কাতারের অ্যাসপায়ার একাডেমী, আল দোহাইল ক্লাব হয়ে বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস। এরপর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, এই ক্লাবে এসেই তাদেরকে প্রিমিয়ার লিগে টিকে রাখতে রেখেছেন বড় অবদান। সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমের দ্বিতীয় পর্বে ক্লাবটির হয়ে তিনটি গোলের পাশাপাশি করেছেন তিনটি অ্যাসিস্ট। ডাক পেয়েছিলেন জাতীয় দলেও কিন্তু লাল-সবুজের জার্সি গায়ে এখনো অভিষেক হয়নি ওবায়দুর রহমান নবাবের।
প্রিমিয়ার লিগের পারফরম্যান্স, বাংলাদেশ জাতীয় দল ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ওবায়দুর রহমান নবাবের সঙ্গে কথা বলেছেন কালের কণ্ঠের প্রতিবেদক রানা শেখ।
প্রশ্ন: আপনার সামর্থ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই তবে ইনজুরি আর ফিটনেস ইস্যু বরাবরই সামনে চলে আসতো। দ্বিতীয় লেগে মোটামুটি ইনজুরিমুক্ত ছিলেন। কেমন গেলো দ্বিতীয় লেগ?
নবাব: আসলে বাস্তবতা হল ফুটবলে ইনজুরি একটি দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। সব খেলোয়াড়ই ইনজুরিতে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে, কিন্তু আমি খুব ভালো অনুভব করছি। কোনোরকম ইনজুরি ছাড়াই গত কিছু ম্যাচ ৯০ মিনিট খেলতে পেরেছি। আমার ফিটনেসে এতটা সমস্যা ছিল না যতটা নিয়ে কথা বলা হয়েছে, আমি মনে করি ফিটনেসের চেয়েও বড় ব্যাপার ছিল নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। চেষ্টা করেছি মানিয়ে নিতে। ফিটনেস অনুযায়ী আমি কোনো অসুবিধা ছাড়াই অনুশীলন করেছি। তবে আমার ম্যাচ খেলার সুযোগ হচ্ছিলনা, এতে ম্যাচের পরিবেশের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে পারছিলাম না। আমি জানতাম, যদি ম্যাচ না খেলি তাহলে আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না। তাই নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমি মুক্তিযোদ্ধায় খেলতে পেরে খুশি। এর আগে আমার লিগ জেতার অভিজ্ঞতা আছে। যে লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযোদ্ধায় এসেছিলাম আমি মনে করি সেটা পূরণ হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে আমি খুশি।
প্রশ্ন: মুক্তিযোদ্ধাকে রেলিগেশন থেকে বাঁচাতে বড় অবদান রেখেছেন। শেষ দিকে এসে বড় দলগুলোর বিপক্ষে এত ভাল খেলার কারণ?
নবাব: আমি মুক্তিযোদ্ধায় এসেছিলাম গেম টাইম পাওয়া এবং দলকে রেলিগেশন থেকে বাঁচানোর জন্য। লক্ষ্য ছিল আমার সেরাটা পারফরম করা। সেটা করতে পেরেছি। সবাই মিলে দল হিসেবে খেলেছি। আমি বিশ্বাস করি, এটা আমার আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আগামী মৌসুমের জন্য আমি মুখিয়ে আছি।
প্রশ্ন: সুদি আব্দুল্লাহ এর সাথে রসায়ন কেমন ছিলো?
নবাব: আব্দুল্লাহ কঠোর পরিশ্রমী একজন ফুটবলার। সে আমার গতি-বিধি বুঝতে পারতো এবং এতে মাঠে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়ে যেত। মাঠ ও মাঠের বাইরে আমাদের ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। তার সাথে খেলতে বেশ উপভোগ করি। একটাই আফসোস, আরও বেশি গোল করতে পারিনি।
প্রশ্ন: দ্বিতীয় লেগের পারফরম্যান্সে নিজেকে দশের মধ্যে কত দিবেন?
নবাব: আমি মনে করি এটা মাত্র শুরু। আমি কি করেছি সেটা নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না। সামনের দিকে মনোযোগ দিতে চাই এবং আরও ভাল করতে চাই।
প্রশ্ন: বসুন্ধরা কিংসে তেমন প্লেয়িং টাইম পাননি কিন্তু মুক্তিযোদ্ধায় এসেই নিয়মিত খেলতে পেরেছেন।
নবাব: আমি আগেই বলেছি বসুন্ধরা কিংস যে সুযোগ দিয়েছে তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। দলের কোচ এবং ম্যানেজমেন্ট তাদের সিদ্ধান্ত নিবে, এটাই স্বাভাবিক। আমার কাজ হল পারফর্ম করা এবং আমি সেটা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব। বসুন্ধরা কিংস তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছে এবং তৃতীয় বারের মতো লিগ জেতার জন্য তাদেরকে অনেক অভিনন্দন। আমি তাদের শুভকামনা জানাই।
প্রশ্ন: কাতারের ক্লাবে খেলেছেন, বসুন্ধরা কিংসেও খেলেছেন। উন্নত লিগের ক্লাবগুলোর সঙ্গে কিংসের মিল দেখতে পান?
