জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট সুশীল সমাজের জন্য স্পেস সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার এক টুইট বার্তায় তিনি এ আহ্বান জানান।
এতে আরও বলেছেন, মানবাধিকারের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে তা মোকাবিলায় সুশীল সমাজকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
মিশেল ব্যাচেলেট সোমবার সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর এই টুইট করেন। এ বৈঠকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা গণতন্ত্র, ডিজিটাল নিরাপত্তা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিয়ে আলোচনা করেন।
সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় ২০ প্রতিনিধি বৈঠকটিতে অংশগ্রহণ করেন। এদের মধ্যে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (বিএলএসটি) নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির ছিলেন।
খুশি কবির বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি কী, সে বিষয়ে কথা হয়েছে। ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। আর কোথায় কোথায় দুর্বলতা আছে, কোন কোন বিষয় ঠিক করতে হবে, সেটাও তুলে ধরেছি। সব মিলিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, মানবাধিকার ক্ষেত্রে কাজ করার সুশাসন ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়ে কথা হয়েছে। এছাড়া গণতন্ত্র, ডিজিটাল নিরাপত্তা, জবাবদিহিতা ও পরিবেশগত বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
এই বৈঠকে অংশ নেয় বিভিন্ন সময়ে যারা গুম হয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন মায়ের ডাক। সংগঠনটির প্রতিনিধি সানজিদা ইসলাম তুলির ভাই সাজেদুল ইসলাম সুমন নিখোঁজ রয়েছেন।
জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তুলি যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা আমাদের স্বজনদের খুঁজে পেতে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি করেছি। এখন পর্যন্ত ৬০০ জনের বেশি গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন। যারা জীবিত আছেন, তাদের আমরা ফিরে পেতে চাই। যারা খুন হয়েছেন, তাদের মরদেহ ফেরত চাই। জবাবদিহি ও বিচারের স্বার্থে স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্ত আমাদের দাবি।’ জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান কী বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি তার অবস্থান থেকে যা করণীয় তা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’
দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট।
সেখানে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং জাদুঘরের পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটকে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার প্রতিবাদে রাঙামাটি সদর উপজেলার কুতুকছড়িতে মানববন্ধন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি জেলা শাখা।
সোমবার বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি রিনিশা চাকমা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তনুময় চাকমা। এতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা প্রতিনিধি কার্বন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা সভাপতি রিমি চাকমা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট চার দিনের সফরে রোববার ঢাকায় আসেন। এরই মধ্যে তিনি সরকারের চারজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে গুম, খুন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে জানতে চেয়েছেন।
সফরকালে মিশেল কক্সবাজার গিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বক্তৃতা করবেন।