ বলেছেন, যুদ্ধের মাঝামাঝি এবারের ঈদের প্রতীকী তাৎপর্য রয়েছে। রাশিয়ার দখলকৃত ভূখণ্ডে বসবাসরত মুসলিমদের কথা মনে রাখতে বলেছেন তিনি। ওই এলাকাগুলোতে মুসলিমরা তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছেন এবং রুশ গোলাবর্ষণে বেশ কয়েকটি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। ২০১৪ সালের কথা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, দখলকৃত ভূখণ্ডে মুসলিমরা নিরাপদ নয়।

ইসমাহিলভ বলেন, অনেক আতঙ্ক রয়েছে। যুদ্ধ চলছে এবং দখলকৃত ভূখণ্ডে কী ঘটছে তা আমরা জানি না। মুসলিমরা কেমন অবস্থায় আছে, তা আমাদের জানা নেই।

ইসমাহিলভ জানান, তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের জয় এবং দখলকৃত ভূখণ্ডের মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেছেন। তিনি বলেন, আমরা প্রার্থনা করি- মুসলিম স্বদেশীরা যেন নিরাপদ থাকে, আমাদের পরিবারগুলো যেন পুনরায় মিলিত হয়, নিহত মুসলিমরা যেন বেহেশতে যায়।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, আল আরাবিয়্যাহ

LEAVE A REPLY