বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ মূকাভিনেতা মীর লোকমান। দেশে-বিদেশে সাত শতাধিক প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন ইতোমধ্যে। আগামী ২৯-৩১ জুলাই দক্ষিণ কোরিয়ার গুচাংয়ে অনুষ্ঠিতব্য ৩১তম এশিয়া একক পরিবেশনা উৎসবে অংশ নিতে যাচ্ছেন মীর এবং মৌসুমী।
রঙ, রক্ত এবং একটি চিৎকার, জীবন: যেখানে যেমন ও অস্বীকৃতি- এই তিনটি স্কেচ নিয়ে আধা ঘণ্টার প্রযোজনাটির দুটো মঞ্চায়ন হবে উৎসবের ভিন্ন দুই মঞ্চে।
বাংলাদেশ, ভারত, তুরস্ক, জাপান, কোরিয়া ও থাইল্যান্ডের শিল্পীরা অংশ নিচ্ছেন এবারের আয়োজনে।
সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এশীয় বাস্তবতা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের বিন্যাস এই উৎসবের অন্তর্গত উদ্দেশ্য। এতে বাংলাদেশের প্রযোজনা ‘রঙ, রক্ত এবং একটি চিৎকার’ আয়োজকরা নির্বাচন করেন বিষয় ভিত্তিক সামঞ্জস্য পূর্বক সৃষ্টিশীল উপস্থাপন রঙয়ের জন্য। তিনটি স্কেচের প্রথমটিতে বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত লাল-সবুজ পতাকার নির্মাণ দেখানো হয়।
দ্বিতীয় গল্পে একজন পথ শিশুর স্বপ্ন ও জীবন বাস্তবতা ফুটে উঠে। বৈষম্যের পৃথিবীতে অন্নের জন্য নিরন্তর লড়াই এ গল্পের করুণ দিক। তৃতীয় ও শেষ স্কেচে হত্যা, ধর্ষণ ও নারীর প্রতি বর্বরতার কালো অধ্যায় মূর্ত হয় নিঃশব্দে। একটি সুন্দর পৃথিবী বানাবার নির্বাক তাগিদ ভেসে উঠে পরিচয়হীন শিশুর কান্নায়। মীর লোকমানের একক এ পরিবেশনায় তৃতীয় গল্পটির নির্দেশক শাহরিয়ার শাওন। প্রযোজনার প্রপস, আলোক প্রক্ষেপণ ও আবহ সংগীত প্রদান করবেন দেশের জনপ্রিয় উপস্থাপিকা ও মূকাভিনয় শিল্পী মৌসুমী মৌ।
এই প্রযোজনায় বহুল চর্চিত ট্র্যাডিশনাল রীতির বাইরে গিয়ে প্রপস-সেটের সহযোগে উত্তরাধুনিক মাইমকে দর্শকদের সামনে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। মীর লোকমান এবং মৌসুমীর ভাষ্যে, এ প্রযোজনার তিনটি স্কেচ আমরা বহুবার বহু মঞ্চে প্রদর্শনী করেছি। তবে এবার ভেঙেচুরে নতুনভাবে সাজিয়েছি। মূকাভিনয়ের শক্তিতে একটি অন্যরকম শিল্পীত বাংলাদেশকে তুলে ধরবো আমরা কোরিয়ার বুকে।
মীর লোকমানের হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ‘না বলা কথাগুলো না বলেই হোক বলা’ স্লোগান নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন (ডুমা)। ২০১৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মূকাভিনয় শিক্ষার একাডেমিক প্ল্যাটফর্ম ইনস্টিটিউট অব মাইম এন্ড মুভমেন্ট (আইএমএম)। তিনি ছাড়াও মৌসুমী মৌ এবং মাহবুব আলম এই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও অনেক জেলায় মাইমের বহু কর্মশালা এবং প্রদর্শনী হয়েছে, হচ্ছে।
ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও আর্মেনিয়ায় তিনি মূকাভিনয় প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন নানা সময়ে। মীর লোকমানের প্রত্যেকটি গল্পই মূলত রয়েছে সমসাময়িকতা নির্ভর। সমাজে ঘটমান নানা অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে নির্বাক প্রতিবাদ তার মূকাভিনয়ের উপজীব্য।
তিনি বলেন, মাইম নিছক কোনো বিনোদন মাধ্যম নয়। এটি এমন এক প্রাচীন শিল্প, যা খুব প্রাসঙ্গিকভাবে আজকের দুনিয়ায় অত্যাচারী ও শোষকদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হাতিয়ার ও সমাজ পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।