বিশ্বে খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার অযৌক্তিক: গবেষণা

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্যের যে মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে তা বাস্তবতার চেয়ে বেশি এবং অযৌক্তিক বলে মনে করছেন গবেষকরা।

সুইডিশ ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেসের (এসএলইউ) এগ্রিফুড ইকোনমিক্স সেন্টারের জাতীয় অর্থনীতিবিদ টোরবিওর্ন জনসন ও তাঁর সহকর্মীদের গবেষণায় ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে উত্পাদনের ক্ষতি কীভাবে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দামকে প্রভাবিত করেছে তা উঠে এসেছে।

টোরবিওর্ন জনসন বলেন, ‘ইউক্রেন প্রচুর শস্য উত্পাদন করে। বিশেষ করে সূর্যমুখী বীজ।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে ইউক্রেনের উত্পাদন বিশ্বের মোট উত্পাদনের তুলনায় খুব বেশি নয়’।

গবেষণায় জনসন বলেন, সারাবিশ্বে গম, ভুট্টা এবং বার্লির মোট যে উত্পাদন, ইউক্রেনে হয় তার মাত্র দুই থেকে তিন শতাংশ। সূর্যমুখী তেলের ক্ষেত্রে তা ২৬ শতাংশ। তবে ইউক্রেন তার উত্পাদনের একটি বড় অংশ রপ্তানি করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরে বিশ্ববাজারে দাম লাগামহীন বৃদ্ধি যৌক্তিক নয়।

গত ফেব্রুয়ারির শেষদিকে ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরু হওয়ার সঙ্গেই সঙ্গেই শস্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। জনসন বলেন, ‘প্যারিসের শস্যবাজারে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ এপ্রিলের মধ্যে শস্যের দাম ৩৫ শতাংশ বেড়ে যায়। একই সময়ে সুইডেনে গমের দাম বৃদ্ধি পায় ৩০ শতাংশ’।

গবেষক দলটি প্রশ্ন তুলে ধরে বলেছে, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি জিনিসের দাম ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় আমরা খুব অবাক হয়েছিলাম। যুদ্ধের কারণে বিশ্বের মোট উত্পাদনের দুই থেকে তিন শতাংশের মাত্র একটি অংশ থেকে বিশ্ব বঞ্চিত হয়েছে। তাই বলে সব জিনিসের দাম এত বেশি মাত্রায় কীভাবে বাড়ে?’

এ প্রশ্নকে সামনে রেখে জনসন এবং সহকর্মীরা যুদ্ধের সময় শস্য উত্পাদন ও তার বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করেছিল তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাদের গবেষণার উপসংহারে বলা হয়, যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী ভীতি সৃষ্টি হয়।

এছাড়া যুদ্ধে বিশ্বে খাদ্যের ঘাটতি হয়- এই ধারণা অযৌক্তিক মাত্রায় প্রচার পায়, যা বাস্তবতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। গবেষকরা বলেন, যুদ্ধের কারণে খুব বেশি হলে ১০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি ঘটতে পারে।

জনসন ও সহকর্মীরা বলেন, ‘প্রশ্ন উঠতে পারে যে, তাহলে কেন দাম এত বেড়েছে। এর উত্তর হল: আমরা আসলে জানি না। তবে, মূল্যবৃদ্ধির পেছনে উত্পাদন কমে যাওয়ার ব্যাখ্যাটা এক্ষেত্রে যথেষ্ট বা যৌক্তিক নয়’।

গবেষকরা বলেছেন, যুদ্ধের বেশ আগে থেকেই বিশ্বে পণ্যের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তখনও তার পেছনের ব্যাখ্যাটি ছিল অপ্রতুল। তখন জ্বালানি ও সার ব্যয়বহুল হওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

অর্থনীতিবিদ টোরবিওর্ন জনসন জোর দিয়ে বলেন, ‘যুদ্ধের আগে বিশ্বে যতটা খাদ্য ছিল, এখনও প্রায় ততটাই রয়েছে। নেই শুধু পর্যাপ্ত অর্থ, যা দিয়ে উচ্চমূল্যের সে খাদ্য কেনা যায়।

গবেষকরা যুদ্ধের পরে দাম বেড়ে যাওয়া শস্যের উত্পাদন বিষয়ে বিভিন্ন মডেল তৈরি করে এ বিশ্লেষণ চালিয়েছেন।

LEAVE A REPLY