কলকাতায় দুর্ঘটনার পর সাহায্য করল না কেউ, দুই কিশোরের মৃত্যু

দুর্ঘটনার পর রাস্তায় পড়ে রয়েছে গুরুতর জখম তিন কিশোর। তাদেরই এক জনের বোন ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাহায্যের আশায় থামানোর চেষ্টা করছেন কোনো একটি গাড়িকে। কিন্তু কেউ থামেনি।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত কেউ এগিয়েও আসেনি।

উল্টো, তাকে এগিয়ে যেতে দেখে বাধা দিয়ে বলা হয়, ‘আগে পুলিশ আসুক। ‘ এমনই অভিযোগ করেছেন ওই তরুণী।

গত বুধবার রাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হরিদেবপুর থানার জুলপিয়া রোডের মল্লিকপুরে গাছের সঙ্গে ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে দুই স্কুটি আরোহীর। জখম হয়েছে এক জন।  

মৃতদের নাম জিৎ সরদার (১৬) ও আকাশ প্রামাণিক (১৭)। জখম তরুণের নাম মঙ্গল রায় (১৬)। জিৎ, আকাশ ও মঙ্গল বন্ধু ছিল। বৃহস্পতিবার বাঁশদ্রোণীর নিউ শিবতলা ফোর্থ লেনের ভাড়াবাড়িতে বসে কাঁদতে কাঁদতে মঙ্গলের বোন জ্যোতি রায় বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমি ও আমার স্বামী স্কুটি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। বার বার হাত দেখালেও কোনো গাড়ি থামেনি। উপস্থিত লোকজনও এগিয়ে আসেননি। বরং আমরা এগিয়ে গেলে বলা হয়- আগে পুলিশ আসুক। না হলে গাড়ি নিয়ে এসে তিন জনকে নিয়ে যান।

জ্যোতির দাবি, এর পরে আমরা ফিরে এসে একটি ক্যাব নিয়ে আবার ঘটনাস্থলে যাই। তত ক্ষণে হরিদেবপুর থানার পুলিশও সেখানে চলে এসেছে। তাদের বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ ঘটনা প্রসঙ্গে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেছেন, এটা কলকাতার চরিত্র নয়। এমন ঘটনা ঘটলে মানুষ সাহায্যে এগিয়ে আসেন। এটিকে আমি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখছি। এর জন্য পুরো শহরটাকে হৃদয়হীন বলতে পারব না। অনেক সময়ে পুলিশি ঝামেলা এড়াতেও অনেকে সাহায্যে এগিয়ে আসেন না। তবে নাবালক কেন স্কুটি চালাবে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। তার কথায়, এটা ঠিক কাজ হয়নি।

মনোরোগ চিকিৎসক সুজিত সরখেল বলেন, মানুষ যত বেশি শহরকেন্দ্রিক হচ্ছে এবং পশ্চিমা সভ্যতা ও স্মার্টফোনের ভার্চুয়াল জগতে ঢুকে পড়ছে, ততই আরো বেশি করে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। এটা তারই লক্ষণ।

পুলিশ বলছে, তিন বন্ধু বুধবার রাত স্থানীয় সময় সোয়া ১১টা নাগাদ স্কুটিতে নেপালগঞ্জের ওএনজিসি মোড় থেকে ফিরছিল। স্কুটি চালাচ্ছিল জিৎ। বেপরোয়া গতিতে আসা স্কুটিটি মল্লিকপুরে রাস্তার ধারের গাছে ধাক্কা মারে। কারো মাথাতেই হেলমেট ছিল না। জখম তিন জনকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে জিৎকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সঙ্কটজনক আকাশকে সেখান থেকে নেওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে তাকেও মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। মঙ্গলকে চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

জিতের বাড়ি রিজেন্ট পার্কের পূর্ব পুটিয়ারিতে। বাবা সুজিত সরদার অটোচালক। ঘটনার দিন বাড়িতে কেউ ছিল না। আকাশের বাড়ি বাঁশদ্রোণী থানার পিরপুকুর রোডে। তাদেরও বাড়িতে কেউ ছিল না।  

বাড়িওয়ালি শিখা সাহা বলেন, পরিচারিকার কাজ করে তিন ছেলেকে খুব কষ্ট করে মানুষ করেছিলেন আকাশের মা বীণা। আকাশ মেজো ছেলে। কাপড়ের দোকানে কাজ করত।

জ্যোতি জানিয়েছেন, মঙ্গলের ডান হাতে ও গলায় আঘাত লেগেছে। তার বাবা নিখিল রায় কালীঘাটে মিষ্টির দোকানে কাজ করেন। ওই তরুণী জানান, বুধবার রাত ১০টা নাগাদ মঙ্গলের আরেক বন্ধুর স্কুটি নিয়ে মঙ্গল, জিৎ ও আকাশ বেরিয়েছিল।  

তিনি বলেন, যাওয়ার সময়ে আকাশ স্কুটি চালাচ্ছিল। ওরা জিতের এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিল। সাড়ে ১১টা নাগাদ আমি ভাইকে ফোন করলে ঘটনার কথা জানতে পারি।
সূত্র: আনন্দবাজার।

LEAVE A REPLY