গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরো ৩

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় সৃষ্ট আগুনের গোলা- ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় শুক্রবার ইসরায়েলের বিমান হামলায় ১৫ জন নিহত হওয়ার পর গতকাল শনিবার আরো তিনজন প্রাণ হারিয়েছে। কথিত ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের’ নামে ইসরায়েল ওই হামলা চালায়।

গত বছর মে মাসে হামাস শাসিত গাজায় দীর্ঘ ইসরায়েলি হামলায় অনেক সাধারণ মানুষসহ ২৫৬ জন নিহত হয়। এবারের বিমান হামলা সেখানে আরেকটি বড় সংঘাতের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানায়, উপত্যকার খান ইউনুস শহরে ইসরায়েলের বিমান হামলায় দুজন নিহত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলীয় বেইত হানাউন শহরে বেসামরিক গাড়িতে গোলা পড়ে এক মা নিহত হয়েছেন। ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান সেরে কনেকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বিমান হামলার শিকার হন নামেহ আবু কায়দা নামের ওই নারী।

গাজা কর্তৃপক্ষ গতকাল জানায়, আবু কায়দাসহ হামলায় তখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৩। তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ শুক্রবার হামলার পরই দাবি করেছিল, কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছে।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলছে, গাজায় ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে ‘আগাম প্রতিরোধমূলক’ অভিযান চালানো হচ্ছে। দেশটি এর নাম দিয়েছে ‘অপারেশন বেকিং ডন’। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গতকাল জানায়, এই অভিযান সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। হামলা বন্ধে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে তারা।

কয়েক দিন আগে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম তীর অঞ্চল থেকে ইসলামী জিহাদের কমান্ডার বাসাম আল-সাদিকে গ্রেপ্তার করে ইসরায়েল। এর পরই ওই সংগঠন ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। এর জেরেই এলো ইসরায়েলের এই বিমান হামলা।

গাজায় হামলার পর ইসরায়েল পশ্চিম তীরেও গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়েছে। তেল আবিব কর্তৃপক্ষ জানায়, গতকাল পর্যন্ত ইসলামী জিহাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে রামাল্লাহর বেইত সিরা এলাকা থেকে ইব্রাহিম আবু সেফিয়াহ নামের এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

‘ইসলামী জিহাদ’ সংগঠনের সামরিক শাখা ‘আল কুদস ব্রিগেড’ জানায়, হামলার জবাবে গতকাল সকাল পর্যন্ত ইসরায়েলের বিভিন্ন শহর লক্ষ্য করে ৬০টির মতো রকেট ছুড়েছে তারা।

গাজার শাসক হামাসের মিত্র হিসেবে পরিচিত ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সেলামি বলেন, ‘সাম্প্রতিক অপরাধমূলক কাজের জন্য ইসরায়েলকে চড়া মূল্য দিতে হবে। ’ ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিও গাজায় হামলার নিন্দা করেছেন।

২০০৭ সালে ফিলিস্তিনের গাজা অংশের নিয়ন্ত্রণ কট্টরপন্থী গোষ্ঠী হামাসের হাতে চলে যাওয়ার পর ইসরায়েল অঞ্চলটিকে কঠোরভাবে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। এর পর থেকে চারবার গাজায় বড় আকারের ইসরায়েলি অভিযান হয়েছে। সর্বশেষ গত বছর ১১ দিনব্যাপী হামলায় গাজায় ২৫৬ জন নিহত হয়। পাশাপাশি ইসরায়েলেও হামাসের ছোড়া রকেটে ১৪ জনের মতো নিহত হয়। উল্লেখ্য, চলমান উত্তেজনায় ইসলামী জিহাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে হামাস।

ইসরায়েলের হামলার মুখে গাজা উপত্যকার একমাত্র বিদ্যুৎ সরবরাহকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ২৩ লাখ বাসিন্দার গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় জীবনযাত্রার সংকট আরো প্রকট হবে। মূলত গাজার সীমান্তবর্তী মিসর ও ইসরায়েল থেকে জ্বালানির ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে না পারায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

গাজায় নতুন সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় মধ্যস্থতার ভূমিকা নিয়েছে মিসর। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে গতকাল বলেছে, মিসর গাজার পরিস্থিতি প্রশমনে ‘নিবিড় যোগাযোগ রাখছে’। সূত্র : আলজাজিরা ও বিবিসি।

LEAVE A REPLY