আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচার প্রতিবেদন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী সপ্তাহে মানব পাচার প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। বিশ্বের ১৮৮ দেশের মানব পাচার পরিস্থিতির ওপর এই প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতিও উল্লেখ থাকবে।

এতে অপরাপর দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশের মানব পাচার পরিস্থিতির ওপর আলাদা অধ্যায় থাকবে। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, প্রতিবছর বিশ্বের দুই কোটি ৫০ লাখ মানুষ পাচারের শিকার হন। তাদের কাছ থেকে পাচাকারীরা বছরে ১৫০ বিলিয়ন ডলার আয় করে।

কংগ্রেস ২০০০ সালে ট্রাফিকিং ভিকটিম প্রটেকশন অ্যাক্ট পাশ করে। তার আওতায় প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র ‘ট্রাফিকিং ইন পারসন’ (টিআইপি) প্রতিবেদন প্রকাশ করে যা মানব পাচার প্রতিবেদন নামে পরিচিত।

টিআইপি প্রতিবেদনে তিনটি স্তর তথা টায়ার রয়েছে। প্রথম টায়ারে থাকা মানে মানব পাচার প্রতিরোধে গৃহীত সর্বনিম্ন মান নিশ্চিত আছে। দ্বিতীয় টায়ার মানে সর্বনিম্ন মান নিশ্চিতের চেষ্টা করা হচ্ছে। তৃতীয় টায়ার মানে হলো, মানব পাচার প্রতিরোধে সর্বনিম্ন মান নিশ্চিত করার যথেষ্ট চেষ্টা নেই।

আরেকটি হলো, টায়ার দুইয়ের ওয়াচ লিস্ট। ওয়াচ লিস্টে থাকা মানে হলো, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তৃতীয় টায়ারে নেমে যাওয়া।

কোনো দেশের মানব পাচার তালিকায় অবস্থান তৃতীয় টায়ারে থাকলে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। দেশটিতে মানবিক, বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ করা হতে পারে। এটা খুবই সিরিয়াস বিষয়। মানব পাচার প্রতিবেদনে তৃতীয় টায়ারে নেমে গেলে দেশটির পরিণতি খুবই খারাপ হতে পারে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই শুধু ব্যবস্থা গ্রহণ করে এমন নয়।

বরং যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি তার বলয়ের দেশগুলোও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা কমিয়ে দিতে পারে। ফলে মানব পাচার পরিস্থিতির অবনতি মানে হলো বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়া।

মানব পাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা স্বস্তিদায়ক হলেও কয়েক বছর আগে অবস্থা খারাপ ছিল। ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে মানব পাচারসংক্রান্ত মার্কিন প্রতিবেদনে দ্বিতীয় টায়ারের ওয়াচ লিস্টে ছিল বাংলাদেশ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মার্কিন সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলে দ্বিতীয় টায়ারে উন্নীত হয় বাংলাদেশ।

তবে আগামী সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে টিআইপি প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে যাচ্ছে তাতে বাংলাদেশের অবস্থান কী দাঁড়ায় তা নিয়ে ঢাকায় ব্যাপক কৌতূহল দেখা দিয়েছে।

রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের বাসিন্দা হওয়ায় তাদের পাচার হওয়াকে বাংলাদেশের টিআইপি প্রতিবেদনে বিবেচনা করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তা বলেন, কক্সবাজার ও ভাসানচর থেকে রোহিঙ্গাদের পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালনের বিষয়টি অবশ্যই বিবেচ্য।

মার্কিন মানব পাচার প্রতিবেদন প্রস্তুতির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নাকি দেশগুলোর সঙ্গে আলাপ করে জানতে চাইলে ওই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ২০০০ সালের ভিকটিম প্রটেকশন অ্যাক্টের আওতায় এ আইন করা হলেও জাতিসংঘের বিভিন্ন চুক্তি ও কনভেনশনের সঙ্গে সঙ্গতি রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে মালয়েশিয়া সিন্ডিকেট ব্যবস্থা করায় অভিবাসন ব্যয় বেড়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ সরকার অভিবাসন সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্যে উন্মুক্ত রাখার কথা বললেও মালয়েশিয়া সীমিত সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিয়েছে।

এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যোগাযোগ রাখছে কিনা জানতে চাইলে মার্কিন দূতাবাসের ওই কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টির প্রতি আমাদের নজর আছে। যদিও বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন ওই মার্কিন কর্মকর্তা। মানব পাচার প্রতিরোধে ইউএসএআইডি বাংলাদেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিওর সঙ্গে কাজ করে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, তাদের কার্যক্রমে ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বাংলাদেশ কয়েক বছর ধরে ওয়াচ লিস্টের বাইরে দ্বিতীয় টায়ারে রয়েছে।

LEAVE A REPLY