রপ্তানি বাজার ঠিক রাখতে ১২ সুপারিশ

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হওয়ার পর বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে রপ্তানির ক্ষেত্রে ডিউটি ও কোটা ফ্রি সুবিধা হারাবে। কমতে পারে রপ্তানি বাজারও। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ), বিকল্প পথে রপ্তানি বাড়ানোসহ ১২টি সুপারিশ করেছে ‘অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ ও ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ’ বিষয়ক সাব-কমিটি। অন্য সুপারিশগুলোর মধ্যে উলে­খযোগ্য হচ্ছে কর অব্যাহতির অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্র শনাক্তকরণ, রাজস্ব প্রশাসনে অটোমেশন ও ডিজিটাইজেশন সম্প্রসারণ এবং আমদানি পর্যায়ে প্যারা ট্যারিফ সম্পূরক শুল্ক পর্যায়ক্রমে হ্রাস করা।

শনিবার উলি­খিত সাব-কমিটির উদ্যোগে একটি জাতীয় কর্মশালায় এসব সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থসচিব (সিনিয়র) ফাতিমা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে ওই কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস। খবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

প্রসঙ্গত, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় এর আগে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউসকে প্রধান করে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে সহায়তার লক্ষ্যে আরও ৭টি বিষয়ভিত্তিক সাব-কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ ও ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ’ বিষয়ক সাব-কমিটি।

জাতীয় কর্মশালায় মূল সুপারিশমালা উপস্থাপন করে এ সাব-কমিটির অধীনে গঠিত তিনটি স্টাডি গ্র“প। করসংক্রান্ত বিধিবিধান ও পদ্ধতি সংস্কার বিষয়ে সুপারিশমালা উপস্থাপনা করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর নীতি) ড. সামস উদ্দিন আহমেদ, ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ বিষয়ে উপস্থাপনা করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (শুল্ক নীতি) মো. মাসুদ সাদিক এবং রপ্তানি প্রণোদনা বিষয়ে উপস্থাপনা করেন অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আরফিন আরা বেগম।

সেখানে বলা হয়, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হওয়ার পর বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে রপ্তানির ক্ষেত্রে ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি সুবিধা হারাবে। ফলে রপ্তানি বাড়াতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (এফটিএ) অথবা প্রিফারেন্সিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (পিটিএ) সম্পাদন করতে হবে। এ ধরনের বাণিজ্য চুক্তির ফলে রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ফলে বিকল্প উপায়ে রপ্তানিকে উৎসাহিত করার পন্থা উদ্ভাবন করা প্রয়োজন।

‘করসংক্রান্ত বিধিবিধান এবং পদ্ধতি সংস্কার’ বিষয়ক স্টাডি গ্র“প তাদের সুপারিশে বলেছে, কর অব্যাহতির অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে হবে। এছাড়া রাজস্ব আহরণ সংশ্লিষ্ট আইনের (নতুন কাস্টমস ও আয়কর আইন) ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উত্তমচর্চার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করতে হবে। এছাড়াও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন চুক্তি অনুসারে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সহজ এবং পণ্য খালাস দ্রুত করতে আধুনিকায়নের সুপারিশ করা হয়।

কর্মশালায় ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণবিষয়ক স্টাডি গ্র“পের সুপারিশে বলা হয়, যেসব পণ্যের বাউন্ড ডিউটির হার সীমা অতিক্রম করেছে, সেগুলো সীমার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।

সেখানে আরও বলা হয়, স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে বর্তমানে নগদ সহায়তা দিতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। কিন্তু উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে শিল্পপণ্যের রপ্তানির ক্ষেত্রে তা আর দেওয়া হবে না। এছাড়া বর্তমানে রপ্তানি প্রণোদনা ও নগদ সহায়তাপ্রাপ্ত খাতগুলোকে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের যে শর্ত রয়েছে, তা বাদ দিতে হবে।

মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় মুক্ত আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর-পর্বে বিভিন্ন চেম্বারের সদস্য এবং বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। প্যানেল আলোচক হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বক্তব্য দেন। অংশীজনদের পক্ষে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বক্তব্য দেন। এছাড়া বিআইডিএস-এর মহাপরিচালক ড. বিনায়েক সেন ও পিআরআই-এর চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার বক্তব্য দেন।

LEAVE A REPLY