চলতি সপ্তাহেই বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়তে পারে

চলতি সপ্তাহেই বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিতে পারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বিইআরসি সূত্র বলছে, বিদ্যুতের দাম ভোক্তা পর্যায়ে সহনীয় রাখতে সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। পাইকারি বিদ্যুতের দাম ঠিক কত শতাংশ বাড়তে পারে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সরকারের এ ভর্তুকি বিবেচনায় স্বল্প পরিসরেই বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম।

এদিকে গত ১৮ মে বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) মূল্যহার বৃদ্ধি নিয়ে বিইআরসির গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। যদিও আইন অনুযায়ী গণশুনানির ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে মূল্যসংক্রান্ত বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসাবে চলতি মাসের মাঝামাঝিতেই শেষ হচ্ছে বিইআরসির নির্ধারিত সময়।

জানতে চাইলে বিইআরসির সদস্য (বিদ্যুৎ) মোহাম্মদ বজলুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিদ্যুতের মূল্যহার নির্ধারণের সঙ্গে ভর্তুকির বিষয়টি জড়িত। সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুতের ভর্তুকি ১৭ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাই পাইকারি বিদ্যুতের নতুন দামের ঘোষণাটি চলতি সপ্তাহে অথবা আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ঘোষণা দেওয়া হবে। সরকার ভর্তুকি দেওয়ায় বিদ্যুতের দাম বেশি বাড়ার সম্ভাবনা নেই, স্বল্প পরিসরে বাড়তে পারে। ’

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সূত্র জানায়, বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর জন্য এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিইআরসিতে প্রস্তাব দিয়েছিল বিপিডিবি। প্রস্তাবের ওপর কমিশনের গণশুনানি হয় ১৮ মে। সে সময় বিপিডিবি বিদ্যুতের দাম ৬৯ শতাংশ বাড়িয়ে ইউনিটপ্রতি আট টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব করে। এ ছাড়া গ্যাসের দাম ১০০ শতাংশ বাড়লে  ইউনিটপ্রতি ৯ টাকা ১৪ পয়সা এবং ১২৫ শতাংশ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ৯ টাকা ২৭ পয়সা প্রস্তাব করে। বর্তমানে বিপিডিবির সরবরাহকৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের পাইকারি দাম গড়ে পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা। গণশুনানিতে বিইআরসির কারিগরি কমিটি ভর্তুকি ছাড়া বিদ্যুতের মূল্য ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করে। গণশুনানিতে দাম বাড়ার বিষয়ে বিপিডিবির পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনে তাদের ইউনিটপ্রতি খরচ হচ্ছে ৯ টাকারও বেশি। এতে ২০২১-২২ অর্থবছরে বিপিডিবির লোকসান হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিপিডিবি বিদ্যুতের বর্তমান দর ইউনিটপ্রতি পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে আট টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব দেয়।

এদিকে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি পর থেকেই খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানিগুলো। দেশে বিদ্যুতের একক পাইকারি বিক্রেতা বিপিডিবি। বিপিডিবির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহক বা খুচরা পর্যায়ে বিতরণ করছে দেশের পাঁচটি কম্পানি। এগুলো হলো ডেসকো, ডিপিডিসি, আরইবি, নেসকো ও ওজোপাডিকো। বিপিডিবিও দেশের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।

রাজধানীতে বিদ্যুৎ বিতরণকারী এক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাম প্রকাশ না শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিদ্যুতের পাইকারি দামের সঙ্গে খুচরা পর্যায়ে দামের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাই আমরা খুচরা পর্যায়ের দাম প্রস্তাব করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। পাইকারিতে যে হারে দাম বাড়ানো হবে, আমরা সেভাবে আমাদের প্রস্তাব বিইআরসিকে দেব। ’

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশে গত ১২ বছরে ৯ বার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এ সময়ে পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চলতি বছরের ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং গত জুন মাসে গ্যাসের দাম গড়ে ২৩ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। ’

LEAVE A REPLY