নবাব: আমি মনে করি, বাংলাদেশের ফুটবলে বসুন্ধরা কিংস ইতিবাচক কিছু শুরু করেছে। যতক্ষণ তারা উচ্চতর মান এবং পেশাদারিত্ব বজায় রাখবে ততক্ষণ তারা ভাল করতে থাকবে। এই ক্লাবটি প্রায় প্রতিটি সুযোগ-সুবিধা দেয় যা আপনি অন্যান্য লিগের বড় ক্লাবগুলোতে দেখতে পাবেন। আমি মনে করি, এই ক্লাবের সুযোগ-সুবিধায় সব খেলোয়াড়ই খুশি।
প্রশ্ন: গত বছর জাতীয় দলের ক্যাম্পে বলেছিলেন; নবাব, দেশের ফুটবলের নবাব হতে চায়। সে পথে কতটুকু এগোতে পারলেন?
নবাব: আমি বলতে চাই, আমার যাত্রাটা মাত্র শুরু হয়েছে। বহুদূর যেতে হবে, দেখা যাক কোথায় যেতে পারি। আমি বিশ্বাস করি, সব ফুটবলারের হৃদয়ে জাতীয় দলের জন্য একটি বিশেষ স্থান রয়েছে।
প্রশ্ন: দেশের ফুটবলপ্রেমিদের মধ্যে নবাবকে নিয়ে খুব আগ্রহ দেখা যায়। আপনার কাছে ব্যাপারটা কেমন লাগে?
নবাব: যারা আমাকে সমর্থন করে তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ। তাদের প্রতি আমার সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা এবং আমি চাই, তাদের এই সমর্থন যেনো অব্যাহত থাকে। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করি সোশ্যাল মিডিয়া এড়িয়ে চলতে। এটা আমার ব্যক্তিগত পছন্দ। সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় দিক রয়েছে। আমি আনন্দিত যে আমার আশেপাশের লোকেরা আমাকে কাজের প্রতি মনোযোগী থাকতে সাহায্য করে। আমি আশা করি, আমি আমার পারফরম্যান্স দিয়ে তাদেরকে আরও বিনোদন দিতে পারব।
প্রশ্ন: আপনি তো অনেক উঁচু মানের ফুটবলারদের সাথে খেলছেন। এদের মধ্যে আপনার চোখে সেরা কে?
নবাব: আমি যাদের সাথে খেলেছি তাদের মধ্যে সেরা খেলোয়াড় মারিও মানজুকিচ, মেহদি বেনাতিয়া, এডমিলসন জুনিয়র এবং রবসন রোবিনহো। বেনাতিয়ার সাথে খেলা মুহূর্তগুলো মজার ছিল, অনুশীলনের সময় তার মধ্যে কোন দয়া-মায়া দেখতাম না। সে ট্যাঙ্কের মতো আমার দিকে তেড়ে আসতো এবং মেরে ফেলার জন্য স্লাইড করতেন (হাসি)।
প্রশ্ন: রবসন রোবিনহোকে একজন সতীর্থ হিসেবে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
নবাব: রোবিনহো খুব ভাল খেলোয়াড় এবং সত্যি ভাল মানুষ। দলের সবাই তাকে ঘিরেই আনন্দ করে। তার স্কিল দুর্দান্ত। এটা ভাল যে, তার মত একজন খেলোয়াড় বাংলাদেশের লিগে খেলছে। বাকি খেলোয়াড়রা তার কাছে থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে।
প্রশ্ন: কাতারের অ্যাসপায়ার একাডেমী, আল দুহাইল থেকে বাংলাদেশের ফুটবল, এখন পর্যন্ত যাত্রাটা কেমন হলো?
নবাব: আমার বয়স এখন মাত্র ২৩৷ এটা সবে মাত্র শুরু। এখনো অনেক দূর যেতে হবে। তবে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের যাত্রাটি আমার জন্য বেশ আকর্ষণীয় ছিল। আমার ক্যারিয়ারের প্রতিটি অংশই উপভোগ করছি। বাংলাদেশে খেলা আর কাতারে খেলা অনেক আলাদা ব্যাপার। কিন্তু একজন ফুটবলার হিসেবে আমি চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। বাংলাদেশের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিয়েছি এবং সদ্য শেষ হওয়া লিগের ২য় পর্বে সেরাটা খেলেছি। পরের মৌসুমেও নিজের সেরা পারফরম্যান্স করতে চাই।