তাদের পায়ে কেবল দুটি করে আঙুল

দক্ষিণ আফ্রিকার জনজাতি অধ্যুষিত জিম্বাবুয়ের জাম্বেসি নদী উপত্যকার একটি ছোট নদীর তীরে ভাদোমা উপজাতির মানুষেরা বসবাস করে। জিম্বাবুয়ের কানইয়েমবা অঞ্চলের এই উপজাতি গোষ্ঠী মূলত শিকার এবং ফলমূল সংগ্রহের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে।

জিনগত কারণে এই উপজাতি গোষ্ঠীতে জন্ম নেওয়া প্রতি চার জন শিশুর এক জনের পায়ের আঙুল দু’টি করে হয়। এদের পায়ে বৃদ্ধাঙুল এবং কনিষ্ঠা বাদে মাঝের তিনটি আঙুল অনুপস্থিত।

ভাদোমা উপজাতির মানুষদের যে দু’টি আঙুল আছে, সেগুলোও ভিতর দিকে ঢোকানো। পায়ের আকৃতি অনেকটা উটপাখি বা অস্ট্রিচের মতো। তাই অনেকেই তাদের ‘অস্ট্রিচ পদবিশিষ্ট’ উপজাতি বলে থাকেন।

শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও ভাদোমা উপজাতির মানুষরা নিজেদের প্রতিবন্ধী বলে মনে করেন না। তারা মনে করে, পায়ের আঙুলের এই ধরনের গঠন হওয়ার ফলে তারা দ্রুত এবং মসৃণ উপায়ে গাছে উঠতে পারেন।

ভাদোমা উপজাতির প্রতিটি মানুষ ‘লবস্টার ক্ল সিনড্রোম’ নামক এক জিনগত রোগে আক্রান্ত। এই রোগে আক্রান্ত মানুষদের জন্মসূত্রেই পায়ে এক বা একাধিক আঙুল অনুপস্থিত থাকে।

এই উপজাতির মানুষরা স্থানীয় ডেমা ভাষায় কথা বলেন। তাই অনেকে তাদের ডেমা জনজাতিও বলে থাকেন। এই উপজাতির মানুষরা বিশ্বাস করে, বানরলাঠি বলে পরিচিত আফ্রিকার এক ধরনের বৃহৎ গাছ থেকে তাদের উৎপত্তি হয়েছে।

ভাদোমা উপজাতির মানুষদের এ-ও বিশ্বাস যে, তাদের পূর্বপুুরুষরা শিকার এবং ফলমূল সংগ্রহের জন্যই গাছ থেকে মাটিতে নেমে এসেছিল। বর্তমানে আফ্রিকার এক মাত্র এই উপজাতির মানুষরাই চাষবাসের সঙ্গে যুক্ত নয়।

লোকমুখে প্রচলিত আছে, আফ্রিকার মুটাপা অঞ্চলের কোরেকোরে সোনা রাজত্বকে ইউরোপীয় উপনিবেশে পরিণত হওয়া থেকে আটকেছিল ভাদোমা উপজাতির মানুষরা। তার ফলে ওই অঞ্চলের উর্বর জমিগুলো তাদের হাতে এলেও চাষের কাজে এই উপজাতির মানুষরা কোনো দিনই দক্ষ হতে পারেনি।

এই উপজাতির মানুষদের নিজের জনজাতি গোষ্ঠীর বাইরে বিয়ে করা নিষিদ্ধ। ফলে পায়ের আঙুলের এই বিরল গঠনগত বৈশিষ্ট অন্য কোনো গোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েনি।

পর্বতসঙ্কুল চেওয়ারে অঞ্চলে যাযাবর জীবনযাপন করে ভাদোমা উপজাতির মানুষ। কিন্তু ওই অঞ্চলে পশুশিকারের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পশুশিকারিদের পক্ষ থেকে নানা নিগ্রহের শিকার হচ্ছে এই উপজাতির মানুষরা।
সূত্র: প্ল্যাফর্মস আফ্রিকা

LEAVE A REPLY