সংকট সমাধানের উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে : ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সৃষ্ট সংকট সমাধান করতে হলে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে রাজপথেই এর সমাধান হবে। আন্দোলনে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।

আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ওভারসিজ করসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ওকাব) ‘মিট দ্য ওকাব’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনকালীন পদ্ধতি পরিবর্তনের বিষয়ে সরকারকেই সংসদে আইন আনতে হবে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সংসদ আইন পাস করে পদত্যাগ করেছিল। সংসদ বাতিল করা হয়েছিল। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া ১১৬ আসনে বিরোধী দলে বসেছিলেন। বিএনপি সেই নির্বাচন মেনে নিয়েছিল। এটাই গণতন্ত্র। তাহলে এই সরকারের আপত্তি কোথায়?

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, সংবিধান অনেকবার পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৯০ সালে হয়েছে, পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ তো সংবিধানের অনেক অংশ পরিবর্তন করে দিয়েছে। সুতরাং চাইলে অবশ্যই হবে। ডকট্রেইন অব নেসেসিটি বলে একটা কথা আছে। সেই প্রয়োজনে জনগণের স্বার্থে। এখন এটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যে জনগণের স্বার্থে প্রয়োজন হলে সংবিধান পরিবর্তন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

দাবি পূরণ না হলে নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২০১৮ সালে আমরা কখন নির্বাচনে গিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরে আমরা নির্বাচনে গিয়েছি। সেখানে সেই আলোচনায় তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি এ কথাও বলেছিলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, নির্বাচনটি সুষ্ঠু হবে, সেই দিন থেকে কেউ গ্রেপ্তার হবে না। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, কোনোভাবে বাধা দেওয়া হবে না। কিন্তু শেখ হাসিনা তার সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। ’

তাহলে রাজনীতি কি সহিংসতার দিকে এগোচ্ছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নির্ভর করছে সরকারের ওপর। সরকার এখন ড্রাইভিং সিটে আছে। সংকট সমাধানের উদ্যোগ সব সময় সরকারকে নিতে হয়।

সরকারের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুর বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে আলোচনা করতে চাইলে তা দেখা হবে। আগে সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে আলোচনার বিষয়ে একমত হতে হবে। অন্য বিষয়ে আলোচনার সুযোগ নেই।

আন্দোলনে জামায়াত ইসলামীর অবস্থান কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্য তৈরি করতে বিএনপি সব দলের সঙ্গে আলোচনা করছে। সব দল যুগপৎ আন্দোলন করতে একমত হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের বিকল্প কি বিএনপি? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি হচ্ছে একমাত্র বিকল্প যারা দেশের সমস্যার সমাধান করতে পারে।

ক্ষমতায় গেলে বিএনপির নেতা কে হবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া―তিনি আমাদের নেত্রী। তার অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এখানে কোনো অস্পষ্টতা নেই।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইউক্রেন একটা স্বাধীন দেশ। সেখানে কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপ কখনোই সমর্থন করি না। আমরা রাশিয়ার হস্তক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছি। ‘

রাশিয়া-ইউক্রেনে খাদ্যপণ্য বহির্বিশ্বে পাঠানোর সমঝোতার উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, উভয় দেশেরই তাদের যে দায়িত্ববোধ আছে বিশ্বমানবতার প্রতি―এটা তারই পরিচয় বহন করে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তেল ও গ্যাসের দাম বেড়েছে। ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকেও সরকার গ্যাস উত্তোলনের পদক্ষেপ নেয়নি। আমদানি করা গ্যাসের দাম বেড়ে যাচ্ছে, ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এখন এটা বড় সংকট। সার কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, পোশাক কারাখানাগুলোতে সংকট তৈরি হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বৈদেশিক মজুদের পরিমাণ নিচের দিকে যাচ্ছে, রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কার মূল সংকট ছিল রিজার্ভ। বাংলাদেশ সরকার রিজার্ভ ৪২ বিলিয়নের কথা বলছে। এর মধ্যে সাড়ে সাত বিলিয়ন এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের নামে তারা দেশের যারা রপ্তানি করে তাদেরকে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে দিয়েছে। এই টাকা ফেরত আসার সম্ভাবনা নেই। রপ্তানি কমে আসছে, উৎপাদনের ব্যয় বাড়ছে। ফলে সংকট এখন গভীর হচ্ছে। এ জন্য শ্রীলঙ্কার মতো একটা অবস্থা তৈরি হতে পারে।

মিট দ্য প্রেসের অনুষ্ঠানে ওকাবের আহ্বায়ক বিবিসির সংবাদদাতা কাদির কল্লোল ও সদস্যসচিব জার্মান নিউজ এজেন্সির (ডিপিএ) সংবাদদাতা নজরুল ইসলাম মিঠু সঞ্চালনা করেন। বিএনপির মিডিয়া সেলের জহির উদ্দিন স্বপন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY