অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা আনারকলির বিরুদ্ধে

কাজী আনারকলি

ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় বাংলাদেশ দূতাবাসের উপপ্রধান কাজী আনারকলির বিরুদ্ধে নিষিদ্ধঘোষিত মাদক রাখার অভিযোগ ওঠার পর এরই মধ্যে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসে দায়িত্ব পালনকালে তাঁর বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ উঠেছিল। জাকার্তায় মাদক নিয়ে ধরা পড়ার আগে থেকে তিনি নাইজেরিয়ান এক যুবকসহ একই বাসায় থাকতেন।

সেখানে তাঁর বাসায় মাদকসহ ধরা পড়ার পর গত ৫ জুলাই ইন্দোনেশিয়া সরকারের অনুরোধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁকে প্রত্যাহার করে দেশে ফিরিয়ে আনে।

এর আগে মানবপাচারের অভিযোগে ২০১৭ সালে গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়।

সূত্র মতে, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ইন্দোনেশিয়ার মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গত ৪ জুলাই দক্ষিণ জাকার্তায় কাজী আনারকলির বাসায় অভিযান চালায়। ওই অভিযানে তাঁর বাসা থেকে নিষিদ্ধঘোষিত মাদক মারিজুয়ানা উদ্ধার করে সংস্থাটি। ওই সময় বাসা থেকে আটক করা হয় আনারকলির নাইজেরিয়ান বন্ধুকে। পরে ইন্দোনেশিয়ার মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ডিটেনশন সেন্টারে তাঁদের প্রায় ২৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শেষে কূটনৈতিক চ্যানেলে দূতাবাসের জিম্মায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে তাঁর নাইজেরিয়ান বন্ধুর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা যায়নি। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে বাংলাদেশ দূতাবাসে ডেপুটি কনসাল জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় আনারকলির সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে নাইজেরিয়ান ওই যুবকের।

তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহিরয়ার আলম গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘কূটনীতিকের বাসায় মাদকদ্রব্য পাওয়ার অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে। এটি আমাদের জন্য বিব্রতকর। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে উচ্চমর্যাদা, সেখানে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

জাকার্তায় আনারকলির এক বন্ধু ছিলেন, তিনি অন্য দেশের নাগরিক। এ তথ্য জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ তাঁর কাছেও যেতে পারে। ঘটনাটি কি আনারকলি ঘটিয়েছেন, না তাঁর বন্ধু ঘটিয়েছেন, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী, কোনো কূটনীতিকের বাসায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অভিযান চালাতে পারে না। ইন্দোনেশিয়ার মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সে নিয়ম না মেনেই কাজী আনারকলির বাসায় অভিযান চালায়। এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ নিয়ে আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, এখানে তারা কোনো ভুল করেনি। কারণ, সেই বাসায় আরেকজন বিদেশি নাগরিক ছিলেন বলে আমরা শুনেছি। সে ক্ষেত্রে পুলিশ যেতেই পারে। ’

মানবপাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত : ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে বাংলাদেশ দূতাবাসে দায়িত্ব পালনকালে মানবপাচারের অভিযোগ ওঠে আনারকলির বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, সাব্বির (৪০) নামের এক নিকটাত্মীয়কে গৃহকর্মী দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান তিনি। ওই গৃহকর্মী যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যে নিরুদ্দেশ হন।

LEAVE A REPLY