পিএইচডি গবেষণা জালিয়াতি বন্ধে কমিটি দিলেন হাইকোর্ট

বি- কালের কণ্ঠ।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডিসহ উচ্চশিক্ষার গবেষণায় জালিয়াতি বন্ধে নীতিমালা করতে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এসংক্রান্ত রিট আবেদনকারীর প্রস্তাবিত নাম গ্রহণ করে আজ রবিবার এ আদেশ দেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ। কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে নীতিমালার খসড়া তৈরি করে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

রিটের পক্ষে আবেদনকারী আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান লিংকন নিজেই শুনানি করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে গত ২৯ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নীতিমালার একটি খসড়া জমা দিয়েছিল। শুনানিতে ওই নীতিমালা নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলেছিলাম। তখন আদালত আমার কাছে নীতিমালা তৈরির জন্য একটি কমিটি গঠন করতে বিজ্ঞজনদের নাম চান। আমি সাতজনের নাম প্রস্তাব করি। আদালত তাদের দিয়েই কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। ’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নানকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী।  

কমিটির সদস্যরা হলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারপারসন ড. অধ্যাপক সাইফুদ্দিন মো. তারেক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাকিব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাজনীন ও একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আকবর।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই কমিটির যাবতীয় কার্যক্রমে সহায়তা করবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। তিন মাসের মধ্যে এই কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ’

‘ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮% নকল’ শিরোনামে ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি প্রথম আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটি যুক্ত করে জালিয়াতির মাধ্যমে পিএইচডি বা সমমানের ডিগ্রি অর্জন রোধে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে ওই বছরের ২৬ জানুয়ারি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি বা সমমানের ডিগ্রি কিভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়, সে বিষয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ‘ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮% নকল’ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ৬০ দিনের মধ্যে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব আইন, বিধি-বিধান ও ব্যবস্থাপনায় পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি প্রদান করে থাকে। এ ধরনের ডিগ্রি প্রদানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কোনোরূপ ভূমিকা পালন করে না বা পালন করার সুযোগ নেই। অন্যদিকে দেশে ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তার মধ্যে ৯৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কমিশন থেকে দেশের কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি বা সমমানের কোনো ডিগ্রির প্রগ্রাম, কোর্স, সিলেবাস বা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এরপর নীতিমালা তৈরিতে কমিটি গঠন করে আদেশ দিলেন উচ্চ আদালত।

LEAVE A REPLY