অ্যান্টনি ব্লিংকেন-ছবি: এএফপি
তাইওয়ানকে ঘিরে সামরিক মহড়ার সময় চীনের ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়াকে ‘অযৌক্তিক বাড়াবাড়ি’ অভিহিত করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। অন্যদিকে তাইওয়ান সফরের কারণে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং।
পেলোসির সফরের পর চীন-যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপড়েন আরো তীব্র হয়েছে গতকাল শুক্রবার। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সামরিক নেতাদের মধ্যকার সংলাপ তারা বাতিল করছে।
এ ছাড়া জলবায়ু ও সামুদ্রিক সুরক্ষার ওপর দ্বিপক্ষীয় আলোচনাও স্থগিত করা হবে বলে জানিয়েছে দেশটি।
চীন যথারীতি শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের মতো মহড়া চালায়। এদিন চীনের ১০টি নৌবাহিনীর জাহাজ এবং ২০টি যুদ্ধবিমান সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য তাইওয়ান প্রণালির মধ্যরেখা অতিক্রম করেছিল বলেও জানিয়েছে এক তাইওয়ানি সূত্র।
এর আগে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, পরিস্থিতিতে নজর রাখতে যুদ্ধবিমান, জাহাজ ও স্থলনির্ভর ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা নিয়োজিত করেছে তাদের দ্বীপের সামরিক বাহিনী।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, ওয়াশিংটন বারবারই বেইজিংয়ের কাছে এটি স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছে যে তারা সংকট চান না। তিনি বলেন, ‘এই মাত্রাতিরিক্ত, অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং বাড়াবাড়ি সামরিক প্রতিক্রিয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘তারা বিপজ্জনক কর্মকাণ্ডকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। ’
পেলোসির সফরের এক দিন পরই চীন গত বৃহস্পতিবার তাইওয়ানের চারপাশের সমুদ্র ও আকাশে নিজেদের বৃহত্তম সামরিক মহড়া শুরু করে। আগামীকাল রবিবার দুপুর পর্যন্ত মহড়া চলার কথা রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার তাইওয়ানের উত্তর, দক্ষিণ-পশ্চিম ও পূর্বের আকাশ এবং জলপথে মহড়া চালায় চীনের সামরিক বাহিনী। নিজেদের সরকারি ওয়েইবো অ্যাকাউন্ট থেকে সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড (পিএলএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মহড়ার মাধ্যমে তারা সেনাদলের ‘যৌথ যুদ্ধ সক্ষমতা’ পরীক্ষা করছে।
চীনের নিন্দার পাশাপাশি সংকটে উসকানি না দিতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পদক্ষেপ নেবে না বলেও জানিয়েছেন ব্লিংকেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আঞ্চলিক মিত্রকে সমর্থন দেওয়া এবং তাইওয়ান প্রণালির মধ্য দিয়ে আকাশ ও সামুদ্রিক জলপথে নিয়মিত চলাচল অব্যাহত রাখবে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা হবে।
বৃহস্পতিবার তাইওয়ানে মহড়ার নিন্দা জানাতে হোয়াইট হাউস চীনা রাষ্ট্রদূত কিন গ্যাংকে ডেকে পাঠিয়েছিল বলে জানা গেছে। তবে চীনের আলোচনা বাতিল ঘোষণা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা গতকাল পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি।
অন্যদিকে শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পেলোসির ‘বিদ্বেষপূর্ণ ও উসকানিমূলক’ আচরণের জন্য মার্কিন এই স্পিকার ও তাঁর পরিবারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে তারা।
এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘চীনের গুরুতর উদ্বেগ ও দৃঢ় বিরোধিতার পরও পেলোসি তাইওয়ান সফর করেছেন, চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে গুরুতর হস্তক্ষেপ করেছেন, চীনের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে অবমূল্যায়ন করেছেন, এক চীন নীতিকে পদদলিত করেছেন এবং তাইওয়ান প্রণালির শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছেন। ’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, তারা সীমান্ত-পারের অপরাধ প্রতিরোধে সহযোগিতা এবং মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ড ও অবৈধ অভিবাসীদের প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা স্থগিত করছে।
এদিকে জাপান সফরকালে দেওয়া বক্তব্যে পেলোসি বলেছেন, আঞ্চলিক স্থিতাবস্থা পরিবর্তন তাঁর এশিয়া সফরের উদ্দেশ্য নয়। সূত্র : রয়টার্স।