যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে হামলার শিকার ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদির শারীরিক অবস্থা ভালো নেই। বিবিসি জানিয়েছে, বর্তমানে তিনি লাইফ সাপোর্টে (ভেন্টিলেটর) রয়েছেন এবং কথা বলতে পারছেন না।
সালমান রুশদির এজেন্ট এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, লেখকের এক চোখের দৃষ্টি চলে যেতে পারে। এ ছাড়া তার কলিজায় ছুরির আঘাত লেগেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সন্দেহভাজন হামলাকারীকে আটক করেছে পুলিশ। সিএনএন জানিয়েছে, ২৪ বছর বয়সী হাদি মাতার নিউ জার্সির ফেয়ারভিউ এলাকার বাসিন্দা। নিউ ইয়র্ক স্টেট পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন হামলাকারী দৌড়ে মঞ্চে উঠে রুশদির ওপর হামলা চালায়।
অনলাইনে পোস্ট করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, এসময় কিছু দর্শক দ্রুত মঞ্চের দিকে ছুটে যাচ্ছেন। সেখানে উপস্থিত লোকজন হামলাকারীকে থামাতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
একজন চিকিৎসক যিনি হামলার পরপর শিটোকোয়া ইনস্টিটিউটিশনে সালমান রুশদীকে চিকিৎসা দিয়েছেন, তিনি নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, রুশদির শরীরে তিনি কয়েকটি ছুরিকাঘাত দেখেছেন। এর মধ্যে একটি আঘাত ছিল ঘাড়ের ডান দিকে।
তিনি আরো বলেছেন, মঞ্চে তার শরীরের নীচে অনেক রক্ত জমে ছিল। তিনি তখনো জীবিত বলেই মনে হচ্ছিল।
রিটা ল্যান্ডম্যান নামের এই চিকিৎসক বলেন, লোকজন চিৎকার করে বলছিল, এখনো তার পালস পাওয়া যাচ্ছে, পালস পাওয়া যাচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারী ছুরি দিয়ে রুশদির ঘাড় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে বেশ কয়েকবার আঘাত করেছিল। এরপর শুক্রবার রাতে (বাংলাদেশ সময়) অস্ত্রোপচার করা হয়েছে তার।
বিতর্কিত স্যাটানিক ভার্সেস উপন্যাস লেখার পর থেকে সালমান রুশদি অনেক দিন ধরে হুমকির মুখে রয়েছেন। বইটির বিষয়বস্তু অনেক মুসলিমকে আহত করেছিল।

ইসলামের প্রতি অবমাননাকর আখ্যা দিয়ে ইরানের প্রয়াত ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি রুশদিকে হত্যার ফতোয়া দিয়েছিলেন।
বাফেলো নিউজের প্রতিবেদক মার্ক সোমার বিবিসি নিউজ চ্যানেলকে বলেছেন, কালো মাস্ক পরা হামলাকারী দর্শকদের মধ্য থেকে উঠে এসে মঞ্চে লেখকের ওপর চড়াও হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, রুশদি কয়েকটি আঘাতের পর উঠে দাঁড়িয়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে পেছনে পড়ে যান। তাকে সেখানেই কিছু চিকিৎসা দেওয়ার পর হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বুকার পুরস্কার বিজয়ী ৭৫ বছর বয়সী রুশদি পশ্চিম নিউ ইয়র্কের একটি শিল্প-সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিষ্ঠানে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়েছিলেন।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি ১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সাহিত্য সমালোচকরা তাকে ইংরেজি ভাষার কৃতী লেখকদের একজন মনে করেন। তবে চতুর্থ বই ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত স্যাটানিক ভার্সেস দিয়ে তিনি বিতর্কিত হয়ে ওঠেন। অনেক দেশে পরাবাস্তববাদী, উত্তর-আধুনিক বইটি নিষিদ্ধ করা হয়।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনসহ বিভিন্ন ব্রিটিশ নেতা ও বেশ কয়েকজন দেশি-বিদেশি সাহিত্যিক রুশদির ওপর হামলার নিন্দা করেছেন। মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন এক টুইটে নিন্দা করে বলেছে, এ ধরনের সহিংসতা অনুচিত।
সূত্র : বিবিসি।