বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত হয়েছে কম। তাপমাত্রা ছিল রেকর্ড পরিমাণ। তার প্রভাব ফসলের ওপর পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। খাদ্যশস্যের পর্যাপ্ত মজুত সত্ত্বেও বিদেশ থেকে গম ও চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিয়ে দিয়েছে চালের আমদানি শুল্ক। আপাতত রাশিয়া থেকে পাঁচ লাখ টন গম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামীকাল বুধবার ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে গম কেনার প্রস্তাবটি উঠছে। এ ছাড়াও, ভিয়েতনাম থেকে কেনা হবে দুই লাখ টন চাল। আমদানির সিদ্ধান্ত খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে বলে সরকার মনে করছে। পাশাপাশি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির অধীনে চাল বিক্রি শুরু হচ্ছে পহেলা সেপ্টেম্বর।
জানা গেছে, চালের নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক দ্বিতীয় দফা কমানো হয়েছে। ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে চাল আমদানিতে মোট ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হবে। অবশ্য চালের শুল্ক ছাড়ের সুবিধা পেতে আমদানিকারক খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিতে হবে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ শুল্ক রেয়াতি সুবিধায় চাল আমদানি করা যাবে।
জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘রাশিয়া থেকে পাঁচ লাখ টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বুধবার ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রস্তাবটি পাশ করার জন্য উত্থাপন হবে। এ ছাড়াও, ভিয়েতনাম থেকে দুই লাখ টন চাল আমদানি করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘গোডাউনে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুত আছে। পহেলা সেপ্টেম্বর টিসিবির মাধ্যমে চালু হচ্ছে ওএমএস। চালু হবে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিও। আশা করি, সরকারের পদক্ষেপের কারণে বাজার সহনীয় হবে।’
মন্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘সরকারের গুদামে এখনো ২০ লাখ টন খাদ্যপণ্য মজুত আছে। তার বেশির ভাগ চাল। কিছু পরিমাণ গমও আছে। তার পরও আমরা আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ প্রাকৃতিক কারণে খড়ায় ফসলের উৎপাদন কম হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবে আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ যদিও তিনি মনে করেন, আউশের আবাদ ও ফলন ভালো হয়েছে।
রাশিয়া থেকে ডলারে গম আমদানি করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘ডলারেই আমদানি করা হবে। আমরা জেনেছি, খাদ্যশস্য ও সার আমদানিতে কোনো অসুবিধা নেই (নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না)।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু তিনি বলেননি।
এদিকে, ঢাকায় রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্তিৎস্কি সম্প্রতি এক গোলটেবিলে বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার জন্য রাশিয়ার প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বিশেষ করে সার, গম, খাদ্যশস্য বাংলাদেশ আমদানি করতে পারে। জিটুজি ভিত্তিতে সরাসরি গমসহ খাদ্যশস্য বিক্রির আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। প্রাথমিকভাবে তিন থেকে চার লাখ টন খাদ্যশস্য বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করা হবে।
অপর দিকে, ভোজ্যতেল, ডাল, চিনি ও পেঁয়াজের সঙ্গে টিসিবি ফ্যামিলি কার্ডে মিলবে ১০ কেজি চাল। প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে এ চাল বিক্রি শুরু হবে। সারা দেশের দুই হাজার ৩৬৩টি কেন্দ্রের ওএমএস ডিলারদের মাধ্যমে মাসে একবার এই চাল নেওয়া যাবে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবার বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টি অর্ধেকের কম হয়েছে। অপর দিকে, তাপমাত্রাও বেশি ছিল। গত ৩০ বছরের মধ্যে রেকর্ড উষ্ণ পরিস্থিতি। যদিও এখন কিছুটা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আমন মৌসুমে সাধারণত কৃষকরা বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে ফসলের আবাদ করে থাকেন। কিন্তু এবার বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকরা পাম্প বসিয়ে সেচকাজ পরিচালনা করে ফসল আবাদ করছেন। কৃষকরা সাধারণত বোরো চাষে সেচ দিয়ে থাকেন। এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমন চাষেও সেচ দিতে হচ্ছে। এতে করে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (ফিল্ড সার্ভিস) হাবিবুর রহমান অবশ্য মনে করেন, আমন আবাদে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। তিনি সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘কারণ কৃষকরা সেচ দিয়ে আবাদ শুরু করেছেন। এবার ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমন ফসল রোপণ করবেন কৃষকরা।’