নিত্যপণ্যের বাড়তি দামেই বাঁধা পড়েছেন ক্রেতা

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। পাইকারিতে দাম কিছুটা কমলেও এর প্রভাব নেই খুচরায়। ফলে কাঁচাবাজারে বাড়তি দামে বাধা পড়েছেন ক্রেতা। চাহিদা যাই থাক, স্বল্পব্যয়ে তা পূরণ হওয়ার নয়। এটা মেনেই সমঝে চলছেন মধ্য ও নিুবিত্ত ক্রেতারা। হিলিতে কাঁচামরিচ ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও ঢাকায় ২২০ টাকা। এক কেজি কাঁচামরিচে ১৭০ টাকা দামের পার্থক্য মেনে নিয়ে চুপচাপ বাড়ি ফিরছেন তা। বুঝে গেছেন, ধীরে ধীরে অর্ধেক চাহিদা পূরণও তাদের সাধ্যের বাইরে চলে যবে। মাথাগুজে বাজার থেকে বাড়ি ফিরতে হবে।

রোববার সরকারি সংস্থা টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) দৈনিক মূল্য তালিকায় বাড়তি দামের চিত্র দেখা গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২ শতাংশ হারে। খোলা পাম অয়েল ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ ও পাম অয়েল সুপার ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি মাঝারি আকারের মসুর ডাল ৪ শতাংশ দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

একই দিন, রাজধানীর সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার ও নয়াবাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৫০ টাকা। এছাড়া গত আট দিন আগে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি আকারের মসুর ডাল ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, সাত দিন আগে দাম ছিল ১২৫ টাকা। সরু আকারের মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকা। আগে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৮২-১৮৪ টাকা। যা সাত দিন আগেও ১৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাম অয়েল সুপার প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা। যা সাত দিন আগে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১৮০-২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রোববার হিলিতে যা ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতারা জানান, মরিচের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। যা দু-একদিনের মধ্যে দাম আরও কমবে। সরু চালের দাম কিছুটা কমলেও মোটা ও মাঝারি আকারের চাল এখন আগের মতো বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে বেড়েছে আটা-ময়দার দাম। তদারকি জোরদার করায় ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম খুব ধীরে কমছে। তবে এখনও ক্রেতার নাগালের বাইরে।

ক্যাবের সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, নিত্যপণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে এতে সাধারণ মানুষ নাজেহাল হচ্ছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে কথা হয় শান্তা ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাজারে একের পর এক পণ্যের দাম বাড়ছে। প্রতিবছর এ সময় পেঁয়াজের দাম বাড়ে। এবারও তাই হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে দাম বাড়ছে। সঙ্গে নতুন করে ডাল ও তেলের দাম আবারও ঊর্ধ্বমুখী। এভাবে চলতে থাকলে আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামলাতে কষ্টকর হয়ে যাবে। তদারকি সংস্থাগুলোও ঠিকভাবে কাজ করছে বলে মনে হয় না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, একটি ট্রাকে কমপক্ষে পাঁচ হাজার কেজি সবজি পরিবহণ করে। তেলের দাম বাড়ার পর ভাড়া কেজিপ্রতি এক টাকা বেশি লাগতে পারে। ৪০ টাকার সবজি সেখানে ৬০ টাকা হওয়ার কথা নয়। এখানেই আমাদের কাজ। আমরা এ বিষয়ে তদারকি করে আইনের আওতায় আনছি। পাশাপাশি চাল পরিবহণে আরও কম খরচ পড়ে। এক ট্রাকে দশ থেকে ১৫ টন করে চাল পরিবহণ করা হয়। এখানে পাঁচ হাজার টাকা অতিরিক্ত ভাড়া লাগলে প্রতি কেজিতে ৩৩ পয়সা বাড়তি খরচ হয়। দশ টনে ৫০ পয়সা বেশি খরচ হওয়ার কথা। এখন চালের দাম যদি অস্বাভাবিক বেশি হয়, তাহলে আমাদের হস্তক্ষেপের সুযোগ আছে। আমরা সেটাই করছি। তিনি জানান, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় প্রতি পিস ডিমের পরিবহণ ব্যয় তিন পয়সা থেকে চার পয়সা বেড়েছে। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে ২ টাকা ৭০ পয়সা। আমরা তাদের আইনের আওতায় আনছি। কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না।

LEAVE A REPLY